কিশোরীর অঙ্গদানে তিনজনের নতুন জীবন

মল্লিকা মজুমদার
মল্লিকা মজুমদার

কিশোরীর নাম মল্লিকা মজুমদার (১৫)। এই কিশোরীর এবার এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়ির সূর্যসেন কলোনির বাসিন্দা মানিক মজুমদারের মেয়ে মল্লিকা। কানের সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য তাকে শিলিগুড়ির উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শরীরের অবস্থা খারাপ হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে স্থানান্তর করা হয় কলকাতার পিজি হাসপাতালে। কিন্তু মল্লিকাকে আর বাঁচাতে পারেননি চিকিৎসকেরা। তার মস্তিষ্ক অকার্যকর হয়ে পড়ে।

গত শুক্রবার হাসপাতালের পক্ষ থেকে মল্লিকার অঙ্গ অন্যকে দান করার জন্য তার পরিবারের সদস্যদের কাছে অনুরোধ জানানো হয়। চিকিৎসকেরা মল্লিকার পরিবারকে বোঝাতে চেষ্টা করেন, মল্লিকা চলে গেলেও তার অঙ্গ অন্যকে দান করলে অন্তত ছয়টি মানুষের প্রাণ বাঁচবে। মানবিক বিষয়টি বিবেচনা করে মল্লিকার পরিবার অঙ্গ দানের জন্য রাজি হয়। সেই মোতাবেক বিশেষ ব্যবস্থায় মল্লিকার দেহ থেকে তার চোখের দুটি কর্নিয়া দান করা হয় কলকাতার শংকর নেত্রালয়ে, যা দিয়ে দুই রোগীর চোখ বাঁচবে। মল্লিকার চামড়া রাখা হয় পিজি হাসপাতালের স্কিন ব্যাংকে। এই চামড়াও একদিন লাগবে কোনো অগ্নিদগ্ধ মানুষের শরীরে।

আর লিভার ও দুটি কিডনি দেওয়া হয় তিন রোগীকে। একজনকে দেওয়া হয় লিভার, আর দুজনকে দেওয়া হয় দুটি কিডনি। গত শুক্রবার রাতে তিন রোগীর শরীরে লিভার ও কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য অস্ত্রোপচার করা হয়। শনিবার সকালে অস্ত্রোপচার শেষ হয়। ওই দিন কলকাতার খড়দহের মৌমিতা চক্রবর্তী (২৪) ও কলকাতার সোদপুরের সঞ্জীব কুমার দাসের (৩১) দেহে প্রতিস্থাপন করা হয় কিডনি দুটি। এই দুই রোগী কলকাতার পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

আর লিভার প্রতিস্থাপন করা হয় তেলিঙ্গানা রাজ্যের হায়দরাবাদের ৪৪ বছরের অজয় রমাকান্ত নায়েকের দেহে। শুক্রবার রাতেই জরুরিভাবে হায়দরাবাদ থেকে বিমানে করে নিয়ে আসা হয় রমাকান্তকে। তাঁর অস্ত্রোপচার হয় কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতালে। পিজি থেকে জরুরিভাবে লিভার আনা হয় অ্যাপোলো হাসপাতালে। পরে সেখানে অস্ত্রোপচার সফল হয়। আর এভাবেই ওই কিশোরীর মরণোত্তর অঙ্গদানে নতুন জীবন পেলেন তিনজন। অবশিষ্ট অঙ্গ দিয়ে বাঁচবে আরও অন্যদের প্রাণ।

ওই তিনজনই এখন সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জ্ঞান ফিরে রমাকান্ত বলেছেন, তিনি কলকাতায় যখন এসেছেন, তখন সুস্থ হওয়ার পর একবার কালীঘাটের মা কালীকে পূজা দিয়ে যাবেন।