বিজেপির পাকা ধানে মই দিল কংগ্রেস!

ভারতের কর্ণাটকে উৎসব করছেন বিজেপির সমর্থকেরা। তবে বিজেপির সরকার গঠনে বাধা সৃষ্টি করেছে কংগ্রেস। এই চমকের জন্য বিজেপি প্রস্তুত ছিল না। ছবি: এএফপি
ভারতের কর্ণাটকে উৎসব করছেন বিজেপির সমর্থকেরা। তবে বিজেপির সরকার গঠনে বাধা সৃষ্টি করেছে কংগ্রেস। এই চমকের জন্য বিজেপি প্রস্তুত ছিল না। ছবি: এএফপি

ভারতের কর্ণাটক রাজ্যে কারা সরকার গড়বে, শেষ বেলায় সেই সাসপেন্স বড় হয়ে উঠল। জনতা দল (ধর্মনিরপেক্ষ) নেতা এইচ ডি কুমারস্বামীকে চিঠি দিয়ে কংগ্রেস জানিয়ে দিল, তারা সরকার গড়ুক। কংগ্রেস সেই সরকারকে সমর্থন দেবে। এই চমকের জন্য অবশ্যই বিজেপি প্রস্তুত ছিল না।

কর্ণাটকের ভোটের ফল গণনা শুরু হয় মঙ্গলবার সকাল থেকে। প্রথম দিকে কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে কে এককগরিষ্ঠ দলের মর্যাদা পায়, সেই প্রতিযোগিতা ছিল। কিন্তু ক্রমেই কংগ্রেস পেছাতে থাকে। এগোতে থাকে বিজেপি। রাজ্যের তৃতীয় শক্তি সাবেক প্রধানমন্ত্রী এইচি ডি দেবগৌড়ার দল জেডি (এস)-এর আসনসংখ্যা ৩৯ থেকে ৪২-এর মধ্যে ঘোরাফেরা করতে থাকে। একটা সময় দেখা যায়, কংগ্রেস ও জেডি (এস)-এর সম্মিলিত আসন বিজেপির চেয়ে বেশি হয়ে সরকার গড়ার ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছে যায়। এই সময়েই কংগ্রেস ঠিক করে সরকার গড়তে তারা জেডি (এস)-কে সমর্থন দেবে। সমর্থনের সেই চিঠি জেডি (এস‍) নেতা সাবেক মুখ্যমন্ত্রী কুমারস্বামীর কাছে কংগ্রেস পাঠিয়েও দেয়। এখন দেখার রাজ্যপাল বাজুভাই বালা কী করেন।

রাজ্যপাল বাজুভাই বালার বয়স ৮০। তিনি গুজরাটের অর্থমন্ত্রী ছিলেন। ২০০১ সালে নিজের আসন রাজকোট-২ তিনি নরেন্দ্র মোদিকে ছেড়ে দেন। সেই প্রথমবার মোদির বিধানসভা সদস্য হওয়া। রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের (আরএসএস) কর্মী বাজুভাইয়ের কোর্টেই এখন বল। তিনি কী করবেন, সবার নজর এখন সেই দিকেই।

কর্ণাটক বিধানসভার মোট আসন ২২৪। দুটি আসনের ভোট স্থগিত আছে। ভোট হয় ২২২ আসনে। এর মধ্যে বিজেপি পেতে চলেছে (এখনো গণনা শেষ হয়নি) ১০৬ থেকে ১০৭ আসন। সরকার গড়ার জন্য প্রয়োজন ১১২ আসন। অর্থাৎ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার চেয়ে সাত-আটটি আসন কম। তুলনায় কংগ্রেস (৭৬-৭৭) ও জেডি (এস)-এর ৩৮-৩৯ আসনের যোগফল প্রয়োজনীয় ১১২ সংখ্যার চেয়ে বেশি। কাজেই জেডি (এস)-কে সরকার গড়ার সমর্থন দেওয়া কংগ্রেসের পক্ষে অবশ্যই সাংবিধানিক।

প্রশ্ন হলো রাজ্যপাল কী করবেন। কংগ্রেসের চিঠি পাওয়ার পর কুমারস্বামী সরকার গড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। সেই ইচ্ছার কথা তিনি রাজ্যপালকে জানিয়েও দিয়েছেন। সংবিধান অনুযায়ী রাজ্যপালকে দেখতে হয় সরকার গঠনের প্রয়োজনীয় সংখ্যা কাদের আছে। বিজেপির কম পড়ছে ছয়-সাতটি আসন। দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থন নিয়েও তাদের গরিষ্ঠতা আসছে না। তুলনায় কংগ্রেস-জেডি (এস) জোটবদ্ধ হলে তা সম্ভব। রাজ্যপাল বিজেপিকে সরকার গঠনের সুযোগ দিতেও পারেন, যেহেতু তারা এককগরিষ্ঠ দল। আস্থা ভোটের জন্য দিন সাতেক সময়ও বিজেপিকে দিতে পারেন রাজ্যপাল। ওই সময়ের মধ্যে সমর্থন আদায় করলে বিজেপির পক্ষে সরকার টিকিয়ে রাখা সম্ভব। না পারলে তখন কংগ্রেস-জেডি (এস)-এর কাছে সুযোগ আসবে।

কিন্তু কংগ্রেস ও জেডি (এস)-এর দাবি উপেক্ষা করা রাজ্যপালের পক্ষে কঠিন। বিজেপি নেতৃত্ব ‘অনৈতিক’ জোট গঠনের অভিযোগ তুলেছে। বলেছে, এই দুই দল পরস্পরের বিরোধিতা করে ভোটে লড়াই করেছে। তা ছাড়া বিজেপি এককগরিষ্ঠ দল। সরকার গঠনের প্রথম অধিকার তাদের। এর বিরুদ্ধে কংগ্রেস ও জেডি (এস)-এর দাবি, দুই দলের প্রাপ্ত ভোটের হার প্রায় ৫৯ শতাংশ। তুলনায় বিজেপি পেয়েছে মাত্র ৩৪ দশমিক ৮ শতাংশ ভোট।

এই দাবি ও পাল্টা দাবির মধ্যে রাজ্যপাল বলেছেন, ভোটের ফল চূড়ান্ত ঘোষণার পরই তিনি সরকার গঠনের দাবির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।