বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী থেকে আসাম রক্ষা করতে হবে: অনুপ চেটিয়া

উলফা নেতা অনুপ চেটিয়া। ছবি: প্রথম আলো
উলফা নেতা অনুপ চেটিয়া। ছবি: প্রথম আলো

ভারতের আসাম রাজ্যে ১৯৭১ সালের পর প্রবেশ করা বাংলাদেশি নাগরিকদের বিতাড়ন করতে বললেন বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসাম (উলফা) নেতা অনুপ চেটিয়া। বাংলাদেশে অনেক দিন কারাবন্দী থাকার পর ভারতে হস্তান্তর করা অনুপ চেটিয়া আজ বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, আসাম চুক্তি মেনে ১৯৭১-এর পর যেসব বাংলাদেশি আসামে এসেছেন, তাঁদের বিতাড়ন করতে হবে।

ভারতের জাতীয় নাগরিক পঞ্জীকরণ (এনআরসি) এবং ভারতের নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল নিয়ে বিতর্কের মাঝে এবার নিজেদের কড়া অবস্থান জানিয়ে দিল উলফা। বিলটিতে বলা হয়েছে, ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে আসা সংখ্যালঘু অনুপ্রবেশকারীদের ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। নাগরিকত্বের প্রশ্নে এসব দেশের সংখ্যাগুরু মুসলিমদের বাদ দেওয়া হয়েছে। শুধু উলফাই নয়, আসামে বিজেপি ছাড়া প্রায় সব দলই এই বিলের বিরোধী। সম্প্রতি যৌথ সংসদীয় দল আসাম সফরে এলে সেই মনোভাবের কথা তারা জানিয়েও দেয় দলটিকে।

দিল্লিতে গত সোমবার সরকারের সঙ্গে নির্ধারিত শান্তি আলোচনা শেষ করে গুয়াহাটি ফিরেছেন উলফা নেতারা। গতকাল মঙ্গলবার গুয়াহাটিতে তাঁরা সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। আজ সকালে আলফার সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেটিয়া মুঠোফোনে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন।

অনুপ চেটিয়ার দাবি, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ২০১৬ বাতিল করতে হবে। নতুবা শান্তি আলোচনা থেকে বেরিয়ে আসবেন তাঁরা। দিল্লিতে শান্তি আলোচনা চলার সময় তাঁরা এ কথা জানিয়েও এসেছেন। দিল্লির শান্তি আলোচনায় উলফা প্রতিনিধিদের নেতৃত্বে ছিলেন সংগঠনের চেয়ারম্যান অরবিন্দ রাজখোঁয়া। আর কেন্দ্রীয় সরকারের হয়ে উপস্থিত ছিলেন এ বি মাথুর।

এ ব্যাপারে উলফার সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেটিয়া বলেন, সরকারের সঙ্গে আলোচনা এত দিন ইতিবাচকভাবে এগিয়ে চলেছে। কিন্তু নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বাতিল করা না হলে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া উলফার পক্ষে সম্ভব নয়।

বাংলাদেশে কারাবন্দী থাকার সময় উলফা নেতা অনুপ চেটিয়া। ছবি: প্রথম আলো ফাইল
বাংলাদেশে কারাবন্দী থাকার সময় উলফা নেতা অনুপ চেটিয়া। ছবি: প্রথম আলো ফাইল

এরপর বাংলাদেশিদের প্রশ্নে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেন তিনি। তাঁর সাফ কথা, আসাম চুক্তি মেনে ১৯৭১-এর পরে যেসব বাংলাদেশি আসামে এসেছেন, তাঁদের বিতাড়িত করতে হবে। তাঁর এমন অবস্থানের কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘বহুদিন ধরে বেআইনি অনুপ্রবেশ চলতে থাকায় আসামের ভূমিপুত্রদের জন্যই এখন থাকার জায়গা নেই। রাজ্যের বনাঞ্চল ধ্বংস হচ্ছে প্রতিনিয়ত। পরবর্তী প্রজন্মের জন্যই বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের হাত থেকে রাজ্যকে রক্ষা করতে হবে।’

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের স্বাধীনতার লক্ষ্যে ১৯৭৯ সালে গঠিত হয় উলফা। এরপর দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে সশস্ত্র তৎপরতা চালায় সংগঠনটি। অনুপ চেটিয়া উলফার প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। তাঁর আসল নাম গোলাপ বড়ুয়া, আর সাংগঠনিক নাম অনুপ চেটিয়া।

১৯৯৭ সালের ২১ ডিসেম্বর ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার একটি বাসা থেকে অনুপ চেটিয়াকে গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশের পুলিশ। এরপর তাঁর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান এবং অবৈধভাবে বিদেশি মুদ্রা ও একটি স্যাটেলাইট ফোন রাখার অভিযোগে তিনটি মামলা হয়। আদালত তিনটি মামলায় তাঁকে যথাক্রমে তিন, চার ও সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। একসঙ্গে তিন মামলার সাজা কার্যকর হওয়ায় সাত বছর পরই ২০০৪ সালে তাঁর সাজার মেয়াদ শেষ হয়। কিন্তু তারপর থেকে তিনি কাশিমপুর কারাগারে আটক ছিলেন। ২০১৫ সালের ১০ নভেম্বর বাংলাদেশ অনুপ চেটিয়াকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করে। তাঁর সঙ্গে তাঁর দুই সহযোগী লক্ষ্মী প্রসাদ গোস্বামী ও বাবুল শর্মাকেও হস্তান্তর করা হয়।