বিশ্বকাপে পুতিনের লাভ কতটা?

পুতিনের সরকার বিশ্বকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজনকে নিয়েছে ‘প্রেস্টিজ ইস্যু’ হিসেবে। ইউরোপ ও আমেরিকাকে খেলার মাঠে এক হাত নেওয়ার এই তো সুযোগ! ছবি: রয়টার্স
পুতিনের সরকার বিশ্বকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজনকে নিয়েছে ‘প্রেস্টিজ ইস্যু’ হিসেবে। ইউরোপ ও আমেরিকাকে খেলার মাঠে এক হাত নেওয়ার এই তো সুযোগ! ছবি: রয়টার্স


বিশ্বকাপ জিততে মাঠে লড়বেন মেসি-নেইমার-রোনালদোরা। সেই লড়াইয়ের আবহে বুঁদ থাকবেন বিশ্বের কোটি কোটি ক্রীড়াপ্রেমী। আর মাঠের বাইরে ভিন্ন অঙ্ক কষবেন রুশ সরকারের কর্তাব্যক্তিরা। তাতে থাকবে বিশ্বকাপ আয়োজনের লাভ-ক্ষতির হিসাব। অন্য কোনো দেশ হলে, এই হিসাবে হয়তো অর্থকড়ির গুরুত্ব একটু বেশিই হতো। কিন্তু ক্রেমলিনের জন্য তা নয়। সেখানে রুবলের চেয়ে রাজনীতিই মুখ্য।

২০১৮ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ে এরই মধ্যে সাজ সাজ রব পড়ে গেছে চারদিকে। মেসি এগিয়ে, নাকি রোনালদো? তাঁদের পেছনে ফেলে শেষে কি নেইমারের হাতেই কাপ উঠবে?—এমন হাজারো প্রশ্ন ঘুরছে ক্রীড়ামোদীদের মুখে। এসব নিয়ে তর্ক জমেছে, চায়ের আড্ডায় ঝড় বইছে। আর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও চাচ্ছেন এটাই। রাশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপ টুর্নামেন্ট নিয়ে যত বেশি আলোড়ন হবে, পুতিনের মুখের হাসি ততই চওড়া হবে। কারণ রাশিয়া বা পুতিনের সরকার এই আয়োজনকে নিয়েছে ‘প্রেস্টিজ ইস্যু’ হিসেবে। ইউরোপ ও আমেরিকাকে খেলার মাঠে এক হাত নেওয়ার এই তো সুযোগ!

রাশিয়ার ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজক হওয়া নিয়ে আগে থেকেই বিতর্ক। অন্যভাবে বললে, বিতর্কটি ছিল ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলোর পক্ষ থেকেই। নিকট অতীতের আন্তর্জাতিক রাজনীতির কিছু ঘটনা সেই বিতর্কের আগুনে আরও ঘি ঢেলেছে। ক্রিমিয়ার অন্তর্ভুক্তি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রভাবিত করার অভিযোগ, সিরীয় যুদ্ধে ভূমিকা ও সর্বশেষ যুক্তরাজ্যে এক রুশ গুপ্তচরের ওপর বিষপ্রয়োগের অভিযোগ—সব মিলিয়ে বিতর্কের বিষয়ের কমতি নেই। কিন্তু তাই বলে তো বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজক পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। সুতরাং রাজনীতিতে রুশ নীতির বিরুদ্ধে থাকলেও, খেলার মাঠে নামতে আপত্তি করছে না ইউরোপের বিভিন্ন দেশ।

রাশিয়ার ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজক হওয়া নিয়ে আগে থেকেই বিতর্ক। নিকট অতীতের আন্তর্জাতিক রাজনীতির কিছু ঘটনা সেই বিতর্কের আগুনে আরও ঘি ঢেলেছে। ছবি: এএফপি
রাশিয়ার ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজক হওয়া নিয়ে আগে থেকেই বিতর্ক। নিকট অতীতের আন্তর্জাতিক রাজনীতির কিছু ঘটনা সেই বিতর্কের আগুনে আরও ঘি ঢেলেছে। ছবি: এএফপি

রাশিয়ায় কিছুদিন আগেই হয়ে গেছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তাতে ৭৭ শতাংশ ভোট পেয়ে পুনরায় প্রেসিডেন্ট হয়েছেন পুতিন। আপাতত তাঁর ঘরে শান্তির সুবাতাস। যদিও সেই নির্বাচন কতটুকু সুষ্ঠু হয়েছে-তা নিয়ে সন্দেহ আছে সমালোচকদের। কারণ প্রধান বিরোধী নেতা আলেক্সেই নাভালনি নিষেধাজ্ঞার কারণে দাঁড়াতেই পারেননি নির্বাচনে। এই নিষেধাজ্ঞাকে ‘রাজনৈতিক’ বলে মনে করছেন অনেকে। অন্য প্রতিদ্বন্দ্বীরাও ব্যালট বাক্সে কোনো পাত্তা পাননি। মূলত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর বিরোধিতাকে স্থানীয় নির্বাচনে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগিয়েছেন পুতিন। দেশের মানুষকে খাইয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তার দাওয়াই। এবার বিশ্বকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট দিয়ে দেশের মানুষ ও বিদেশের শত্রুকে ঘোল খাওয়ানোর উপায় খুঁজছেন তিনি।

ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, বিশ্বকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের মাধ্যমে মানুষের মনোযোগ সরিয়ে ফেলতে চাইছেন ভ্লাদিমির পুতিন। কারণ প্রশাসনিক দুর্নীতি ও অর্থনীতির মন্থর গতি নিয়ে উষ্মা আছে রুশদের। এখন তাদের চোখে ফুটবলের রঙিন ঠুলি পরানোর পালা! মস্কোভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক দিমিত্রি ওরেশকিন বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ কারণেই বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টটি পুতিনের কাছে গুরুত্ববহ। এটি সফলভাবে অনুষ্ঠিত হলে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়বে। বেশির ভাগ মানুষ খেলা হিসেবে ফুটবল পছন্দ করে। বাস্তব পরিস্থিতি থেকে চোখ সরিয়ে রাখতে এর চেয়ে ভালো উপায় আর হয় না।’

খেলার মাঠে রাজনীতির অঙ্ক
বিতর্কিত আয়োজক দেশ হিসেবে রাশিয়াই প্রথম নয়। ১৯৭৮ সালে সামরিক অভ্যুত্থান সংগঠনের পর পরই আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছিল। তবে আয়োজক দেশের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা থাকার ঘটনা দুর্লভ।

মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে হবে বিশ্বকাপের ম্যাচ। এর ধারণক্ষমতা ৮০ হাজার। ছবি: এএফপি
মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে হবে বিশ্বকাপের ম্যাচ। এর ধারণক্ষমতা ৮০ হাজার। ছবি: এএফপি

ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, রুশ কোম্পানিগুলোর জন্য ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে জায়গা করে নেওয়া বেশ কষ্টকর। কারণ ২০১৪ সালে ক্রিমিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করার পর থেকে রাশিয়ার ওপর অনেক নিষেধাজ্ঞার খড়্গ ঝুলছে। গত মার্চে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন এবারের বিশ্বকাপকে ১৯৩৬ সালে হিটলারের জার্মানিতে হওয়া অলিম্পিক আয়োজনের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এই মন্তব্যের প্রতিবাদে আয়োজক দেশে বিক্ষোভও হয়েছে। এ ছাড়া সাবেক রুশ গুপ্তচর সের্গেই স্ক্রিপালকে বিষপ্রয়োগে রাশিয়ার জড়িত থাকার অভিযোগও তুলেছে যুক্তরাজ্য। তবে রাজনীতির মাঠ গরম রাখলেও, খেলার মাঠ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কোনো ঘোষণা দেয়নি থ্রি লায়নসরা।

যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতাই অর্জন করতে পারেনি। তবে ফিফার জন্য এই দেশ বড় একটি বাজার। ২০২৬ সালের বিশ্বকাপ আয়োজনের দাবিদার যুক্তরাষ্ট্র।

অনেকে বলছেন, এবারের বিশ্বকাপ টুর্নামেন্ট দিয়ে মূলত সুনাম কুড়াতে চাইছে রাশিয়া। তবে দ্বিমত পোষণ করেন দেশটির বিরোধীদলীয় নেতা দিমিত্রি গুডকভ। তিনি বলেন, ‘রুশ সরকার যদি সত্যিই বিশ্বজুড়ে নিজেদের মর্যাদা বাড়াতে চাইত, তবে সিরিয়া, ক্রিমিয়া, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন-এত কিছুতে জড়াত না। এগুলোই সুনাম নষ্ট করার জন্য যথেষ্ট।’ তাঁর মতে, বাকি সবই লোক দেখানো!

আবার ইউরোপের দেশগুলো যদি টুর্নামেন্টে বেশি ভালো করে ফেলে, তবে বিপদে পড়বে তাদের দেশের সরকার। কারণ সে ক্ষেত্রে জাতীয় দলকে সমর্থন জানানোর জন্য হলেও সরকারপ্রধানদের রাশিয়া যাওয়ার প্রসঙ্গ উঠবে। কিন্তু যে দেশের ওপর নিজেরা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, সেই দেশ সফর করতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া বিব্রতকর। এর কূটনৈতিক দিকও রয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, একবার সফর হয়ে গেলে, রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়ে অভিযোগের যৌক্তিকতাও ফিকে হয়ে যাবে। আবার রুশ কর্তৃপক্ষের এক ধরনের গ্রহণযোগ্যতাও স্বীকৃত হয়।

মস্কোর কার্নেগি সেন্টারের বিশ্লেষক আলেক্সান্ডার বোওনভ বলেন, ‘গড় ভোটাররা চান, দেশের সরকারপ্রধানেরা যেন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে দলের সমর্থনে স্টেডিয়ামে থাকেন। সুতরাং ওই সব নেতাদের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিনই হবে।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বকাপ ফুটবল রুশ অর্থনীতিতে অল্পই প্রভাব রাখবে। তবে অবকাঠামো নির্মাণ করায় লাভ হবে বেশি। রাশিয়ার সারানস্কের এই স্টেডিয়ামে হবে গ্রুপ পর্বের ম্যাচ। ছবি: রয়টার্স
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্বকাপ ফুটবল রুশ অর্থনীতিতে অল্পই প্রভাব রাখবে। তবে অবকাঠামো নির্মাণ করায় লাভ হবে বেশি। রাশিয়ার সারানস্কের এই স্টেডিয়ামে হবে গ্রুপ পর্বের ম্যাচ। ছবি: রয়টার্স


রুশ অর্থনীতি চাঙা হবে?
২০১০ সালে বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ হওয়ার টিকিট পেয়েছিল রাশিয়া। ওই সময় দেশটির জিডিপির প্রবৃদ্ধি অনেক শক্তিশালী ছিল। ওই সময় দেশটির টেকসই উন্নয়নের হার ছিল বছরে ৪ শতাংশ। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার তোড়ে এখন সেই দেশ পড়েছে মন্দার কবলে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, এ বছর দেশটির প্রবৃদ্ধির হার হবে মোটে ১ দশমিক ৭ শতাংশ।

রুশ সরকার বলছে, আসন্ন বিশ্বকাপ টুর্নামেন্ট দেশটির অর্থনীতিকে উজ্জীবিত করবে। তবে এ নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, বিশ্বকাপ ফুটবল রুশ অর্থনীতিতে অল্পই প্রভাব রাখবে। ক্রেডিট রেটিং এজেন্সিগুলোও সেই সুরেই তাল মিলিয়েছে। মুডি’স সম্প্রতি জানিয়েছে, দেশ ও অর্থনীতির আকার অনুযায়ী প্রভাবের কম-বেশি হয়। সেই হিসাবে বিশাল রুশ অর্থনীতিতে বিশ্বকাপ আয়োজনের অর্থনৈতিক প্রভাব হবে সামান্যই। বিদেশি অতিথিদের ভ্রমণ ও অন্যান্য কারণে ব্যয় বাড়লেও, তাতে জাতীয় অর্থনীতি ফুলেফেঁপে উঠবে না।

এক জরিপের বরাত দিয়ে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টে মোট খরচ হচ্ছে ১১ বিলিয়ন ডলার। তবে কিছু ব্যয়বহুল অবকাঠামোর হিসাব তা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আর বিশ্বকাপ উপলক্ষে রাশিয়ায় ২ লাখ ২০ হাজার নতুন চাকরি সৃষ্টি হয়েছে।

বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, হোটেল, টেলিকম, খাবার বিক্রি ও পরিবহন থেকে রাজস্ব আদায় খুব বেশি বাড়বে না। মাত্র এক মাসের টুর্নামেন্টে খুব বেশি পরিবর্তনের আশা করাও ঠিক না। ধারণা করা হচ্ছে, সব মিলিয়ে প্রায় ৬ লাখের মতো বিদেশি ক্রীড়ামোদী ও ৭ লাখ রুশ বিশ্বকাপের ম্যাচগুলোতে থাকবেন। মুডি’স বলছে, এতে পর্যটন খাতের উন্নতি হবে ঠিকই, কিন্তু তা হবে ক্ষণস্থায়ী।

তবে এর অন্যদিকও আছে। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, নতুন চাকরি সৃষ্টি হওয়ায় দক্ষ জনবল তৈরির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সবচেয়ে বড় যে কাজটি হয়েছে তা হলো বিশাল বিশাল অবকাঠামো নির্মাণ। এর ফলে অর্থনীতিতে কিছু স্থায়ী সম্পদ যুক্ত হয়েছে। একই সঙ্গে অবকাঠামো নির্মাণ বাবদ ব্যয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও ইতিবাচক অবদান রেখেছে। রাশিয়ার সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী আরকাজি দুভরকাভিচ তো বলেই দিয়েছেন, দেশটির যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে তার সবই বিশ্বকাপের অবদান!

ইউরেশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ইয়ারোস্লাভ লিসোভোলিক রয়টার্সকে বলেছেন, ‘প্রশ্ন হলো, যতটুকু সুযোগই সৃষ্টি হবে, রাশিয়া তা কাজে লাগাতে পারবে কি না। বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টের মধ্য দিয়ে ভালো অবকাঠামো নির্মাণ ও বিশ্বব্যাপী সুনাম কুড়ানোর সুযোগ আছে দেশটির। তা কাজে লাগানোই বড় কথা।’

পুতিনের ফুটবলপ্রীতির খবর কখনো শোনা যায়নি। তবে আগামী ১৪ জুনের উদ্বোধনী ম্যাচে তিনি মাঠে থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে। বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে নিজের ফ্যান আইডি হাতে ক্যামেরার সামনে হাস্যোজ্জ্বল ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি
পুতিনের ফুটবলপ্রীতির খবর কখনো শোনা যায়নি। তবে আগামী ১৪ জুনের উদ্বোধনী ম্যাচে তিনি মাঠে থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে। বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে নিজের ফ্যান আইডি হাতে ক্যামেরার সামনে হাস্যোজ্জ্বল ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি


সন্দেহ ও কলঙ্ক ঘুচবে?
সম্প্রতি রাশিয়ার অনেক খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে ডোপ কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছে। রুশ ফুটবলেও ছোবল মেরেছে ডোপিং। যদিও ফিফা তদন্ত শেষে জানিয়েছে, বিশ্বকাপ দলে থাকা রুশ ফুটবলাররা পাপে জড়াননি।

ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ক্রিমিয়া সংকট সত্ত্বেও ২০১৪ সালের শীতকালীন অলিম্পিকে অভাবিত সাফল্য পেয়েছিলেন পুতিন। এবার বেকায়দায় পড়েছে তাঁর দেশ। ডোপ কেলেঙ্কারিতে বিপর্যস্ত পুরো রুশ ক্রীড়াঙ্গন। অন্যদিকে রাশিয়ার বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ হওয়ার পদ্ধতি নিয়েও বিতর্ক আছে। এ নিয়ে অভিযোগ, দুর্নীতি হয়েছিল। ২০১৮ ও ২০২২ সালের আয়োজক দেশ নিয়ে তদন্তও করছে ফিফা। তবে রাশিয়াকে অভিযুক্ত করা হয়নি। তার উপায়ই ছিল না। কারণ আয়োজক দেশ বাছাইয়ের কাজে ব্যবহৃত কম্পিউটারই নাকি ধ্বংস করে ফেলা হয়েছিল!

মোদ্দা কথা, এই সব কিছুর জবাব দেওয়ার সুযোগ এবার পেয়েছেন পুতিন। তাঁর ফুটবলপ্রীতির খবর অবশ্য কখনো শোনা যায়নি। তবে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ হলে কি আর বসে থাকা যায়? আগামী ১৪ জুনের উদ্বোধনী ম্যাচে পুতিন মাঠে থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ওই ম্যাচে সৌদি আরবের মুখোমুখি হবে স্বাগতিকেরা। টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়া ৩২ দলের মধ্যে একমাত্র সৌদি আরবই র‍্যাঙ্কিংয়ে রাশিয়ার চেয়ে পিছিয়ে আছে। অর্থাৎ, মঞ্চ প্রস্তুত। এখন দেখার পালা, টুর্নামেন্টের শুরুতেই পুতিন জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারেন কি না!