ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে ফেরি ডুবিতে এখনো নিখোঁজ ১৯২জন

তোবা লেকের গভীরতা ১৫০০ ফুট। সিমালুনগুন, উত্তর সুমাত্রা, ইন্দোনেশিয়া, ২০ জুন। ছবি: রয়টার্স
তোবা লেকের গভীরতা ১৫০০ ফুট। সিমালুনগুন, উত্তর সুমাত্রা, ইন্দোনেশিয়া, ২০ জুন। ছবি: রয়টার্স

ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপের তোবা লেকে কাঠের ফেরি ডুবে যাওয়ার ঘটনায় দুদিন পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এখনো খোঁজ মেলেনি ১৯২জনের। আশঙ্কা করা হচ্ছে হয়তো আর বেঁচে নেই তাঁরা। এরই মধ্যে উদ্ধারকাজে ডুবুরির পাশাপাশি পানির নিচে ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে।

এই লেকটি আগ্নেয়গিরি থেকে উৎপন্ন বিশ্বের গভীরতম লেকগুলোর একটি। এর গভীরতা ১৫০০ ফুট।

গত সোমবার বৈরী আবহাওয়ার কবলে পড়ে ফেরিটি ডুবে যায়। ঈদের ছুটিতে লোকজন লেকটিতে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। তবে ফেরিতে ঠিক কতজন ছিল তা নিশ্চিত করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।

এখন পর্যন্ত চারজনের মরদেহ ও ১৮জনকে জীবিত উদ্ধার করা গেছে।

লেকে কাউকে ভাসমান অবস্থায় দেখা যায় কি না তা দুরবিন দিয়ে দেখছেন এক উদ্ধারকর্মী। সিমালুনগুন, উত্তর সুমাত্রা, ইন্দোনেশিয়া, ২০ জুন। ছবি: রয়টার্স
লেকে কাউকে ভাসমান অবস্থায় দেখা যায় কি না তা দুরবিন দিয়ে দেখছেন এক উদ্ধারকর্মী। সিমালুনগুন, উত্তর সুমাত্রা, ইন্দোনেশিয়া, ২০ জুন। ছবি: রয়টার্স

টিকিটের ব্যবস্থা না থাকায় বোঝা যাচ্ছে না আদৌ কে কে ছিল ফেরিতে। তবে নিখোঁজদের পরিবারের স্বজনেরা খবরের আশায় লেকের পাড়ে প্রহর গুনছেন।

দেশটির পরিবহন মন্ত্রী বুদি কারয়াআ রাজধানী জাকার্তায় এক সংবাদ বলেন, ফেরিটির ধারণ ক্ষমতা ছিল ৪৩ জনের। আর লাইফ জ্যাকেট থাকার কথা ৪৫টি। নিখোঁজদের তালিকা দেখে মনে হচ্ছে এতে নির্ধারিত সংখ্যার চেয়ে পাঁচ গুন বেশি যাত্রী ছিল। এমনকি এটিতে অনেকগুলো মোটরসাইকেলও ছিল। তিনি বলেন, ‘এখানে অনেক ভুল ছিল। এই নৌযানটির চলাচলের অনুমতি ছিল না।’

স্বজনকে জীবিত ফিরে পেতে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছেন এক নারী।  সিমালুনগুন, উত্তর সুমাত্রা, ইন্দোনেশিয়া, ২০ জুন। ছবি: রয়টার্স
স্বজনকে জীবিত ফিরে পেতে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছেন এক নারী। সিমালুনগুন, উত্তর সুমাত্রা, ইন্দোনেশিয়া, ২০ জুন। ছবি: রয়টার্স

তল্লাশি ও উদ্ধারকারী এক কর্মকর্তা বুদিয়াউন বলেন, দুর্ঘটনার পর থেকেই আমরা সমন্বিতভাবে কাজ করে যাচ্ছি। নাবিকসহ ২৫ জন ডুবুরি উদ্ধারকাজে অংশ নিয়েছে। এই কাজে পানির নিচে ব্যবহার করা হচ্ছে ড্রোন। এটি ১২৪৭ ফুট গভীর পর্যন্ত যেতে পারে।

জাতীয় অনুসন্ধান ও উদ্ধার সংস্থার প্রধান মুহাম্মদ সাইয়াগি বলেন, প্রথম দিন উদ্ধারকারী দলটি উদ্ধার অভিযানে নামলেও খারাপ আবহাওয়ার কারণে খুব ভালো দেখা যাচ্ছিল না। ১৬৪ ফুট গভীর পর্যন্ত তারা নেমেছিল। কিন্তু প্রচণ্ড ঠান্ডায় তাদের ওঠে আসতে হয়।

দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে তথ্য কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সেখানে বেঁচে ফেরা লোকজন, নিখোঁজ ও মৃতদের নামের তালিকা রাখা হয়েছে।  সিমালুনগুন, উত্তর সুমাত্রা, ইন্দোনেশিয়া, ২০ জুন। ছবি: রয়টার্স
দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে তথ্য কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সেখানে বেঁচে ফেরা লোকজন, নিখোঁজ ও মৃতদের নামের তালিকা রাখা হয়েছে। সিমালুনগুন, উত্তর সুমাত্রা, ইন্দোনেশিয়া, ২০ জুন। ছবি: রয়টার্স

বেঁচে ফেরা যাত্রীদের একজন রিকো শাহপুত্রার বরাত দিয়ে নিউজ ওয়েবসাইট কম্পাস জানায়, উঁচু ঢেউয়ের কবলে ফেরিটি পড়ার পর লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে ফেরটি কাত হয়ে ডুবতে থাকে। রিকো জানায়, তাঁকে উদ্ধারের আগে তিনি মোটরসাইকেলের হেলমেটের ওপর ভর করে প্রায় এক ঘণ্টা লেকের মাঝখানে ভেসে থাকেন।

স্থানীয় দুর্যোগ প্রশমন সংস্থার প্রধান রিয়াদিল লুবিস বলেন, ‘আমরা একটি তথ্য কেন্দ্র খুলেছি। সেখানে বেঁচে ফেরা লোকজন, নিখোঁজ ও মৃতদের নামের তালিকা রাখা হয়েছে।’ তবে রাতের বেলা উদ্ধারকাজ বন্ধ রাখায় নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনদের অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বলে রয়টার্সের খবরে বলা হয়।

দুর্ঘটনার শিকার একজনকে উদ্ধার করে নিয়ে আসছে উদ্ধারকর্মীরা।  সিমালুনগুন, উত্তর সুমাত্রা, ইন্দোনেশিয়া, ২০ জুন। ছবি: রয়টার্স
দুর্ঘটনার শিকার একজনকে উদ্ধার করে নিয়ে আসছে উদ্ধারকর্মীরা। সিমালুনগুন, উত্তর সুমাত্রা, ইন্দোনেশিয়া, ২০ জুন। ছবি: রয়টার্স

নিখোঁজ ভাইয়ের বাগাস প্রামা অনন্তের অপেক্ষায় থাকা ফজর আলমসিয়া পুত্রা বিবিসিকে বলেন, ‘আল্লাহর পক্ষ থেকে এটি আমাদের জন্য এক পরীক্ষা। বাগাস এই লেকের মধ্যবর্তী বিশাল দ্বীপ সামোসারে ছুটি কাটাচ্ছিলেন। আল্লাহই জানেন সে বেঁচে আছে কি না। ঘটনার সময় সে ফেরির ভেতরে ছিল। তাঁর এক বন্ধু বারান্দায় ছিল। তাই সে লাফিয়ে পানিতে পড়ে যায়। পরে অন্যদের সহায়তায় সে বেঁচে ফিরে।

ইয়ান্তি সামসুদ্দিন নামের আরেক নারীও তাঁর ভাইয়ের অপেক্ষায় আছেন। তিন বলেন, ‘আশায় আছি ভাই জীবিত ফিরবে। না হলে অন্তত তাঁর লাশটিতো পাব।’

উদ্ধারকর্মীদের রাবার বোট ব্যবহার করছেন। সিমালুনগুন, উত্তর সুমাত্রা, ইন্দোনেশিয়া, ২০ জুন। ছবি: রয়টার্স
উদ্ধারকর্মীদের রাবার বোট ব্যবহার করছেন। সিমালুনগুন, উত্তর সুমাত্রা, ইন্দোনেশিয়া, ২০ জুন। ছবি: রয়টার্স

দেশটির সরকারি বিধি অনুযায়ী কোনো নৌযান মাত্রাতিরিক্ত যাত্রী বহন করতে পারবে না। অবশ্যই প্রত্যেক যাত্রীর জন্য লাইফ জ্যাকেট থাকতে হবে।
ন্যাশনাল কমিটি ফর ট্রান্সফরমেশন সেফটি জানায়, ইন্দোনেশিয়ায় ৪০ শতাংশ নৌ দুর্ঘটনা ঘটে মানুষের ভুলের কারণ। আর খারাপ আবহাওয়ার কারণে ঘটে মাত্র ১২ শতাংশ।
এই লেক এলাকায় আবহাওয়া খুব দ্রুত পরিবর্তন হয়। ১৯৯৭ সালে এমন এক দুর্ঘটনায় ৮০ জন নিহত হয়েছিলেন।

লেকের পাড়ে নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনদের আহাজারি।  সিমালুনগুন, উত্তর সুমাত্রা, ইন্দোনেশিয়া, ২০ জুন। ছবি: রয়টার্স
লেকের পাড়ে নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনদের আহাজারি। সিমালুনগুন, উত্তর সুমাত্রা, ইন্দোনেশিয়া, ২০ জুন। ছবি: রয়টার্স