একের রক্তে রক্ষা ২৪ লাখ জীবন

জেমস হ্যারিসন
জেমস হ্যারিসন

মাত্র ১৪ বছর বয়সেই অস্ত্রোপচারের টেবিলে যেতে হয়েছিল জেমস হ্যারিসনকে। অপর একজনের রক্তে জীবন বেঁচেছিল তাঁর। সেই থেকে শুরু। নিজেও রক্তদাতায় পরিণত হয়েছিলেন। বিগত ৬০ বছরে প্রায় প্রতি সপ্তাহে রক্ত দিয়েছেন তিনি। সে রক্তে বেঁচেছে ২৪ লাখের বেশি শিশুর জীবন।

অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক হ্যারিসন নিজের দেশে ‘সোনালি বাহুর মানব’ বলে পরিচিত। বয়স বাধা হয়ে দাঁড়ানোয় গত শুক্রবার শেষবারের মতো রক্ত দিয়েছেন ৮১ বছর বয়সী হ্যারিসন। তিনি মূলত প্লাজমা দান করতেন। এ জন্য তিনি অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ‘মেডেল অব দ্য অর্ডার অব অস্ট্রেলিয়া’সহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

চিকিৎসকেরা বলেছেন, কখনো কখনো গর্ভবতী নারীর রক্তই তাঁর গর্ভের সন্তানের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ওই নারীর রক্ত রেসাস নেগেটিভ, আর গর্ভের শিশুর রক্ত রেসাস পজিটিভ হলে এ ধরনের সমস্যা হয়। এ ক্ষেত্রে মায়ের দেহে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি শিশুর ভিন্ন প্রকৃতির রক্তকণাকে আক্রমণ করে।

হ্যারিসনের রক্তে রেসাস রোগপ্রতিরোধী অ্যান্টিবডি রয়েছে বলে জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়ান রেডক্রস ব্লাড সার্ভিস। তিনি নিয়মিত রক্ত দান শুরুর কয়েক বছর পর চিকিৎসকেরা বিষয়টা আবিষ্কার করেন। এরপর গবেষকেরা এই অ্যান্টিবডি থেকে উদ্ভাবন করেন অ্যান্টি-ডি ইনজেকশন। এই ইনজেকশন রেসাস নেগেটিভ রক্তের গর্ভবতী নারীকে দেওয়া হলে তাঁর দেহে আর সন্তানের প্রাণসংহারী অ্যান্টিবডি তৈরি হতে পারে না। বিষয়টা জানার পর হ্যারিসন নিয়মিত প্লাজমা দান শুরু করেন।

অস্ট্রেলিয়ান রেডক্রস ব্লাড সার্ভিসের জেমা ফাকেনমায়ারের মতে, দান করা প্রতিটি রক্তের ব্যাগই মূল্যবান। হ্যারিসনের রক্ত আরও বেশি মূল্যবান। তাঁর রক্ত থেকে জীবন বাঁচানো ওষুধ উদ্ভাবন সম্ভব হয়েছে। তিনি জানান, ১৯৬৭ সাল থেকে ৩০ লাখের বেশি গর্ভবতী নারীকে অ্যান্টি-ডি ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় ৮১ বছরের বেশি বয়সে রক্ত দেওয়া নিষেধ বলে থেমে যেতে হয়েছে হ্যারিসনকে। পুরো অস্ট্রেলিয়ায় এমন রক্ত ৫০ জনের কম মানুষের দেহে প্রবাহিত।

হ্যারিসন জানান, তাঁর মেয়েকেও একই ইনজেকশন দিতে হয়েছে। ফলে তাঁর দ্বিতীয় নাতি বেশ সুস্থ অবস্থায়ই পৃথিবীর আলো দেখেছে।