মঙ্গলে ভূমিকম্পের মাত্রা পরিমাপে নাসার অভিযান

নাসা মঙ্গলের ভূমিকম্পের মাত্রা পরিমাপ করতে ইনসাইট নামের একটি নভোযান পাঠিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার ভ্যান্ডারবার্গ বিমানঘাঁটি থেকে শনিবার স্থানীয় সময় ভোররাত ৪টা ৫ মিনিটে নভোযান উৎক্ষেপণ করা হয়। ছবি: এএফপি
নাসা মঙ্গলের ভূমিকম্পের মাত্রা পরিমাপ করতে ইনসাইট নামের একটি নভোযান পাঠিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার ভ্যান্ডারবার্গ বিমানঘাঁটি থেকে শনিবার স্থানীয় সময় ভোররাত ৪টা ৫ মিনিটে নভোযান উৎক্ষেপণ করা হয়। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা মঙ্গলের ভূমিকম্পের (ভূকম্পন) মাত্রা পরিমাপ করতে একটি নভোযান উৎক্ষেপণ করেছে। ভূমিকম্পের তথ্য থেকে গ্রহটির অভ্যন্তরের কাঠামো সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে বলে মনে করছে নাসা। দেশটির ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের ভ্যান্ডারবার্গ বিমানঘাঁটি থেকে শনিবার স্থানীয় সময় ভোররাত ৪টা ৫ মিনিটে ইনসাইট নামের একটি নভোযান উৎক্ষেপণ করে সংস্থাটি।

বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, এ বছরের নভেম্বরে সৌরজগতের লাল গ্রহ মঙ্গলের বুকে অবতরণ করার কথা রয়েছে ইনসাইটের। এরপর এটি ভূপৃষ্ঠে ভূকম্পন পরিমাপক যন্ত্র সিসমোমিটার স্থাপন করবে। একই সঙ্গে যুক্তরাজ্যের তৈরি সেন্সরও স্থাপন করবে নভোযানটি। ভূমিকম্প মাপার যন্ত্রই মহাকাশবিজ্ঞানীদের মঙ্গলের ভূমিকম্প ‘মার্সকোয়াক’ সম্বন্ধে তথ্য দেবে। পৃথিবীর সঙ্গে তুলনার পর মঙ্গলের অভ্যন্তরীণ কাঠামোতে থাকা পাথরের স্তরসংক্রান্ত তথ্যও মিলবে।

নাসা বলেছে, ভূকম্পনের মাত্রা পরিমাপের মাধ্যমে গবেষকেরা মঙ্গলের ভূগর্ভে পাথরের সজ্জা নির্ণয়ের চেষ্টা করবেন। এরপর প্রাপ্ত তথ্য পৃথিবীর একই ধরনের তথ্যের সঙ্গে তুলনা করা হবে। ৪৬০ কোটি বছর আগে পৃথিবীর জন্ম কীভাবে হয়েছিল, তা জানারও চেষ্টা করা হবে।

এর আগে মঙ্গলে অভিযান চালিয়েছিল নাসা। ছবি: বিবিসির সৌজন্য
এর আগে মঙ্গলে অভিযান চালিয়েছিল নাসা। ছবি: বিবিসির সৌজন্য

ইনসাইট মিশনের প্রধান ব্রুস বেনার্ডট বলেন, ‘যখন সিসমিক তরঙ্গ মঙ্গলের চারপাশে প্রবাহিত হবে, তখন (যন্ত্রটি) বিভিন্ন স্তরের পাথরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তরঙ্গগুলোর তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে। সিসমোগ্রাফে এ-সংক্রান্ত তথ্য পাওয়ার পরই বিজ্ঞানীরা সেখানকার পাথরের গঠন সম্পর্কে জানতে পারবেন। বিভিন্ন মার্সকোয়াক থেকে যখন আমরা নানা তথ্য পাব, সব মিলিয়ে আমরা মঙ্গলের অভ্যন্তরের ত্রিমাত্রিক চিত্রটি নির্মাণ করবে পারব।’

এর আগে সত্তরের দশকে ভাইকিং ল্যান্ডারে করে মঙ্গলে সিসমোটিমার পাঠিয়েছিল নাসা। কিন্তু ওই সময় ব্যর্থ হয় অভিযান। কারণ তরঙ্গ পরিমাপক যন্ত্রাংশগুলো বসানো হয়েছিল নভোযানের শরীরে। ফলে ভূপৃষ্ঠের কম্পন সঠিকভাবে পরিমাপ করতে পারেনি সেগুলো। যে কম্পনগুলো শনাক্ত হয়েছিল তখন, তার বেশির ভাগই ছিল নভোযানটির কম্পন।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মঙ্গলের বুকে সিসমোমিটারগুলো যত দিন সক্রিয় থাকবে, তত দিনে কতগুলো ভূকম্পন পরিমাপ করা যাবে? বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, এক বছরে তাঁরা কয়েক ডজন কম্পন শনাক্ত করতে পারবেন। তবে সেগুলোর অধিকাংশের মান রিখটার স্কেলে ৩-এর বেশি হবে না বলেই মনে করছেন তাঁরা।

ইনসাইট মঙ্গলে যে সিসমোমিটারগুলো নিয়ে যাচ্ছে, সেগুলো তৈরি করেছে ফ্রান্স। এগুলোয় রয়েছে ব্রডব্যান্ড সেনসর, যা নিম্ন কম্পাঙ্কের তরঙ্গ শনাক্ত করবে। আর যুক্তরাজ্য যে তিনটি মাইক্রোসিসমোমিটার সরবরাহ করেছে, সেগুলো উচ্চ কম্পাঙ্কের তরঙ্গ শনাক্ত করতে কাজ করবে।