বিকেলে দলিতের বাড়িতে অমিত শাহ, পরদিন তাঁরা তৃণমূলে

গত বছর পশ্চিমবঙ্গে এসে নকশালবাড়িতে এক দলিত দিনমজুরের বাড়িতে আতিথ্য গ্রহণ করেছিলেন অমিত শাহ। ছবি: সংগৃহীত
গত বছর পশ্চিমবঙ্গে এসে নকশালবাড়িতে এক দলিত দিনমজুরের বাড়িতে আতিথ্য গ্রহণ করেছিলেন অমিত শাহ। ছবি: সংগৃহীত

এ যেন ২০১৭ সালের ঘটনার পুনরাবৃত্তি। ২০১৭ সালের এপ্রিলে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ তিন দিনের সফরে পশ্চিমবঙ্গ এসেছিলেন। ২৫ এপ্রিল তিনি গিয়েছিলেন রাজ্যের দার্জিলিং জেলার নকশালবাড়িতে। এখানেই সেদিন এক দলিত দিনমজুরের বাড়িতে আতিথ্য গ্রহণ করেছিলেন। সেখানে তিনি মধ্যাহ্নভোজনও সারেন। খান নিরামিষ খাবার। ভাত, ডাল, সবজি, পাঁপড়, চাটনি ইত্যাদি। পরিবেশন করেন ওই দলিত গ্রামবাসী রাজু মাহালির স্ত্রী গীতা মাহালি। সেদিন সেই রাজু মাহালির বাড়িতে একই সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজন সারেন বিজেপির পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষসহ অন্য নেতারাও।

পরের দিন ২৬ এপ্রিল সেই রাজু ও গীতা মাহালি যোগ দেন তৃণমূলে। নকশালবাড়ির তৃণমূল অফিসে গিয়ে তাঁরা দার্জিলিং জেলার সভাপতি গৌতম দেবের হাত ধরে সেদিন তৃণমূলের পতাকা হাতে নিয়ে তৃণমূলে যোগ দেন।

এবারও একই ঘটনা ঘটেছে পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়ায়। দুই দিনের সফরে গত বুধবার পশ্চিমবঙ্গে আসেন অমিত শাহ। গত বৃহস্পতিবার তিনি ছুটে গিয়েছিলেন পুরুলিয়ার লাগদা গ্রামে। এখানেও তিনি দুই দলিত পরিবারের সদস্য সঞ্জয় রাজোয়াড়, শিশুবালা রাজোয়াড়, ফুচু রাজোয়াড় ও অষ্টমী রাজোয়াড়ের বাড়িতে যান। উঠোনে দাঁড়ান। কথা বলেন তাঁদের সঙ্গে। অমিত শাহকে পেয়ে এই দুই পরিবার আবেগে আপ্লুত হয়।

গতকাল শুক্রবার এই দুই পরিবারের চার সদস্য কলকাতায় এসে যোগ দেন তৃণমূলে। তৃণমূল নেতাদের হাত থেকে তৃণমূলের পতাকা হাতে নিয়ে তাঁরা যোগ দেন তৃণমূলে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল নেতা ও রাজ্যের সাবেক মন্ত্রী মদন মিত্র এবং সাংসদ শান্তনু সেন। তাঁরাই এই চার দলিত গ্রামবাসীর হাতে তৃণমূলের পতাকা তুলে দেন। এ সময় মদন মিত্র বলেন, ‘অমিত শাহের ভয়ে পুরুলিয়া ছেড়ে এঁরা পালিয়ে এসেছেন কলকাতায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে তাঁরা আশ্রয় চাইছেন।’ আর এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপির পুরুলিয়া জেলা সভাপতি বলেছেন, ‘পুলিশ দিয়ে ভয় দেখিয়ে তৃণমূলের পতাকা হাতে নিতে বাধ্য করা হয়েছে ওঁদের।’

পুরুলিয়ার চার দলিত সদস্যের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে তৃণমূলের দলীয় পতাকা। ছবি: ভাস্কর মুখার্জী
পুরুলিয়ার চার দলিত সদস্যের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে তৃণমূলের দলীয় পতাকা। ছবি: ভাস্কর মুখার্জী

আর এই চার দলিত গ্রামবাসীকে তৃণমূলে যোগদান করার জন্য মূল উদ্যোগ নেন তৃণমূল যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গতকাল বিকেলে অভিষেকের কলকাতার কালীঘাট এলাকার পুরোনো বাড়ির সামনে এক সংবাদ সম্মেলন করে এই চার দলিত গ্রামবাসীর হাতে তুলে দেওয়া হয় তৃণমূলের পতাকা। এ সময় অবশ্য উপস্থিত ছিলেন না অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

এদিন মদন মিত্র আরও বলেছেন, ‘বিজেপির কাছে তাঁরা এতই ভয় পেয়েছেন যে এই দুটি পরিবার বিজেপির হাত থেকে বাঁচতে কলকাতায় চলে এসেছেন মমতার কাছে।’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘এ রকম ঘটনা তৃণমূল আগেও ঘটিয়েছে। পুলিশ প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে তৃণমূল এ রকম ঘটনা ঘটিয়েছে। এবার এই চারজনকে কলকাতা পর্যন্ত নিয়ে গেছে তৃণমূল।’ অন্যদিকে তৃণমূলের পুরুলিয়া জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী বলেছেন, ‘তৃণমূল নামে আর কোনো দল এখন পুরুলিয়ায় নেই। তৃণমূল নামে যেটা রয়েছে, সেটা একটা ক্লাব। সেখানে রয়েছে সমাজবিরোধীদের আড্ডা। সেই সমাজবিরোধীরা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ভয় দেখিয়ে এসব কাজ করছে।’ যদিও এই ঘটনার পর গতবারের মতো এবারও বিজেপি চরম অস্বস্তিতে পড়েছে।