দিশেহারা বিজেপি

রাফায়েল যুদ্ধবিমান কেনাবেচায় দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ভারতের মোদি সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ করেন। রাফায়েলের কাটআউট হাতে নিয়ে স্লোগান দেন তাঁরা। গতকাল নয়াদিল্লিতে।  ছবি: এএফপি
রাফায়েল যুদ্ধবিমান কেনাবেচায় দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ভারতের মোদি সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ করেন। রাফায়েলের কাটআউট হাতে নিয়ে স্লোগান দেন তাঁরা। গতকাল নয়াদিল্লিতে। ছবি: এএফপি

বিরোধীদের তোলা তিন অভিযোগের মোকাবিলা তাঁরা কীভাবে করবেন, সদ্য সমাপ্ত বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলোর মুখ্যমন্ত্রীদের সম্মেলনে সেই প্রশ্নই বড় হয়ে উঠেছে। মোকাবিলার যে উপায়ের কথা ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ বলেছেন, তা কতটা কার্যকর হবে, সে বিষয়েও দলীয় মুখ্যমন্ত্রীদের অনেকেই নিশ্চিত নন।

বিরোধীদের অভিযোগগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফ্রান্সের কাছ থেকে ‘রাফায়েল’ যুদ্ধবিমান কেনাবেচায় ‘দুর্নীতির’ প্রসঙ্গ। বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীদের সম্মেলনে এই প্রসঙ্গ সবচেয়ে বড় হয়ে দেখা দেয়। মুখ্যমন্ত্রীদের অনেকেই প্রশ্ন তোলেন, মোদি-সরকারের ভাবমূর্তি প্রধানত যে বিষয়টির ওপর নির্ভরশীল, তা সততা। বিরোধীরা সেই সততা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে। তুলে ধরেছে দুর্নীতি প্রসঙ্গ। মুখ্যমন্ত্রীদের কেউ কেউ বলেন, রাফায়েল কেনাবেচা নিয়ে ‘বিশ্বাসযোগ্য’ তথ্যের অভাবে তাঁদের পক্ষেও বিরোধী প্রচারের মোকাবিলা করা সম্ভব হচ্ছে না। বিজেপি সূত্রের খবর অনুযায়ী, মোদি ও অমিত মুখ্যমন্ত্রীদের জানান যে বিরোধীদের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। দল ও সরকারের পক্ষ থেকে শিগগিরই প্রকৃত সত্য তুলে ধরা হবে।

বিজেপি সদর দপ্তরে মুখ্যমন্ত্রীদের সম্মেলন বসেছিল গত মঙ্গলবার। পরের দিন বুধবার রাফায়েল নিয়ে সরব হন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তথ্য দাখিল করে তিনি জানান, কংগ্রেস আমলে যে টাকায় রাফায়েল চুক্তি হয়েছিল, বিজেপির চুক্তি তার চেয়ে অনেক ভালো। নিজস্ব ব্লগে জেটলি লেখেন, ১০ বছরে ডলার-ইউরোর তুলনায় রুপির অবমূল্যায়ন এবং মুদ্রাস্ফীতির হিসাব কষলে দেখা যাচ্ছে বিজেপির করা চুক্তি আগের তুলনায় ২০ শতাংশ কম।

বিজেপি সূত্র অনুযায়ী, মুখ্যমন্ত্রী সম্মেলনের পরেই জেটলিকে রাফায়েল নিয়ে ‘সত্য তথ্য’ জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু সেই তথ্য জন্ম দিয়েছে নতুন বিতর্ক, চ্যালেঞ্জ ও সমস্যার। জেটলির ব্লগ প্রকাশ হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর যুক্তিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে টুইট করেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। জেটলিকে তিনি বলেন, সরকার যখন এতই স্বচ্ছ তখন সত্যাসত্য বিচারে সংসদীয় যুগ্ম কমিটি গঠন করা হোক। জেটলিকে তিনি ২৪ ঘণ্টা সময় দেন এবং গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ফের একটা টুইট করে বলেন, ‘মাননীয় অর্থমন্ত্রী, চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে আপনার হাতে আর মাত্র ছয় ঘণ্টা সময় রয়েছে।’

রাফায়েল নিয়ে কংগ্রেস দেশজোড়া আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। বৃহস্পতিবার দলীয় সদর দপ্তর থেকেই সেই আন্দোলন শুরু হয়ে যায়। কংগ্রেসের দাবি প্রধানত দুটি। প্রথমত, অনেক বেশি টাকায় অনেক কম যুদ্ধবিমান ভারত কিনছে। দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হিন্দুস্তান অ্যারোনটিকস লিমিটেডকে অগ্রাহ্য করে এই সংক্রান্ত অন্য একটি চুক্তি সইয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সাহায্য করেছেন তাঁর ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি অনিল আম্বানিকে।

বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীদের তোলা দ্বিতীয় বিষয়টি গত সাড়ে চার বছরের ‘চাকরিহীন প্রবৃদ্ধি’। তাঁরা বলেন, বিরোধীরা কর্মহীনতাকে তাদের প্রচারে বড় করে তুলে ধরছে। মুখ্যমন্ত্রীদের কারও কারও তোলা এই প্রশ্ন ও সংশয়ের স্পষ্ট জবাব মোদি-শাহ জুটির কাছে ছিল না। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে দেখানো হয়, মনমোহন সিংয়ের আমলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার যত ছিল, মোদির আমলে তার চেয়ে অনেক কম।

এই প্রসঙ্গেই চলে আসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নোট বাতিল ও অভিন্ন কর প্রথা (জিএসটি) চালুর সিদ্ধান্ত। কংগ্রেসসহ সব বিরোধী দলের প্রশ্ন, কালোটাকা উদ্ধার হলো না। জাল নোট বন্ধ করা গেল না। তাহলে লাভটা কী হলো এত মানুষকে এই প্রবল কষ্ট ও অসুবিধার মধ্যে ফেলে? বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলোর মুখ্যমন্ত্রীদের সম্মেলন থেকে নোটবন্দী-সংক্রান্ত কোনো প্রশ্নের স্পষ্ট জবাবও পাওয়া যায়নি।