কে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল আনা ফ্রাঙ্কের সঙ্গে

আনা ফ্রাঙ্ক
আনা ফ্রাঙ্ক

হৃদয়স্পর্শী ডায়েরি লিখে পৃথিবীজুড়ে আলোচিত কিশোরী আনা ফ্রাঙ্ক মারা যান ১৯৪৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে। এর সাত মাস আগে নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামের একটি গোপন জায়গা থেকে তিনি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা নাৎসি বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। এরপর থেকেই প্রশ্ন উঠেছে, কীভাবে ধরা পড়ল ফ্রাঙ্ক পরিবার? কে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল তাঁদের সঙ্গে?
দ্য ব্যাকইয়ার্ড অব দ্য সিক্রেট অ্যানেক্স নামে নতুন একটি বইতে দাবি করা হয়েছে, আনা ফ্রাঙ্ক ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আনস ভন ডিক নামের এক ইহুদি নারী বিশ্বাসঘাতকতা করে থাকতে পারেন। বইটি লিখেছেন নেদারল্যান্ডসের জেরার্ড ক্রেমার নামের এক ব্যক্তি। ৭০ বছর বয়সী এই ব্যক্তি আমস্টারডামের জেরার্ড ক্রেমার সিনিয়রের ছেলে। আনস ভন ডিক নামের ওই নারী সিনিয়র ক্রেমারের পরিচিত ছিলেন।
জেরার্ড ক্রেমার তাঁর বইতে উল্লেখ করেছেন, তাঁর বাবা ১৯৭৮ সালে মারা যান। সিনিয়র ক্রেমার ছিলেন আমস্টারডামের প্রিনসেনগ্রাখট এলাকার একটি অফিস ভবনের তত্ত্বাবধায়ক। নেদারল্যান্ডস দখলের সময় এই ভবনটির দুটি তলা নিয়ন্ত্রণে নেয় জার্মান কর্তৃপক্ষ। নাৎসি বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে এই প্রিনসেনগ্রাখটেরই একটি ভবনের বর্ধিতাংশে আত্মগোপন করেছিলেন আনা ও তাঁর পরিবার।
সিনিয়র ক্রেমারের উদ্ধৃতি দিয়ে জেরার্ড ক্রেমার দাবি করেছেন, আনা ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা গ্রেপ্তার হওয়ার আগে প্রিনসেনগ্রাখট এলাকায় নাৎসি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন ভবনটিতে ছদ্মবেশে আনাগোনা বেড়ে যায় ভন ডিক নামের ওই নারীর। সেখানে নাৎসি বাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগের একটি কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছিল। ১৯৪৪ সালের আগস্ট মাসের একদম শুরুর দিকে একদিন জার্মান কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভন ডিকের কথোপকথন শুনে ফেলেন সিনিয়র ক্রেমার। ভন ডিক সে সময় প্রিনসেনগ্রাখট সম্পর্কে কিছু একটা বলছিলেন। এর পরপরই ৪ আগস্ট গ্রেপ্তার হন আনা ও তাঁর পরিবার। ১৫ বছর বয়সী আনাকে পাঠানো হয় ওয়েস্টারবর্কের শিবিরে। এরপর তাঁকে নেওয়া হয় জার্মানিতে নাৎসি বাহিনীর বার্গেন-বেলসেন শিবিরে। সেখানে ১৯৪৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রবল জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যান আনা।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসি বাহিনীকে সহযোগিতা করার অভিযোগে ১৯৪৮ সালে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয় ভন ডিক নামের ওই নারীকে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, নিজের ভাই ও তাঁর পরিবারের সদস্যসহ ১৪৫ জনকে
গ্রেপ্তারে নাৎসি বাহিনীকে সহযোগিতা করেছিলেন তিনি। তবে এই নারীই যে আনা ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসতে পারেনি আনা ফ্রাঙ্ক হাউস মিউজিয়াম। পুলিশের তদন্তেও এমন কিছু উঠে আসেনি।
আনা ফ্রাঙ্ক হাউস মিউজিয়ামের এক মুখপাত্র বলেন, দ্য ব্যাকইয়ার্ড অব দ্য সিক্রেট অ্যানেক্স বইয়ের লেখকের সঙ্গে তাঁদের শুরু থেকেই যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। তবে আনার গ্রেপ্তার হওয়ার রহস্যটিতে কিছুটা আলোকপাত করতে পারলেও ভন ডিকই যে এর জন্য দায়ী, তার অকাট্য প্রমাণ বইটিতে নেই।