বিজেপি কেন লোকসভা-বিধানসভায় একযোগে ভোট চায়?

ভারতের রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান পদের ভোটে কংগ্রেসকে হারানোর পর বিজেপি এখন ‘ওয়ান নেশন ওয়ান ভোট’-এ আচ্ছন্ন। বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ এ জন্য আইন কমিশনের কাছে সুপারিশ পেশ করেছেন। বিজেপি চায়, বিষয়টি নিয়ে দেশে বিতর্ক শুরু হোক। যদিও দেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ওমপ্রকাশ রাওয়াত মঙ্গলবার জানিয়ে দিলেন, আগামী বছর সাধারণ নির্বাচনের সময় সব রাজ্যের বিধানসভার ভোট একসঙ্গে করা সম্ভব নয়।

কেন নয়, তার কারণ ব্যাখ্যা করে সিইসি বলেছেন, প্রথমত এই বিষয়ে সংবিধানে পরিবর্তন দরকার। দ্বিতীয়ত, পরিকাঠামোগত সমস্যা। একযোগে ভোট করতে হলে অতিরিক্ত ১২ লাখ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ও ভোট ভেরিফায়েবল পেপার ট্রেল মেশিন (ভিভিপ্যাট) প্রয়োজন। এ জন্য প্রয়োজন সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা।

‘ওয়ান নেশন ওয়ান ভোট’-এর অর্থ লোকসভা ও বিধানসভার ভোট একযোগে করা। বিজেপির যুক্তি, এর ফলে অর্থ ও সময়ের অপচয় বন্ধ হবে এবং দেশের উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে। অমিত শাহ চিঠিতে লিখেছেন, একযোগে ভোট হলে দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোও মজবুত হবে। আইন কমিশনকে চিঠি লিখলেও বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব জানেন, এত বড় দেশে লোকসভার সঙ্গে সব রাজ্যের বিধানসভার ভোট একযোগে করা এখনই সম্ভব নয়। বিরোধী রাজনীতিকেরা আপত্তি তুলবেন। সংবিধান সংশোধনও প্রয়োজন। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিজেপি এটা করতে চাইছে, যাতে চলতি বছরের শেষ ও আগামী বছরের প্রথম ভাগে অন্তত ১২টি রাজ্য বিধানসভার ভোট লোকসভার নির্বাচনের সঙ্গে করিয়ে ফেলা যায়। এই রাজ্যগুলোর সম্মিলিত লোকসভার আসনসংখ্যা ২০৪।

চলতি বছরের ডিসেম্বরে ভোট মিজোরামে, পরের বছর জানুয়ারিতে ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে। আগামী বছরের জুন মাসের মধ্যে ভোট করতে হবে অন্ধ্র প্রদেশ, অরুণাচল প্রদেশ, ওডিশা, সিকিম ও তেলেঙ্গানায়। ওই বছরের নভেম্বরে ভোট হবে হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্রে। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে শেষ হয়ে যাবে ঝাড়খন্ড বিধানসভার মেয়াদ। এই রাজ্যগুলোর বিধানসভার ভোট লোকসভার সঙ্গে করতে গেলে মিজোরাম, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানকে কয়েক মাসের জন্য রাষ্ট্রপতির শাসনের আওতায় আনতে হবে এবং হরিয়ানা, ঝাড়খন্ড ও মহারাষ্ট্রের ভোট এগিয়ে আনতে হবে নির্দিষ্ট সময়ের মাস ছয়েক আগে। রাজ্যসরকারগুলোই এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকারী। তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রশেখর রাও ইতিমধ্যেই অমিত শাহর প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়েছেন। বিজেপি মনে করছে অন্ধ্র প্রদেশ, ওডিশা, সিকিম ও অরুণাচল প্রদেশও গররাজি হবে না। একমাত্র ব্যতিক্রম মিজোরাম। সেখানে শাসনে রয়েছে কংগ্রেস।

বিজেপি একযোগে ভোট করতে চাইছে আরও এক কারণে। ডিসেম্বরে ছত্তিশগড়, রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশের ভোটে তাদের ভরাডুবি ঘটলে তার প্রভাব লোকসভার ভোটে পড়তে বাধ্য। বিজেপি সেই ঝুঁকি নিতে চায় না। ইতিমধ্যেই এক প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমের জরিপে প্রকাশ, তিন রাজ্যেই বিজেপির ভরাডুবি ঘটছে। বিপুল ব্যবধানে জিতবে কংগ্রেস।

বিজেপি অবশ্য বসে নেই। বিরোধীদের হতোদ্যম করতে চেষ্টারও ত্রুটি নেই। করুণানিধির মৃত্যুর পর বিজেপি তামিলনাড়ুর রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এআইএডিএমকেকে নিজেদের দিকে টেনে নেওয়ার পর তারা ডিএমকেকে দুর্বল করতে উঠেপড়ে লেগেছে। করুণানিধির বড় ছেলে আলাগিরিকে তারা মদদ দিচ্ছে। নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দহরম-মহরমের জন্য আলাগিরিকে দল থেকে বহিষ্কার করেছিলেন করুণানিধি। উত্তরাধিকারের দায়ভার তুলে দিয়েছিলেন ছোট ছেলে স্ট্যালিনের হাতে। মঙ্গলবার দলের কর্মসমিতির জরুরি বৈঠকে স্ট্যালিন সরাসরি জানান, আলাগিরিকে মদদ দেওয়ার মধ্য দিয়ে বিজেপি দলে ভাঙন ধরানোর চেষ্টায় নেমেছে। নির্বাসিত আলাগিরি দুই দিন আগেই বলেন, করুণানিধির ঘনিষ্ঠ ও আত্মীয়দের অধিকাংশই তাঁর সঙ্গে রয়েছেন।