উত্তর কোরিয়ায় পরমাণুকেন্দ্রের উন্নয়ন অব্যাহত

ইয়ংবিয়ন নিউক্লিয়ার সায়েন্টিফিক রিসার্চ সেন্টারে স্যাটেলাইট ইমেজ। ছবি: এয়ারবাস ডিফেন্স অ্যান্ড স্পেস এবং ৩৮ নর্থ
ইয়ংবিয়ন নিউক্লিয়ার সায়েন্টিফিক রিসার্চ সেন্টারে স্যাটেলাইট ইমেজ। ছবি: এয়ারবাস ডিফেন্স অ্যান্ড স্পেস এবং ৩৮ নর্থ

কোরীয় উপদ্বীপকে পুরোপুরি পরমাণু নিরস্ত্রীকরণে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনের সাম্প্রতিক প্রতিশ্রুতির পরও দেশটি তাদের পরমাণু গবেষণাকেন্দ্রের উন্নয়নের কাজ ‘দ্রুততার’ সঙ্গে চালিয়ে যাচ্ছে। গড়ে তুলছে নতুন অবকাঠামো।

নতুন বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট ইমেজে এমনটা দেখা গেছে বলে পিয়ংইয়ংভিত্তিক ৩৮ নর্থ নামের উত্তর কোরিয়ার নামকরা পর্যবেক্ষণ গ্রুপের প্রকাশিত এক বিশ্লেষণে এমনটা বলা হয়। জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির যুক্তরাষ্ট্র-কোরিয়া ইনস্টিটিউটের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত।

প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, সম্প্রতি স্যাটেলাইটের ছবিতে দেখা গেছে, বর্তমানে উত্তর কোরিয়ার প্রধান ইয়ংবিয়ন পরমাণুকেন্দ্রের কার্যক্রম শুধু অব্যাহতই নেই, নতুন করে অবকাঠামো নির্মাণের কাজও চলছে।

প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, ‘২১ জুন বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবিতে ইয়ংবিয়ন নিউক্লিয়ার সায়েন্টিফিক রিসার্চ সেন্টারে অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয়টিই নির্দেশ করে। এটা দ্রুতগতিতে চলছে। উত্তর কোরিয়ার এই কেন্দ্রের পুরোনো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ চুল্লি এবং নতুন করে স্থাপিত কয়েকটি চুল্লির কার্যক্রমও অব্যাহত রয়েছে।’

৩৮ নর্থের এই বিশ্লেষণের বিষয়ে সিএনএনের পক্ষ থেকে ইউনিফিকেশন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এই প্রতিবেদনের সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি। বলেছে, তারা বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও গতকাল বুধবার বলেছেন, উত্তর কোরিয়া এখনো পারমাণবিক হুমকি। তবে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের করা বক্তব্যের পক্ষে সাফাই গেয়েছেন।

গত শুক্রবার মার্কিন কংগ্রেসে পাঠানো এক নথিতে ট্রাম্প উত্তর কোরিয়াকে এখনো হুমকি বলে উল্লেখ করেন। ট্রাম্প ১২ জুন সিঙ্গাপুরে কিমের সঙ্গে ঐতিহাসিক বৈঠক করেন। পরের দিন ওয়াশিংটনে ফিরে টুইট করেন, ‘উত্তর কোরিয়ার তরফ থেকে আর কোনো পারমাণবিক হুমকি নেই। এবার সবাই শান্তিতে ঘুমান।’ অথচ সপ্তাহ পার হতে না হতেই নিজের অবস্থান বদলে ফেলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

ট্রাম্পের এই বক্তব্যের বিষয়ে পম্পে বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে প্রেসিডেন্ট এখানে হুমকি কমে যাওয়ার বিষয়টিকে বুঝিয়েছেন। আমি মনে করি না এ নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকা উচিত। আমরা উত্তেজনার পর্যায়টিকে অনেক কমিয়ে এনেছি। আমি মনে করি, তাঁর এই বক্তব্য ঠিক আছে। এই মুহূর্তে যা বলছি, তা হলো আমরা ঝুঁকি অনেকটা কমিয়েছি।’

সিঙ্গাপুর বৈঠকে কোরীয় উপদ্বীপকে সম্পূর্ণ পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত করতে সম্মত হন ট্রাম্প ও কিম। তবে কখন, কীভাবে কোরীয় উপদ্বীপ সম্পূর্ণ পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত হবে, সে ব্যাপারে তাঁদের যৌথ ঘোষণায় কিছু উল্লেখ ছিল না। তাই এ ব্যাপারে একধরনের সংশয় রয়েই গেছে।

নতুন ইমেজের বিষয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম মেটিস বলেন, এ থেকে মনে হচ্ছে, মধ্যস্থতাকারীরা আলোচনার পরবর্তী ধাপ নিয়ে আলাপে থাকা অবস্থায় পিয়ংইয়ং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।

স্টিমসন সেন্টারের সিনিয়র ফেলো এবং ৩৮ নর্থের পরিচালক জোয়েল উইট বলেন, ‘সম্মেলনে করা প্রতিশ্রুতি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেখানে কোনো লিখিত চুক্তি হয়নি। তাই উত্তর কোরিয়াকে কী করতে পারে, তা এখানে নেই। তাই আমি তাদের পরমাণু অবকাঠামোর উন্নয়নে মোটেই অবাক হচ্ছি না।’

সম্প্রতি কয়েক মাস ধরে উত্তর কোরিয়ার কোনো ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করেনি। এ বিষয়টিকে ট্রাম্প পরমাণু নিরস্ত্রীকরণে অগ্রগতির চিহ্ন হিসেবে মনে করছেন। কিন্তু ইয়ংবিয়ন পরমাণুকেন্দ্রের মতো পরমাণুবিষয়ক কর্মকাণ্ড পরিচালনা প্রমাণ করে, যুক্তরাষ্ট্র এখনো উত্তর কোরিয়াকে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ থেকে সরিয়ে আনতে পারেনি।