লিঙ্গবৈষম্যজনিত অবহেলায় বছরে ২ লাখ ৩৯ হাজার কন্যাশিশুর মৃত্যু হয়

ভারতে প্রতিবছর শুধু লিঙ্গবৈষম্যজনিত অবহেলায় আনুমানিক ২ লাখ ৩৯ হাজার কন্যাশিশুর মৃত্যু হয়। এক নতুন গবেষণা প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই মৃত কন্যাশিশুদের বয়স গড়ে পাঁচ বছরের নিচে।

প্রভাবশালী চিকিৎসা ও জনস্বাস্থ্য সাময়িকী দ্য ল্যানসেট এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ নিয়ে মঙ্গলবার প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যম সিএনএন। তাতে বলা হয়েছে, এক দশকে ভারতে এ ধরনের শিশুমৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ২৪ লাখ। তবে এর সঙ্গে জন্মের আগেই মৃত্যুর সংখ্যাটি যুক্ত করা হয়নি।

এই গবেষণা প্রতিবেদনের গবেষক ক্রিস্টোফি গিলমোতো বলেছেন, ‘কন্যাশিশুদের প্রতি লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য শুধু তাদের জন্মের ক্ষেত্রে বাধা দেয় তা নয়, জন্মের পর কন্যাশিশুর মৃত্যুর জন্যও এ ধরনের বৈষম্য দায়ী।’ তিনি আরও বলেন, শিক্ষা, কর্মসংস্থান বা রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করলেই লিঙ্গবৈষম্য দূর করা যায় না। যত্নআত্তি নেওয়া, টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা এবং কন্যাশিশুদের পুষ্টি নিশ্চিত করাও প্রয়োজন।

সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, ভারতের পরিপ্রেক্ষিতে এই গবেষণা করার ক্ষেত্রে জাতিসংঘের জনসংখ্যাবিষয়ক তথ্যভান্ডার থেকে সহায়তা নেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে তথ্য নিয়ে তা গবেষণায় ব্যবহার করা হয়েছে। গবেষকেরা বলেছেন, ভারতের বেশির ভাগ রাজ্যে পাঁচ বছরের কম বয়সী কন্যাশিশুর মৃত্যুর হার অত্যন্ত বেশি। দেশটির ৩৫টি রাজ্যের ২৯টিতে এ চিত্র দেখা গেছে।

গবেষণা প্রতিবেদনের লেখকেরা বলেছেন, ‘পাঁচ বছরের কম বয়সী কন্যাশিশুদের মৃত্যুর মোট ঘটনার ২২ শতাংশ হয়ে থাকে লিঙ্গভিত্তিক পক্ষপাতিত্বের কারণে।’ এ–সংক্রান্ত একটি বিবৃতি গতকাল সোমবার প্রকাশ করা হয়।

গবেষকেরা বলছেন, এ সমস্যা ভারতের উত্তরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে উত্তর প্রদেশ, বিহার, রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশে লিঙ্গবৈষম্যজনিত অবহেলায় পাঁচ বছরের কম বয়সী কন্যাশিশুর মৃত্যুর হার বেশি। লিঙ্গবৈষম্যের কারণে পাঁচ বছরের কম বয়সী যে পরিমাণ কন্যাশিশুর মৃত্যু হয়েছে, তার দুই-তৃতীয়াংশ এসব অঞ্চলের।

গবেষণা প্রতিবেদনের সহলেখক নন্দিতা সাইকিয়া বলেন, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুবিধা পেতে ভারতীয় নারীদের আরও উৎসাহ দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে লিঙ্গবৈষম্যের বিষয়ে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে।

দ্য ল্যানসেটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কন্যাশিশুদের প্রতি বৈষম্যমূলক অবহেলার ক্ষেত্রে পুত্রসন্তানের প্রত্যাশাই মূল প্রভাবক। একই কারণে ভারতে ছেলের সঙ্গে মেয়ের সংখ্যায় তফাত প্রায় ৬ কোটি ৩০ লাখ। বর্তমানে ভারতে পুরুষ ও নারীর সংখ্যার অনুপাত ১০৭ : ১০০।