মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কুমারস্বামীর শপথ, কেন্দ্রেও বিজেপিবিরোধী জোটের বার্তা

এইচ ডি কুমারস্বামী
এইচ ডি কুমারস্বামী

তিথি-নক্ষত্র ও পঞ্জিকা মেনে চামুন্ডেশ্বরী মন্দিরে পুজো দিয়ে কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন ধর্মনিরপেক্ষ জনতা দল (জেডিএস) নেতা এইচ ডি কুমারস্বামী। তাঁরই সঙ্গে উপমুখ্যমন্ত্রী হলেন প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি দলিত নেতা জি পরমেশ্বর।

আগামী শুক্রবার আস্থা ভোটে জেতার পর গঠিত হবে জোট মন্ত্রিসভা। ৩৪ সদস্যের মন্ত্রিসভায় কংগ্রেসের সদস্য হবে ২২ জন, অন্যরা জেডিএসের। বিধানসভার স্পিকার হিসেবে আগেই শপথ নিয়েছেন কংগ্রেসের রমেশ কুমার। তবে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের জাঁকজমকে সবকিছু ছাপিয়ে বড় হয়ে উঠল জাতীয় স্তরে বিজেপি-বিরোধী জোট গঠনের উদ্যোগ।

বেঙ্গালুরুতে বিধানসভা ভবনের সামনে এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করতে উপস্থিত ছিলেন ইউপিএ চেয়ারপারসন সোনিয়া গান্ধী ও কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। রাহুল ও জেডিএসের প্রাণপুরুষ সাবেক প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া দুজনেই জানিয়ে দিয়েছেন, রাজ্যে সহযোগিতার এই মডেল তাঁরা জাতীয় স্তরেও নিয়ে যাবেন। কংগ্রেস ও জেডিএসের শীর্ষ নেতাদের পাশে থেকে সম্মিলিতভাবে বিজেপি–বিরোধিতার ইঙ্গিত দিয়ে গেলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু, কেরালার সিপিএম মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। এঁদেরই পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন এসপি নেতা অখিলেশ সিং যাদব, বিএসপি নেত্রী মায়াবতী, সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, লোকদল নেতা অজিত সিং, সংযুক্ত জনতা দল নেতা শরদ যাদব, বিহারের আরজেডি নেতা লালুপ্রসাদের ছেলে তেজস্বীসহ আরও অনেকে। তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রশেখর রাওয়ের কংগ্রেস–বিরোধিতা ইদানীং প্রবল। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে কংগ্রেস নেতাদের এড়াতে গত মঙ্গলবার বেঙ্গালুরু এসে তিনি কুমারস্বামীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে গেছেন। যদিও জোটের প্রয়োজনীয়তার কথাও জানিয়ে গেছেন। অনুপস্থিত নেতাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ওডিশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক, এআইএডিএমকে নেতা পনিরসেলভাম, ডিএমকে নেতা স্ট্যালিন, শিবসেনা নেতা উদ্ধব ঠাকরে। 

বিজেপি-বিরোধিতায় বিরুদ্ধ দলগুলো একমত হলেও নেতৃত্বদানের প্রশ্ন ঘিরে এই জোটবদ্ধতা মজবুত হবে কি না, সেই সংশয় থেকেই যাচ্ছে। মমতা-চন্দ্রশেখর রাও ঘোর রাহুল-বিরোধী। জোট নেতৃত্ব তাঁরা রাহুলের কংগ্রেসকে ছাড়তে রাজি নন। তাঁদের মত হলো, কর্ণাটকের ফর্মুলা কংগ্রেস জাতীয় স্তরেও মেনে চলুক। অন্য কেউ প্রধানমন্ত্রী হোন, কংগ্রেস সমর্থন জানাক। শপথ গ্রহণের প্রাক্কালে দেবেগৌড়া কিন্তু স্পষ্ট জানিয়ে দেন, কংগ্রেসকে বাইরে রেখে বিজেপির বিরোধিতা সম্ভব নয়। রাহুলের নেতৃত্ব মানতে আপত্তি রয়েছে মারাঠা ‘স্ট্রং ম্যান’ শরদ পাওয়ারেরও। কিন্তু শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে তিনি এসেছিলেন। রাহুলের পাশেই বসেও ছিলেন। অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি সাবেক মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়াকে। অথচ ভোটের আগে তিনিই ছিলেন রাজ্যের বিজেপি-বিরোধী মুখ।

বিজেপি-বিরোধিতা শেষ পর্যন্ত কোন দিকে বাঁক নেবে সেই জল্পনা ছাপিয়ে বৃহস্পতিবার বড় হয়ে ওঠে এক মঞ্চে মায়াবতী-অখিলেশের উপস্থিতি। ১৯৯৫ সালে লখনৌয়ের সরকারি গেস্টহাউসে সমাজবাদী পার্টির দুর্বৃত্তদের হাতে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে মায়াবতী কোনো দিন এসপির কোনো নেতার সঙ্গে এক মঞ্চে আসেননি। গত ২৩ বছরে মুলায়ম সিং যাদবের সঙ্গে কোনো দিন রাজনৈতিক অথবা অরাজনৈতিক কোনো মঞ্চ তিনি ব্যবহার করেননি, বাক্যালাপও ছিল বন্ধ। এই বছর গোরক্ষপুর ও ফুলপুর লোকসভার উপনির্বাচনে এসপি-বিএসপি জোট হলেও মায়াবতী-অখিলেশ একসঙ্গে প্রচার চালাননি। বেঙ্গালুরুতে এই প্রথম তাঁদের এক মঞ্চেই শুধু দেখা গেল না, দুজনে কথাও বললেন। রাহুলের উপস্থিতিতে মায়াবতী কথা বললেন সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে। দুজন দুজনার হাত ধরাধরি করে।
সন্দেহ নেই বিজেপির মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়েছে কংগ্রেস। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের দিনটি তারা পালন করল ‘জনমত অবমাননার’ দিন হিসেবে, কর্ণাটকে জায়গায় জায়গায় বিক্ষোভ দেখিয়ে।