নেলসন ম্যান্ডেলার সন্তান কতজন?

ম্যান্ডেলার জন্মদিন উদযাপনে তাঁকে ঘিরে নাতি-নাতনিদের উল্লাস। দক্ষিণ আফ্রিকার কুনুতে ম্যান্ডেলার নিজ বাড়িতে। ১৮ জুলাই, ২০০৮। ছবি: এএফপি
ম্যান্ডেলার জন্মদিন উদযাপনে তাঁকে ঘিরে নাতি-নাতনিদের উল্লাস। দক্ষিণ আফ্রিকার কুনুতে ম্যান্ডেলার নিজ বাড়িতে। ১৮ জুলাই, ২০০৮। ছবি: এএফপি
>বর্ণবাদবিরোধী অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার জন্মশতর্বষ আজ। দক্ষিণ আফ্রিকায় সবাইকে যখন বলা হচ্ছে এই মহান নেতার উত্তরাধিকারী হওয়ার চেষ্টা করতে তখন সেখানে তাঁর নিজের সন্তানেরা কে কী অবস্থায় তা নিয়ে এক প্রতিবেদন করেছে দ্য সাউথ আফ্রিকান ডটকম।

নেলসন ম্যান্ডেলা তিনটি বিয়ে করেছিলেন। ছয় সন্তান। ১৯৪৪ সালে প্রথম বিয়ে করেন ইভলিন মেজকে। এই দম্পতির ঘরে ছিল চার সন্তান। প্রথম সন্তান থেমবি ১৯৬৯ সালে ২৪ বছর বয়সে এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। দ্বিতীয় সন্তান মাকাজিউয়ে ১৯৪৮ সালে মাত্র তিন মাস বয়সে মারা যায়। আর তৃতীয় সন্তান মাকগাথো ২০০৫ সালে ৫৫ বছর বয়সে এইচআইভি/এইডস-সংশ্লিষ্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। ম্যান্ডেলার এই ঘরের একমাত্র জীবিত সন্তান মাকি মাকাজিউয়ে (৬৪)। ১৯৫৮ সালে ম্যান্ডেলা-ইভলিন দম্পতির বিচ্ছেদ হয়।
১৯৫৮ সালের জুনে নেলসন ম্যান্ডেলা বিয়ে করেন উইনি মাদিকিজেলাকে। এই ঘরে দুই মেয়ে। জেনানি (৫৯) ও জিন্দজি (৫৮)। উইনির সঙ্গে ম্যান্ডেলার বিচ্ছেদ হয় ১৯৯৬ সালে।
১৯৮০ সালে ম্যান্ডেলা বিয়ে করেন গ্রাসা ম্যাশেলকে। গ্রাসা মোজাম্বিকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সামোরা ম্যাশেলের সাবেক স্ত্রী।

ম্যান্ডেলা পরিবারে যুক্ত হয়েছে সব মিলিয়ে ১৭ নাতি-নাতনি। নাতি-নাতনিদের আবার ১৯টি সন্তান রয়েছে। ২০১৭ সালে তাঁর নাতির ঘরে নাতির জন্ম হয়।

৪০ বছর বয়সে আইন ডিগ্রি পেয়েছিলেন মাকগাথো
কথায় আছে না হওয়ার চেয়ে দেরিতে হলেও ভালো। মাকগাথোকে স্কুল ডিঙ্গাতে বেশ কষ্ট করতে হয়েছে। মেট্রিক পরীক্ষা পাস করতে হয়েছে কয়েক দফায়। বাবার অনুরোধ ছিল পড়াশোনা করতেই হবে। কিন্তু শহুরে জীবনটাই তাঁকে আকর্ষণ করত বেশি। ১৯৭৯ সালে ম্যান্ডেলা লিখেছিলেন, মাকগাথো স্কুলে প্রবেশ করলে আমি আমার অবস্থান থেকে সব ধরনের সাহায্য করব। কিন্তু এর আগে কখনো না।’ বাবার সে কথা মাকগাথোর কানে প্রবেশ করতে সময় লাগল ১০ বছর। আইনজীবী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে পড়েন তিনি। সে লক্ষ্যে আদাজল খেয়ে নামেন। এমনকি পরীক্ষার কারণে তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর বাবার শপথ অনুষ্ঠানে হাজির হননি। অবশেষে তিনি ৪০ বছর বয়সে আইন বিষয়ে সনদ অর্জন করতে সক্ষম হন।

ব্যবসায়ী হিসেবে সফল মাকি মাকাজিউয়ে

মাকি মাকাজিউয়ের ব্যবসায়ী হিসেবে বায়োডাটা খুব ভারী। তিনি নেসলে এসএ-এর পরিচালক ও উইটস ইউনিভার্সিটির উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ক্যারিয়ারে যেমন তাঁর অসাধারণ সাফল্য তেমনি বাবার মতো সৎ জীবন যাপন করেছেন। দ্য ওমেন ওয়ার্কিং টুগেদার সংস্থা ২০০৭ সালে তাঁর হাতে তুলে দিয়েছে দ্য ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ওমেন অব দ্য ইয়ার অ্যাওয়ার্ড পান। কাজের প্রতি একনিষ্ঠতা ও বছরের পর বছরের কঠোর পরিশ্রম তাঁকে এনে দিয়েছে সাফল্য। পেয়েছেন ফুলব্রাইট ডিসটিনগুইসড ফেলোশিপ অ্যাওয়ার্ড।

 বাবার পথ ধরে জেনানি

পরিবারে কূটনৈতিক রক্তের ধারা ধরে রেখেছেন জেনানি। তিনি পড়াশোনা করেন আমেরিকার বস্টন ইউনিভার্সিটিতে। সেখানে তাঁর দেখা হয় সোয়াজিল্যান্ডের প্রিন্স থুমবুমুজি লামিনির সঙ্গে। দুজনের মধ্যে গড়ে ওঠে প্রণয়ের সম্পর্ক। সেখান থেকে বিয়ে। বড় বোনের মতো সফল হওয়ার পথ অনুসরণ করে জেনানি সিদ্ধান্ত নেন তাঁর পরিবার যে কারণে বিখ্যাত সেখানেই তিনি পা রাখবেন। ২০১২ সালে তিনি আর্জেন্টিনায় সাউথ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূত হিসেবে যোগ দেন। এর মধ্য দিয়ে মাদিবার কোনো সন্তান প্রথম বিশ্বরাজনীতিতে যুক্ত হলো। দক্ষিণ আমেরিকার সেই দেশে সফলতার সঙ্গে পাঁচ বছর কাটানোর পর বর্তমানে তিনি মরিসাসের হাইকমিশনার।

জিন্দজি ছিলেন যোগ্য ফার্স্ট লেডি

ম্যান্ডেলা পরিবারের চলার পথ কখনোই খুব সহজ ছিল না। ম্যান্ডেলা যখন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেবেন তখন তাঁর উইনির সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ প্রক্রিয়া চলছিল। তাই নিয়ম অনুযায়ী তখন মাদিবার মেয়েদের মধ্য থেকে একজন ফার্স্ট লেডি হওয়ার কথা। তখন বাবার পাশে যোগ্যতার সাক্ষর রাখেন জিন্দজি। ম্যান্ডেলা গ্রাসা ম্যাশেলকে বিয়ে করার আগ পর্যন্ত তিন বছর ( ১৯৯৬-৯৮) যত্নের সঙ্গে তিনি নিজের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৫ সালে প্রেসিডেন্ট পিডব্লিউ বোথা ম্যান্ডেলাকে মুক্তি দিতে চেয়েছিলেন তিনি নিঃশর্তভাবে রাজনৈতিক অস্ত্র হিশেবে সহিংসতা পরিহার করবেন এই শর্তে। কিন্তু ম্যান্ডেলা তা প্রত্যাখান করেন। সোয়েটোতে এক জনসমাবেশে বাবার সেই প্রত্যাখান পত্র পাঠ করে বেশ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন জিন্দজি।
বর্ণবিদ্বেষ মধ্যে বড় হওয়া জিন্দজি চোখের সামনে মাকে যন্ত্রণা সইতে দেখেছেন। বাবাকে দীর্ঘসময় কারাগারে কাটাতে দেখেছেন। এসব কারণে নিজের পড়াশোনাটা শেষ করতে পারেননি জিন্দজি। কবিতা ও শিল্পের প্রতি তাঁর ছিল প্রবল টান। বলা হয় জীবনে বিভিন্ন বৈরী পরিস্থিতি তাঁর ভেতর এক ধরনের ক্ষোভ তৈরি করেছিল। সেখান থেকে তাঁর কবি হয়ে ওঠা। ব্ল্যাক অ্যাজ আই অ্যাম, সামহাও উই সারভাইভ: অ্যান অ্যানথোলজি অব সাউথ আফ্রিকান রাইটিং এবং ডটারস অব আফ্রিকায় সেই সাক্ষর মেলে। তবে সবকিছুর পরও জিন্দজি একজন রাষ্ট্রদূত। ১৯৮৫ সালে তিনি কেপটাউন ইউনিভার্সিটি থেকে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি বর্তমানে ডেনমার্কে সাউথ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।