পরিবারতন্ত্রের এবার মমতার ঘরে!

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

যে নেত্রী একসময় গোটা ভারতে রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন, সেই নেত্রী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরেই এবার ছোঁয়া লেগেছে পরিবারতন্ত্রের। অথচ এই মমতাই কংগ্রেসের পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে কথা বলতে ছাড়েননি। নিজের ভাই আর ভাইপো নেতা হওয়ার লড়াইয়ে অবতীর্ণ। নেতা হয়েছেনও। আবার সর্বশেষ যুক্ত হয়েছেন মমতার একেবারে ছোট ভাই বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়। 

১৯৯৮ সালে কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে এসে সেদিন পশ্চিমবঙ্গের বিরোধীদলীয় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গড়েছিলেন নতুন দল তৃণমূল কংগ্রেস। সেই ১ জানুয়ারি ১৯৯৮। এরপর কংগ্রেসকে তুলোধুনা করতে নেমেও পড়েছিলেন রাজনীতির ময়দানে মমতা। ভেঙেও দিয়েছিলেন কংগ্রেসের সাজানো বাগান। এরপর ধীরে ধীরে গড়ে তুলেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে। সেদিন মমতা কংগ্রেসের পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এবং দলের একচ্ছত্র নেত্রী। সেই তৃণমূলের কে হবেন মমতার উত্তরাধিকারী, তাই নিয়ে এত দিন রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক ছিল। অবশেষে সেই বিতর্কের অবসান ঘটিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বলেছেন, তৃণমূল কংগ্রেসের উত্তরাধিকারী হবেন দলের তরুণ সাংসদ এবং তৃণমূল যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এ প্রস্তাবের পক্ষে সবুজসংকেতও দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ সুব্রত বক্সি।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মমতার বড় ভাই অমিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছেলে। নতুন এসেছেন রাজনীতিতে। আবার এটাই মেনে নিতে পারছে না মমতার তৃতীয় ভাই কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়। কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়ও তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও তেমন সুযোগ-সুবিধা আদায় করে নিতে পারেননি তিনি। ফলে ক্ষোভ রয়েছে তাঁর ভেতর। তাই তো এই কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংগঠন ‘বিবেক’ আয়োজিত সাম্প্রতিক এক অনুষ্ঠানে তাঁর সমর্থকেরা একটি লিফলেট ছেড়ে সমালোচনা করেছেন মমতার পরিবারতন্ত্রমুখী হওয়ার। বলেছেন, ’পরিবারতন্ত্রের হাতে বিপন্ন গণতন্ত্র’। লিফলেটে আরও বলা হয়েছে, ‘গতকালও যাঁকে রাজনীতির ময়দানে দেখা যায়নি, পরিবারতন্ত্রের হাত ধরে আজ সে রাজনীতির শীর্ষস্থানে চলে যাচ্ছে।’ এ কথা দ্বারা যে অভিষেককে ইঙ্গিত করা হয়েছে, সেটা বুঝতে আর কারও অসুবিধা হয়নি।

সংবাদমাধ্যম সূত্রে আরও জানা গেছে, কাকা কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্ক সুখকর নয়। আর এরই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এই পরিবারতন্ত্র ইস্যু তুলে।
আর পরিবারতন্ত্রের সর্বশেষ ইস্যু এবার উঠে এসেছে রাজনীতির অঙ্গনে। উঠে এসেছে মমতার ছোট ভাই বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘিরে। বাবুন নিজেও একজন সক্রিয় তৃণমূল কর্মী। বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজে তিনি নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন। বিভিন্ন সময় আয়োজন করছেন নানা সামাজিক অনুষ্ঠানের। তবে তাঁর এসব অনুষ্ঠানের ক্ষেত্র কলকাতার হুগলি নদীর অপর পাড় হাওড়াতে। সেখানেই তিনি এখন তাঁর রাজনৈতিক এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডের বিস্তৃতি ঘটিয়েছেন। নিয়মিত করে যাচ্ছেন নানা কাজ, সেই রক্তদান শিবির, ক্রিকেট-ফুটবল-বক্সিং টুর্নামেন্টসহ এলাকার নানা সামাজিক অনুষ্ঠান। গত সোমবার তিনি হাওড়ায় আয়োজন করেছিলেন ইফতার অনুষ্ঠানের। প্রচুর মানুষের উপস্থিতি ছিল সেই ইফতার অনুষ্ঠানে। এসেছিলেন হাওড়া পৌরসভার মেয়র রথীন চক্রবর্তী, উত্তর হাওড়ার বিধায়ক তথা রাজ্যের ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী, সাবেক ক্রিকেটার লক্ষ্মীরতন শুক্লা, বিধায়ক জটু লাহিড়িসহ তৃণমূলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা। স্থানীয় বিধায়ক থেকে রাজ্যের মন্ত্রীরাও। শুধু অনুপস্থিত ছিলেন হাওড়ার সাংসদ ও বিশিষ্ট ফুটবলার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যাত ক্রিকেটার সৌরভ গাঙ্গুলীও।

এ ঘটনার পর ছড়িয়ে পড়ে, তবে কি হাওড়ার লোকসভা আসনে এবার প্রার্থী হতে চলেছেন মমতার ছোট ভাই বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়? এদিন বাবুনও বলেছেন, তিনি সব সময় মানুষের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন। দল যদি তাঁকে সাংসদের গুরুদায়িত্ব দেয়, তবে তিনি সেটা মাথা পেতে নেবেন। শোনা যাচ্ছে, দলের একাংশও চাইছে, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে হাওড়া কেন্দ্রে এবার দুই বছরের সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়কে পরিবর্তন করে সেখানে বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়কে আনতে। যদিও প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ’অমি এখনো হাওড়ার সাংসদ। কাজ করে যাচ্ছি মানুষকে সঙ্গে নিয়ে। কোনো মন্তব্য করব না। নেত্রী যা সিদ্ধান্ত নেবেন, তা-ই মেনে নেব।’