যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ চুক্তি রক্ষা না করলে পারমাণবিক কর্মসূচি শুরু করবে ইরান

ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি তাঁর কথায় পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে একটি অস্পষ্ট হুমকি দিয়েছেন। ছবি: এএফপি
ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি তাঁর কথায় পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে একটি অস্পষ্ট হুমকি দিয়েছেন। ছবি: এএফপি

ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। জবাবে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বিশ্বকে আশ্বস্ত করলেন, ট্রাম্প চুক্তিতে না থাকলেও অন্যদের সঙ্গে চুক্তি বজায় রয়েছে। তবে তিনি অভিযোগ করেছেন, চুক্তি বাতিলের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের মানুষের সঙ্গে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ তৈরির চেষ্টা করছেন। হাসান রুহানি তাঁর কথায় একটি অস্পষ্ট হুমকির বিষয়ও ফুটিয়ে তুলেছেন।

হাসান রুহানি বলেছেন, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জাফরি চীন, রাশিয়া ও ইউরোপের সঙ্গে চুক্তি রক্ষার চেষ্টায় বিফল হলে তেহরান সরকার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি জোরদার করবে।

বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, ইতিমধ্যে প্রেসিডেন্ট রুহানি ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থাকে তেজস্ক্রিয় পদার্থ ইউরেনিয়ামের মজুত বাড়ানোর জন্য তৈরি থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে এখনই উৎপাদনে না গিয়ে দু-এক সপ্তাহ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন বলে রুহানি জানান। এ পরিপ্রেক্ষিতে এখন একটি প্রশ্ন উঠছে—ইরান যদি দ্রুত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে শুরু করে, তবে পরমাণু বোমা তৈরির পর্যাপ্ত জ্বালানি পেতে কত সময় লাগবে?

এ প্রশ্নের উত্তর হতে পারে, মাত্র এক বছর বা তার চেয়ে বেশি সময় লাগবে।

নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্য কোনো পারমাণবিক শক্তিধর দেশের কাছ থেকে যদি না কিনে নিজে উৎপাদনে যায়, তবে এক বছরের মধ্যেই পরমাণু অস্ত্রে শক্তিধর দেশে পরিণত হতে পারে ইরান। ওই পথে হাঁটতে গিয়ে ইরান যদি আরও দ্রুত কাজ করে এবং দেশটির ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে ব্যবহৃত হাজারো পারমাণবিক চুল্লি কাজে লাগায়, তবে মাত্র তিন মাসে বোমা তৈরি করে ফেলতে পারে। ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ইরানের সঙ্গে যে চুক্তি করেন, তখনো তিন মাসে বোমা তৈরির পর্যায়ে ছিল ইরান।

ওয়াশিংটনের পারমাণবিক অস্ত্র নজরদারির প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর সায়েন্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটির প্রেসিডেন্ট ডেভিড অলব্রাইট বলেন, বর্তমানে পারমাণবিক অস্ত্র সমৃদ্ধকরণ কাঠামো তৈরি ও পর্যাপ্ত ইউরেনিয়াম জ্বালানি সংগ্রহ করে বোমা বানাতে ৮ থেকে ১০ মাসের মতো সময় লাগবে ইরানের। যেকোনো হিসাবেই এক বছরের কম সময় লাগবে বলেই মনে করেন তিনি। তবে, এটা প্রাথমিক ধাপ। কারণ, ওই জ্বালানিকে অস্ত্রে রূপান্তর করার আলাদা ধাপ রয়েছে।

গত সপ্তাহে ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু অভিযোগ করেন, কয়েক বছর ধরেই পরমাণু অস্ত্র তৈরির পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করছে ইরান। ইরান থেকে গোপনে সরানো কিছু তথ্যের বরাতে তিনি এ অভিযোগ করেন। ওই তথ্য অনুযায়ী, ইরান ওয়্যারহেড তৈরির তাত্ত্বিক নকশায় অনেক উন্নতি করেছে। তবে ইরান ওই বোমা তৈরির বা ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির সক্ষমতা অর্জন করেছে কি না, তা পরিষ্কার নয়।

পরমাণু বিশেষজ্ঞ অলব্রাইট বলেন, তেহরান অবশ্যই ধৈর্য দেখাবে বলে মনে করেন তিনি। এ ছাড়া তাদের পরমাণু অস্ত্র তৈরির অবকাঠামোগুলো নিয়মনীতির মধ্যে রাখবে।

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে তা মজুত করতে কিছুটা সময় লাগবে ইরানের। ২০১৫ সালে চুক্তির সময় ইরানের কাছে ২২ হাজার পাউন্ড ইউরেনিয়াম ছিল, যা নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টরে ব্যবহৃত ইউরেনিয়ামের চেয়ে কম শক্তিসম্পন্ন ছিল। তবে চুক্তির ফলে এ ইউরেনিয়ামের অধিকাংশই দেশে রাখতে পারেনি ইরান। সর্বশেষ পর্যবেক্ষণের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে মাত্র ২৫০ পাউন্ড ইউরেনিয়াম মজুত ছিল। এ পরিমাণ জ্বালানি ব্যবহার একটি পারমাণবিক বোমা তৈরি করা সম্ভব নয়। এ কারণেই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে ইরানের এত সময় লাগবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশাল পারমাণবিক সেন্ট্রিফিউজ চালানোর জন্য যথেষ্ট ইউরেনিয়াম এখন ইরানের হাতে নেই। তাই বিশাল পরিমাণ ইউরেনিয়াম মজুত করা এখন কঠিন। অবশ্য ইরানের পক্ষ থেকে পুরোনো পদ্ধতির সেন্ট্রিফিউজ ব্যবহার করে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার বিষয়ে আগ্রহের কথা বলা হয়নি। তারা আরও উন্নত ও শক্তিশালী সেন্ট্রিফিউজ মডেল নিয়ে কাজ করার কথা আগেই বলেছিল। তবে, চুক্তির কথা মেনে ওই পদ্ধতি তারা পরীক্ষা করেনি।

এখন তেহরান ঘোষণা দিতে বলতে পারে, যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু চুক্তি বাতিল করেছে, তাই কোনো নিষেধাজ্ঞা তাদের সামনে নেই। তখন পরমাণু অস্ত্র তৈরির কাজ দ্রুত এগিয়ে নিতে পারে তারা।