মিয়ানমারের সার্বভৌমত্বে 'হস্তক্ষেপে'র অধিকার জাতিসংঘের নেই

মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইয়াং। ছবি: এএফপি
মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইয়াং। ছবি: এএফপি

মিয়ানমারের সার্বভৌমত্বে ‘হস্তক্ষেপ’ করার অধিকার জাতিসংঘের নেই বলে জানিয়েছেন দেশটির সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইয়াং। সেনাদের ধর্ষণ, নির্যাতনের পর মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ‘গণহত্যার’ অভিযোগে দেশটির শীর্ষ জেনারেলদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে বিচারের জন্য জাতিসংঘের তদন্তকারীদের আহ্বান জানানোর সপ্তাহখানেক পরে তিনি এ কথা জানালেন।

জাতিসংঘের আহ্বানে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর সংঘটিত অপরাধের প্রাথমিক তদন্ত শুরু করার পর এই প্রথম মিন অং হ্লাইয়াং এ বিষয়ে মুখ খুললেন।

মিয়ানমার সেনাবাহিনী পরিচালিত পত্রিকা দৈনিক ‘মায়াওয়াদি’র বরাত দিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম মিয়ানমার সেনাপ্রধানের বক্তব্য তুলে ধরেছে। ওই পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের সেনাপ্রধান বলেন, ‘কোনো দেশ, সংগঠন বা গ্রুপের ‘অন্য একটি দেশের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপের অধিকার নেই। কেউ অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মধ্যস্থতা করতে এলে তাতে ভুল-বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়।’

জাতিসংঘের তদন্ত দল রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিপীড়ন ও গণহত্যার যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ খুঁজে পেয়েছে। এর কারণে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম বাস্তুহারা হয়ে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে এসেছে।

এর আগে রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘের স্বাধীন আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন (এফএফএম) একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের রাখাইনে ব্যাপক হারে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং গণহত্যার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তদন্ত প্রতিবেদনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর প্রধানসহ ছয় শীর্ষ সেনা জেনারেলকে বিচারের মুখোমুখি হওয়ার কথাও বলা হয়। তবে মিয়ানমার এ তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে।

জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলছে উল্লেখ করে সে সময় দেশটির এক সরকারি মুখপাত্র বলেছিলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমার স্বাধীন তদন্ত কমিশন নিয়ে কাজ করছে। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে এই কমিশন সেগুলো খণ্ডন করবে।

গত বছরের আগস্টে রাখাইনের বেশ কয়েকটি পুলিশ ও সেনা পোস্টে হামলার অভিযোগে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। রাখাইনের সংখ্যাগুরু বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় দেশটির সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, নির্যাতনসহ অমানবিক জুলুম শুরু করে। তবে সেনাবাহিনী তাদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে রাজ্যটিতে রোহিঙ্গা জঙ্গিদের দমনের কথা বলে এ নির্যাতনকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করে আসছে।
মিয়ানমারের সেনাদের নিপীড়ন, ধর্ষণ ও নির্যাতনে টিকতে না পেরে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করে রোহিঙ্গারা। এরপর সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এখন পর্যন্ত ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে।

জাতিসংঘের তদন্ত দল রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দেশটির সেনাবাহিনীর নিপীড়ন ও গণহত্যার তথ্যপ্রমাণ খুঁজে পেয়েছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

মিয়ানমারের সরকার এরই মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদনকে অস্বীকার করে এটিকে একতরফা বলে অভিযুক্ত করেছে। এ ছাড়াও তারা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচার-সংক্রান্ত যে সিদ্ধান্ত সেটিকেও অগ্রাহ্য করেছে। তথ্যসূত্র: এএফপি।