ভারতে আসা সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দাদের আনন্দ নেই

দিনহাটায় সাবেক ছিটমহলবাসীর অস্থায়ী ক্যাম্পের দৃশ্য এটি। ফাইল ছবি
দিনহাটায় সাবেক ছিটমহলবাসীর অস্থায়ী ক্যাম্পের দৃশ্য এটি। ফাইল ছবি

আগামী ৩১ জুলাই ১৬২টি সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দারা পালন করবেন ছিটমহল বিনিময়ের তৃতীয় বর্ষপূর্তি। কিন্তু ভারতে আসা বাসিন্দাদের মধ্যে কোনো আনন্দ নেই, বরং ক্ষোভে ফুঁসছেন বেশির ভাগ মানুষ। তাঁদের দাবি, সরকার যে স্বপ্ন দেখিয়ে ভারতে এনেছিল, তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। এ পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় প্রশাসনের আশ্বাসেও তাঁরা স্বস্তি পাচ্ছেন না।

২০১৫ সালের ৩১ জুলাই গভীর রাতে ভারত ও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ১৬২টি সাবেক ছিটমহল বিনিময় হয়েছিল। এগুলোর মধ্যে ভারতের ভূখণ্ডে ছিল বাংলাদেশের ৫১টি আর বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ছিল ভারতের ১১১টি ছিটমহল। দীর্ঘ ৬৮ বছর পর সেসব ছিটমহল বিনিময় হয়েছিল। এই বিনিময়ের পর আনন্দের বন্যা বয়ে যায় দুই দেশের ছিটমহলজুড়ে। সে সময়কার হিসাব অনুযায়ী, ভারতের অভ্যন্তরে ছিল বাংলাদেশের ১৪ হাজার ২১৪ জন বাসিন্দা। আর বাংলাদেশের ভেতরে ভারতীয় ছিটমহলে ছিল ৩৭ হাজার ৩৬৯ জন ভারতীয় বাসিন্দা।

বাংলাদেশ থেকে ফিরে আসা সাবেক ভারতীয় ছিটমহলবাসীকে কোচবিহারের হলদিবাড়ি, মেখলিগঞ্জ ও দিনহাটা এলাকায় অস্থায়ীভাবে ক্যাম্প করে বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে মেখলিগঞ্জে ৪৬টি পরিবারের ২০৫ জন সদস্য, দিনহাটায় ৫৮টি পরিবারের ২৪৬ জন এবং হলদিবাড়িতে ৯৬টি পরিবারের ৪৭৬ জন সদস্য রয়েছেন।

এই দিনহাটার সরকারি আশ্রয়শিবিরে ছিটমহলবাসী কেমন আছেন, তা দেখতে গতকাল মঙ্গলবার দিল্লি থেকে এসেছিল একটি সরকারি প্রতিনিধিদল। নেতৃত্বে ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব কে বি সিং। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ।

কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল ও রাজ্য সরকারের মন্ত্রীকে সামনে পেয়ে ক্ষোভ উগরে দেন দিনহাটার ছিটমহলের অস্থায়ী শিবিরের বাসিন্দারা। তাঁরা অস্থায়ী শিবিরের নানা অব্যবস্থার কথা তুলে ধরেন। অভিযোগ করেন, অনেকে এখনো রেশন কার্ড পাননি। আর যাঁরা পান, তাতে তাঁদের সংসার চলে না। এমনকি যথেষ্ট কাজও পান না তাঁরা।

এ সময় উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী ছিটমহলবাসীকে শান্ত করতে বলেন, ‘আপনাদের রেশন কার্ড কোচবিহারের জেলা প্রশাসনের হাতে এসে গেছে। সেখানেই থাকতে পারে আপনাদের রেশন কার্ড।’ এ সময় মন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার তাঁদের জন্য পাকা বাড়ি নির্মাণ করছে। কর্মসংস্থানে ব্যবস্থা করেছে। তাদের পুনর্বাসনের সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

এসব আশ্বাস সাবেক এই ছিটমহলবাসীর মধ্যে কোনো আস্থা তৈরি করতে পারেনি। তাঁরা সরকারের এই প্রতিনিধিদলকে জানিয়েছেন, তাঁদের জন্য যে বসতঘর দেওয়া হয়েছে, তা অত্যন্ত ছোট আকারের। বিশেষ করে যেসব বড় পরিবার এখানে আশ্রয় নিয়েছে, তাদের এত ছোট জায়গায় বসবাস কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঠাসাঠাসি করে থাকতে হচ্ছে।