ভারতের পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদের সতর্ক করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

গতকাল বৃহস্পতিবার কলকাতার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূলের কোর কমিটির বৈঠকে দলকে সতর্ক করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
গতকাল বৃহস্পতিবার কলকাতার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূলের কোর কমিটির বৈঠকে দলকে সতর্ক করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর একদণ্ড শান্তিতে নেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের মধ্যে গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব, পঞ্চায়েত নির্বাচনে জঙ্গলমহলে বিপর্যয়, বিজেপির রাজ্যব্যাপী সংগঠন গড়ার নামে নানা কৌশলের আশ্রয় নেওয়া ইত্যাদি কারণে মমতা এখন জেরবার হচ্ছেন।

এ কারণেই হয়তো গতকাল বৃহস্পতিবার কলকাতার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূলের কোর কমিটির বৈঠকে দলকে নতুন দাওয়াই দিলেন তিনি। দলের নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে মমতা বললেন, ‘দলে কোনো গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব চলবে না। নিজেকে দলের চেয়ে বড় ভাববেন না। একসঙ্গে কাজ করতে হবে সবার। মাথা গরম করা চলবে না। মাথা ঠান্ডা রেখে দল চালাতে হবে, দলের কাজ করতে হবে। দলের নামে কোনো চাঁদাবাজি চলবে না। কাজ করতে না পারলে দল ছেড়ে বাড়িতে বসে থাকুন। নতুবা দল একদম ছেড়ে দিন।’

মমতা আরও বললেন, ‘বিজেপি উগ্রপন্থী সংগঠন। তৃণমূল বিজেপির মতো মিলিট্যান্ট অর্গানাইজেশন (জঙ্গি সংগঠন) নয়। বিজেপির উগ্রতা আছে। ধর্মীয় বিদ্বেষ আছে। কাউকেই পছন্দ করে না। না মুসলমান, না খ্রিষ্টান, না শিখ। হিন্দুদের মধ্যেও বিভেদ তৈরি করছে বিজেপি।’

গতকাল কলকাতার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে আয়োজিত তৃণমূলের বর্ধিত সভায় যোগ দিয়েছিলেন রাজ্যের সব জেলার তৃণমূলের নেতা-কর্মীসহ পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের বিজয়ী প্রার্থীরা। মন্ত্রী, সাংসদ ও বিধায়কেরাও উপস্থিত ছিলেন।
সভায় মমতা দলের নেতা-কর্মীর উদ্দেশে আরও বলেন, পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলের ভেতর কিছু এলাকায় গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের কারণে ফল খারাপ হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বিজেপি। তাই পুরোনোদের সঙ্গে নিয়ে ফের এগোতে হবে দলকে। দলে চলবে না কোনো গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব। ভালো যাঁদের লাগবে না তাঁরা দল ছেড়ে দিয়ে বাড়িতে বসে থাকুন। দলে থাকলে এসব চলবে না। দলের মধ্যে যুব তৃণমূল বনাম মূল তৃণমূল, এই দ্বন্দ্ব চলবে না। দলের মধ্যে দুটি সমান্তরাল সংগঠন চালানো যাবে না। পাশাপাশি দুটি পার্টি অফিস খুলে শক্তি প্রদর্শনের প্রতিযোগিতা চলবে না।

মমতা বলেন, দলের শ্রমিক সংগঠনের মধ্যেও কোনো বিভেদ চলবে না। শ্রমিক সংগঠনের নেতা হলেন সাংসদ দোলা সেন। তাঁকে সহযোগিতা করবেন শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক। তাঁদের কথায় চলতে হবে শ্রমিক সংগঠনকে। শ্রমিক সংগঠনের তহবিলের অন্তত ৭৫ শতাংশ অর্থ দিতে হবে দলীয় তহবিলে। আর ২৫ শতাংশ অর্থ খরচ করতে পারবে নিজেদের কাজে।

জঙ্গল মহলের ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং নদীয়া জেলার মতো যেসব এলাকায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল ভালো ফল করেনি, সেখানকার নেতাদের তীব্র ভর্ৎসনা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি নেতা-কর্মীদের তোলাবাজিরও তীব্র নিন্দা করেন। উলবেড়িয়া পৌরসভার উপপ্রধানের তোলাবাজির প্রসঙ্গ তুলে ধরেন তিনি। সাত দিনের মধ্যে তিনি (উপপ্রধান) সংশোধিত না হলে তাঁকে দল থেকে সরিয়ে দেওয়ারও নির্দেশ দেন। ছাত্রনেতাদের বলেন, এখন কলেজে ভর্তির মৌসুম শুরু হয়েছে, ভর্তির সময়ে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে ভর্তির জন্য কোনো চাঁদা নেওয়া চলবে না।

প্রসঙ্গত, সভায় তৃণমূলের উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে মমতার রোষের মুখে পড়তে হয়। তাঁকে একহাত নেন মমতা। মমতা তাঁর উদ্দেশে বলেন, ‘এত মাথা গরম করবেন না। মাথা ঠান্ডা করুন। নেতা-মন্ত্রী হলে সবাইকে নিয়ে চলতে হয়।’
মন্ত্রী রবীন্দ্র ঘোষ পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় নাটা বাড়িতে একটি ভোটকেন্দ্রে বিজেপির এক এজেন্টের সঙ্গে কথা-কাটাকাটির সময় তাঁকে চড় মেরেছিলেন। এ নিয়ে সেদিন রাজনীতি উত্তপ্ত হয়েছিল। এ ছাড়া গত মঙ্গলবার এলাকার দলীয় সাংসদ পার্থপ্রতীম রায়কে সরাসরি ‘অযোগ্য’ এবং ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলে আক্রমণ করেছিলেন তিনি। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘দল সিদ্ধান্ত নিক, দুর্নীতির সঙ্গে থাকবে নাকি থাকবে না? তবে আমি কোনো নীতিহীনের সঙ্গে থাকব না। দল আমার পেশা নয়, নেশা। এমন নয় আমার খাবার অভাব আছে।’ এই মন্তব্যের জবাবেই সভায় এই ইঙ্গিত দেন মমতা।

সভায় মমতা বিজেপিকে আক্রমণ করে বলেন, বিজেপি কার্যত ’উগ্রপন্থী সংগঠন’। তিনি বলেন, ‘ওদের কেউ বলছে, এনকাউন্টার করবে। কেউ বলছে, গুলি চালাব। কেউ বলছে, বোমা মারব। কেউ বলছে, শেষ করে দেব। আমি বলি, আয় না, কত ক্ষমতা দেখা না। দেখেছিস তো পঞ্চায়েতে। গুলি-বন্দুক দিল্লিতে আছ বলে। কাল যখন থাকবে না, তখন কোথায় যাবে বাপু?’