বিজেপির নেতা-মন্ত্রীদের 'রবীন্দ্রজ্ঞান' হাসির খোরাক জোগাচ্ছে

বিজেপি নেতা ও মন্ত্রীদের ‘রবীন্দ্রজ্ঞান’ হাসির খোরাক জোগাচ্ছে ভারতীয় রবীন্দ্রপ্রেমীদের।

সামাজিক গণমাধ্যমে বিদ্রূপের ঝড় উঠলেও খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব—কেউই নিজেদের ‘রবীন্দ্রজ্ঞান’ জাহির করতে কার্পণ্য করছেন না।

শুরুটা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজেই। রবীন্দ্রসংগীতের প্রতি ভালোবাসার প্রমাণ দিতে মোদি বলেছিলেন, তিনি রোজ ভোরে আকাশবাণীতে রবীন্দ্রসংগীত শুনতেন। কিন্তু তিনি যে সময়টার কথা বলেছিলেন, সেই সময়ে আকাশবাণীতে (ভারতের সরকারি রেডিও) এমন কোনো অনুষ্ঠানই হতো না।

মোদির মন্ত্রিসভার সদস্য হর্ষবর্ধন বুধবার কলকাতায় রবীন্দ্র নাথকে ‘স্যার’ বলে সম্বোধন করেন। অথচ, ৯৯ বছর আগে জালিয়ান ওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ ‘নাইট’ উপাধি ত্যাগ করেন। ইংরেজদের ‘স্যার’ সম্বোধন প্রত্যাখ্যানের পরেও হর্ষবর্ধনের ‘স্যার রবীন্দ্রনাথ টেগোর’ নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

এসবের মধ্যে রবীন্দ্র স্মৃতিবিজড়িত ত্রিপুরায় কবিগুরুর মর্মর মূর্তি বেদিতে অত্যুৎসাহী বিজেপি সমর্থকেরা ওড়ালেন গেরুয়া পতাকা। পরে অবশ্য হিন্দুত্ববাদীরা সেই পতাকা নিজেরাই খুলে নেন।

তবে সব বিতর্ককে ছাপিয়ে গেছে বিপ্লবের ‘বৈপ্লবিক’ ভাষণ। তিনি এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে যে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল, তা তিনি তৎকালীন ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ স্বরূপ বর্জন করেন।

বিপ্লব আরও বলেন, ‘“গীতাঞ্জলি” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কারে সম্বোধিত করেছে। রবীন্দ্রনাথ গীতাঞ্জলি পুরস্কার পেয়েছিলেন।’

ত্রিপুরায় কবিগুরুর মর্মর মূর্তি বেদিতে অত্যুৎসাহী বিজেপি সমর্থকেরা উড়িয়েছেন গেরুয়া পতাকা। বুধবার আগরতলায়। ছবি: সংগৃহীত
ত্রিপুরায় কবিগুরুর মর্মর মূর্তি বেদিতে অত্যুৎসাহী বিজেপি সমর্থকেরা উড়িয়েছেন গেরুয়া পতাকা। বুধবার আগরতলায়। ছবি: সংগৃহীত

বিপ্লবের এ বক্তব্য শুনে ত্রিপুরা বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা হাসাহাসি করছেন। তাঁরা নিজেরা নিজেরা বলছেন, রবীন্দ্রনাথ কবে নোবেল পুরস্কার বর্জন করলেন? আর গীতাঞ্জলি পুরস্কার রবীন্দ্রনাথকে? তবে তাঁরা প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাইছেন না। দলের রাজ্য সভাপতি ও মুখ্যমন্ত্রীর এ বক্তব্যে তাঁরা যে লজ্জিত, সেটা ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় অনেকেই নাম প্রকাশ না করে বুঝিয়ে দিচ্ছেন।

প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে ত্রিপুরা কংগ্রেসের সভাপতি বীরজিত সিনহা বলেন, ‘বিপ্লব কুমার দেব তো জ্ঞানপাপী। উনি বোধ হয় রবীন্দ্রনাথের পিএ ছিলেন! তাই উনি একাই বোধ হয় জানেন, রবীন্দ্রনাথ নোবেল প্রাইজ বর্জন করেছিলেন। আর কেউ জানে না।’

বিপ্লব নিজেই একাধিক অনুষ্ঠানে সগর্বে ঘোষণা করেছিলেন যে আগে তাঁর পেশা ছিল পিএ (ব্যক্তিগত সহকারী)।

আরও একধাপ এগিয়ে সিপিএমের পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা সম্পাদক পবিত্র কর প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই যাঁর (বিপ্লব) জ্ঞানের বহর, তাঁর হাতে রাজ্য কীভাবে চলছে, মানুষই বিচার করবে। আমাদের তো আর বাইরে ত্রিপুরার লোক বলে পরিচয় দেওয়া যাচ্ছে না। রাজ্যের লজ্জা!’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সমালোচনার ঝড় বইছে। ইতিমধ্যে বিপ্লবের বক্তব্য ভাইরাল হয়েছে। তুফান ছুটছে বিভিন্ন আড্ডায়।