কর্ণাটকের গরিষ্ঠতা প্রমাণ কাল

গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলছেন কর্ণাটকের সদ্য নিযুক্ত মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরাপ্পা। কর্ণাটক, ভারত, ১৬ মে। ছবি: রয়টার্স
গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলছেন কর্ণাটকের সদ্য নিযুক্ত মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরাপ্পা। কর্ণাটক, ভারত, ১৬ মে। ছবি: রয়টার্স

কাল শনিবারেই কর্ণাটক বিধানসভা ভবনে সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দিতে হবে সদ্য নিযুক্ত মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরাপ্পাকে। বিকেল চারটায় যুযুধান দুই শিবিরের মধ্যে হবে সেই শক্তি পরীক্ষা। ১০৪ সদস্য নিয়ে বিজেপি, নাকি ১১৬ সদস্যের কংগ্রেস-জেডিএস জোট, কারা পাবে কর্ণাটকের ভার, তা কালই ঠিক হয়ে যাবে। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট শুক্রবার এই নির্দেশ দেন।

সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পা জানিয়েছেন, আগামীকালই তিনি বিধানসভার বিশেষ অধিবেশন ডাকছেন। তিনি নিশ্চিত, সংখ্যাগরিষ্ঠতার পরিচয় তিনি দেবেনই।

সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের বিশেষ বেঞ্চ শুক্রবার আরও বলেছেন, সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের কাজ তদারক করবেন প্রোটেম স্পিকার। সে জন্য তিনি চারটের আগেই নির্বাচিত সদস্যদের শপথ বাক্য পাঠ করাবেন। বিচারপতি এ কে সিক্রি, এস এ বোবড়ে এবং অশোক ভূষণ এই নির্দেশও দেন, সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের আগে মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পা নীতিগত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। এই নির্দেশ গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে, শপথ গ্রহণের পরই সংবিধান অনুযায়ী ইয়েদুরাপ্পা রাজ্যের অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান সম্প্রদায়ের মধ্য থেকে একজনকে বিধানসভার মনোনীত সদস্য নিযুক্ত করেন। মনোনীত সদস্য হলেও তাঁর ভোটদানের অধিকার থাকত। এই নিযুক্তি নাকচ হয়ে যাওয়ায় বিজেপি একটি ভোটও হারাল।

সকালে বিশেষ এজলাস বসার কিছু সময়ের মধ্যেই বিজেপির আইনজীবী মুকুল রোহতগি বিজেপির নেতা ইয়েদুরাপ্পার দুটি চিঠি পেশ করেন। রাজ্যপালকে লেখা সেই চিঠিতে ইয়েদুরাপ্পা বলেছেন, তিনিই পরিষদীয় দলের নেতা নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁকে সরকার গঠনের জন্য ডাকা হোক। দুটি চিঠির কোনোটিতেই গরিষ্ঠতা প্রমাণে কোনো সংখ্যা ছিল না। কীভাবে গরিষ্ঠতা পাবেন, কারা ভোট দেবেন, তা লেখা ছিল না। অন্যদিকে কংগ্রেস-জেডিএস জোটের পক্ষে যে চিঠি দেওয়া হয় তাতে ১১৬ জনের সই ছিল। সংখ্যালঘু দলকে কোন যুক্তিতে রাজ্যপাল সরকার গড়তে ডাকেন, সেই প্রশ্নের মীমাংসা সর্বোচ্চ আদালত ‘ফ্লোর টেস্ট’-এর পরে করবেন বলে জানিয়েছেন।

বিজেপির পক্ষে খুব দ্রুত ‘ফ্লোর টেস্ট’-এর বিরোধিতা করা হয়। বলা হয়, অন্তত সোমবার পর্যন্ত সময় দেওয়া হোক। কিন্তু বিশেষ বেঞ্চ সেই দাবি মানেননি। বিচারপতিরা অতীত নিদর্শন দেখিয়ে বলেন, আগেও এত দ্রুত গরিষ্ঠতা প্রমাণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কংগ্রেসের পক্ষে দাবি জানানো হয়, গোটা প্রক্রিয়া যেন ‘ভিডিওগ্রাফ’ করা হয় এবং বিধায়কেরা যাতে নির্ভয়ে ভোট দিতে পারেন, সে জন্য তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দরকার। বিধায়কদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সুপ্রিম কোর্ট কর্ণাটক পুলিশের মহাপরিচালককে নির্দেশ দিয়েছেন।

সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যপাল বাজুভাই বালার সিদ্ধান্তকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। বিচারপতিরা বলেন, ‘কিসের ভিত্তিতে রাজ্যপাল ঠিক করবেন কাকে সরকার গড়তে ডাকবেন? একক গরিষ্ঠ দলের মৌখিক দাবি, নাকি কংগ্রেস-জেডিএসের বিধায়কদের লিখিত সমর্থন, কাকে গুরুত্ব দেবেন তিনি? কোনো সন্দেহ নেই এটা সংখ্যার খেলা। তাই রাজ্যপালের দেখা দরকার আপাতদৃষ্টিতে কাদের দল ভারী।’

প্রোটেম স্পিকার নিযুক্তির বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। বিধানসভার অভ্যন্তরে স্পিকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। বিজেপি যদি প্রোটেম স্পিকার নিযুক্ত করে তাহলে তারা একজনের সমর্থন হারায়। আবার কংগ্রেসকে সেই সুযোগ দিলে প্রোটেম স্পিকার কী করবেন, সে বিষয়ে সন্দেহ থেকে যায় বিস্তর।

কংগ্রেসের আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে জানিয়েছেন। রায়ের পরই সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে তিনি বলেন, এই রায় ঐতিহাসিক কেননা এর ফলে গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে। তিনি আরও বলেন, রাজ্যপালের সিদ্ধান্ত ঠিক কি না, সর্বোচ্চ আদালত ভবিষ্যতে তা-ও জানাবেন বলে জানিয়েছেন।

বিজেপির ‘আগ্রাসী’ মনোভাবের হাত থেকে বিধায়কদের আগলে রাখতে বৃহস্পতিবার রাতেই কংগ্রেস ও জেডিএস নেতৃত্ব তাদের এমএলএদের হায়দরাবাদে সরিয়ে নিয়ে যায়। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর আবার তাঁদের বেঙ্গালুরু ফিরিয়ে আনার তোড়জোড় শুরু হয়েছে।