আস্থা ভোটে নির্ঘাত হার টের পেয়ে বিজেপি নেতার পদত্যাগ

ইয়েদুরাপ্পা
ইয়েদুরাপ্পা

আস্থা ভোটে পরাজয় অবধারিত বুঝে কর্ণাটকের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরাপ্পা পদত্যাগ করলেন। সেই সঙ্গে শেষ হলো কর্ণাটকি-নাটক। শনিবার বিকেল সোয়া চারটায় সংক্ষিপ্ত ভাষণ শেষে তিনি জানালেন, আস্থা ভোটে আর তাঁর আগ্রহ নেই। বিধানসভা ভবন থেকেই তিনি যাচ্ছেন রাজভবনে, রাজ্যপালের কাছে পদত্যাগপত্র পেশ করতে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে ভারতের ক্ষণস্থায়ী মুখ্যমন্ত্রীদের মধ্যে ইয়েদুরাপ্পা হলেন দ্বিতীয়। এত দিন এই ক্লাবের একমাত্র সদস্য ছিলেন জগদম্বিকা পাল। ১৯৯৮ সালে উত্তর প্রদেশের রাজ্যপাল রমেশ ভান্ডারী তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর শপথবাক্য পাঠ করালেও একদিন পর আদালত তা অবৈধ বলে খারিজ করে দেন। কুড়ি বছর পর ওই ক্লাবে তাঁরই পাশে এসে দাঁড়ালেন ৭৫ বছরের ইয়েদুরাপ্পা।
এই দ্রুত পালাবদলের পর কর্ণাটকের শাসনক্ষমতা এখন বর্তাবে কংগ্রেস-জেডিএস জোটের ওপর। এই জোটের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কংগ্রেস আগেই জেডিএস নেতা এইচ ডি কুমারস্বামীকে মেনে নিয়েছে।
এমনটা যে হতে পারে শনিবার সকাল পর্যন্তও কিন্তু তার আঁচ পাওয়া যায়নি। ১৫ তারিখ ভোটের ফল বেরোনোর পর বিজেপিকে রুখতে কংগ্রেস-জেডিএস জোট বেঁধে ফেলে। অন্যদিকে বিজেপি চেষ্টা চালিয়ে যায় এই দুই দল ভাঙিয়ে প্রয়োজনীয় ৮ জনের সমর্থন আদায়ের। রাজ্যপাল বাজুভাই বালা সেই ছক অনুযায়ী ইয়েদুরাপ্পাকে সরকার গড়ার আহ্বানও জানান। সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দিতে ১৫ দিন সময়ও দেন। এখানেই বাজি মেরে বেরিয়ে যায় কংগ্রেস-জেডিইউ জোট। মাঝরাতে এই দুই দল কড়া নাড়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর বাড়ির। তিনি গঠন করে দেন তিন বিচারপতির বিশেষ আদালত। সেই আদালত ১৫ দিনের সময়সীমা কমিয়ে এক দিনে নামিয়ে আনেন। শুক্রবারের সেই নির্দেশের পর দু পক্ষে শুরু হয়ে যায় সাজো সাজো রব। কিন্তু এত কম সময়ে কেল্লা ফতে সম্ভব নয় দেখে ইস্তফার সিদ্ধান্ত নেন ইয়েদুরাপ্পা। তার আগে বেঙ্গালুরু থেকে তিনি ফোনে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহর সঙ্গে।
নাটকের সাসপেন্স অবশ্য ছিল শেষ-বিকেল পর্যন্ত। বেঙ্গালুরু থেকে হায়দরাবাদে নিয়ে যাওয়া বিধায়কদের ফিরিয়ে আনা হলেও কংগ্রেস ও জেডিএসের ৩ বিধায়ক বিকেল পর্যন্ত নিখোঁজ ছিলেন। বেলা তিনটায় কর্ণাটক পুলিশ তাঁদের হোটেল থেকে উদ্ধার করে বিধানসভায় নিয়ে আসে। একেবারে শেষ মুহূর্তে তাঁরা বিধায়ক হিসেবে শপথ নেন। ওই সময়েই বিজেপি নেতারা বুঝে যান, আর কোনোভাবে আস্থা ভোটে জেতা সম্ভব নয়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে বিধানসভায় আস্থা ভোটের গোটা প্রক্রিয়া লাইভ টেলিকাস্ট হবে। সারা দেশ দেখতে পাবে বিধানসভায় অনৈতিক কিছু করা হচ্ছে কি না। সংখ্যা না থাকায় বিজেপি সেই ঝুঁকি নিতে চায়নি। তা ছাড়া শনিবার সকাল থেকেই কংগ্রেস এক এক করে চারটি ফোনালাপ প্রচার করে দেয়। তাতে শোনা যায় রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতারা কীভাবে কংগ্রেস-জেডিএস বিধায়কদের আনুগত্য বদলানোর টোপ দিচ্ছেন। সংখ্যা না থাকা সত্ত্বেও জিতলে স্পষ্ট হয়ে যেত ক্ষমতায় আসতে বিজেপি অনৈতিকতার আশ্রয় নিয়েছে। লোকসভা ভোটের আগে জনমত বিরুদ্ধে চলে যাওয়ার এই ঝুঁকি বিজেপির শীর্ষ নেতারা তাই নিতে চাননি।