রাজবিয়ে নিয়ে আমাদের এত মাতামাতি কেন?

ব্রিটিশ রাজপুত্র হ্যারি ও মার্কিন অভিনেত্রী মেগান মার্কেল শনিবার বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন। ছবি: রয়টার্স
ব্রিটিশ রাজপুত্র হ্যারি ও মার্কিন অভিনেত্রী মেগান মার্কেল শনিবার বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন। ছবি: রয়টার্স


ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছিল, বিয়েটা যেন আমাদেরই কোনো আপনজনের। তাই আমাদের খুশির সীমা নেই। কিন্তু বিয়েটা ব্রিটিশ রাজপুত্র হ্যারি ও মার্কিন অভিনেত্রী মেগান মার্কেলের। তাহলে এই বিয়ে নিয়ে আমাদের এত মাতামাতি কেন?

ইউগভের জরিপ বলছে, গত শনিবার অনুষ্ঠিত আলোচিত রাজবিয়ে নিয়ে অধিকাংশ (৬৬ শতাংশ) ব্রিটিশদের মধ্যে কোনো আগ্রহ ছিল না।

কী বিচিত্র! যাদের ঘরে বিয়ে, তাদেরই খবর নেই। এদিকে হ্যারি-মেগানের বিয়ে নিয়ে আমাদের ঘুম নেই। অন্তত গত কয়েক দিনের পত্রিকার পাতা, টেলিভিশনের পর্দা ও ফেসবুকের ফিড তেমনটাই বলছে। সর্বত্রই হ্যারি-মেগান।

রাজবিয়ের ডামাডোলে অতি বিপ্লবীরা এক তত্ত্ব দাঁড় করিয়ে ফেলেছেন। তাঁরা বলছেন, আমাদের মনে এখনো দাসত্ব। মাথায় ব্রিটিশ ভূত। তাই প্রভুদের বিয়েতে আমাদের এত নাচন!

তত্ত্বের পিঠে পাল্টা তত্ত্ব দাঁড় করিয়ে তর্ক বহুদূর চালিয়ে নেওয়া যায়। তবে হ্যাঁ, এটা তো সত্য, হ্যারি-মেগানের বিয়ে নিয়ে আমাদের আগ্রহ একটু বেশিই ছিল। তাহলে এই আগ্রহের রহস্য কী?

অনেকগুলো বিষয়ই অনুঘটক হিসেবে কাজ করে থাকতে পারে। ব্রিটিশরা আমাদের চেনা। গণমাধ্যমের কল্যাণে ব্রিটিশ রাজপরিবারের খবরাখবর আমরা নিয়মিত পাই। প্রিন্স হ্যারি যতটা না ব্রিটিশ রাজপুত্র, তার চেয়ে বেশি ডায়নার ছেলে। ২০ বছর আগে মর্মান্তিকভাবে ডায়নার মৃত্যু হয়। ডায়নার স্মৃতি তাঁর সন্তানদের মধ্য দিয়ে জাগ্রত। সেই সুবাদে প্রিন্স উইলিয়ামের মতো হ্যারির প্রতিও মানুষের একধরনের সহানুভূতি আছে। অন্যদিকে, অভিনয় ও দাতব্য কাজের জন্য মেগানও পরিচিত মুখ।

হ্যারি ব্রিটিশ রাজপুত্র। কিন্তু বিয়ে করেছেন ভিনদেশি তারকাকে। হ্যারির বয়স ৩৩, মেগানের ৩৬। মেগান শ্বেতাঙ্গ বাবা ও কৃষ্ণাঙ্গ মায়ের সন্তান। তাঁর আগেও একবার বিয়ে হয়েছিল। পরে বিচ্ছেদ হয়। এমন একজন নারীর ব্রিটিশ রাজবধূ হওয়া কয়েক বছর আগেও অচিন্তনীয় ছিল। কিন্তু হ্যারি সাহস দেখিয়েছেন। রাজপরিবারের প্রথা ভেঙেছেন। ব্রিটিশ রাজপরিবার যে আগের যুগে আটকে নেই, তা দেখিয়েছেন তিনি। মেগানও কম যান না। প্রেমের টানে সব ছেড়েছেন তিনি। তাঁর ভালোবাসা, তাঁর ত্যাগ মানুষকে বিমোহিত করেছে।

হ্যারি ও মেগান দুই ভুবনের দুই বাসিন্দা ছিলেন। তাঁদের পরিচয়, প্রেম ও পরিণতি রূপকথার মতো। আচরণ মনোবিজ্ঞানী জো হেমিংস মনে করেন, এই জুটির মিলনের মধ্যে সোপ অপেরার উপাদান আছে, যা মানুষকে মুগ্ধ করেছে।

আমাদের পৃথিবী অস্থিরতায় ভরা। এই অস্থিরতা থেকে আমরা মুক্তি চাই। মুক্তির উপায় খুঁজে বেড়াই। হ্যারি ও মেগানের বিয়ে আমাদের তেমনই একটা উপলক্ষ এনে দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ জীবনীকার অ্যান্ড্রু মর্টনের ভাষ্য আমলযোগ্য। তাঁর মতে, জটিল পারিপার্শ্বিকতার ভিড়ে রাজবিয়ে স্বস্তির নিশ্বাসের একটা চমৎকার সুযোগ এনে দিয়েছে। এই বিয়ে আশার প্রতীক। এ কারণে হ্যারি-মেগানের বিয়ে মানুষের নজর কেড়েছে।

বিবিসির রয়্যাল করেসপনডেন্ট হিসেবে ১৪ বছর কাজ করেছেন পিটার হান্ট। রাজপরিবারে প্রতি মানুষের আগ্রহের সাংস্কৃতিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি। তাঁর মতে, আমাদের সংস্কৃতির মধ্যে রাজা, রানি, প্রিন্স, প্রিন্সেসের গল্প গেঁথে আছে। ছোটবেলা থেকেই এ-সংক্রান্ত গল্প আমরা শুনি, পড়ি। বইয়েও আছে রাজা-রানিদের ইতিহাস। এমনকি আমরা প্রিন্স ও প্রিন্সেসদের মতো করে পোশাকও পড়ি।

সর্বোপরি মানুষ প্রেমের জয় দেখতে চায়, দেখতে চায় ভালোবাসার জয়। হ্যারি ও মেগান সেটাই করে দেখিয়েছেন।