আগে উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব, তারপর এনআরসি

পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বাগদায় মতুয়াদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বাগদায় মতুয়াদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

২০০৩ সালের ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের জারি করা নাগরিকত্ব বিল বাতিল করা ও বিভিন্ন কারণে ‘বাংলাদেশ থেকে আসা’ উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দিতে হবে। তারপর এনআরসি করতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের মতুয়া সম্প্রদায়ের নেতারা এই দাবি তুলেছেন।

পশ্চিমবঙ্গে মতুয়া সম্প্রদায়ের বিরাট ভোটব্যাংক রয়েছে। মতুয়ারা দীর্ঘদিন ধরে নাগরিকত্বের দাবিতে আন্দোলন করলেও তেমন সাড়া মেলেনি। মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রধান আশ্রম উত্তর ২৪ পরগনার ঠাকুর নগরে। এখানেই রয়েছে মতুয়া গুরুর আশ্রম। এখানের মতুয়া মহাসংঘ থেকে নিয়ন্ত্রিত হয় মতুয়া সম্প্রদায়ের কাজ। কিন্তু ইদানীং মতুয়া মহাসংঘে রাজনীতির ‘অনুপ্রবেশ’ ঘটায় মতুয়া সম্প্রদায়ও বিভক্ত হয়ে পড়েছে।

এই বিভক্ত হওয়া অংশের মতুয়ারা গড়ে তুলেছে নতুন একটি সংগঠন। নাম দেওয়া হয়েছে ‘হরিগুরু চাঁদভক্ত মতুয়া মহাসংঘ’। সেই মহাসংঘের প্রথম বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে গতকাল রোববার পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বাগদায়। এই সম্মেলনে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার মতুয়া ভক্তরা উপস্থিত হন।

এই সম্মেলন থেকে অভিযোগ ওঠে বর্তমানে মতুয়া মহাসংঘ পারিবারিক বিবাদের জেরে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ঠাকুরের আদর্শ ও নীতি সমুন্নত রাখতে গড়া হয়েছে এই নতুন সংগঠন। সংগঠনের নেতা অনুপম রায় বলেন, সারা ভারত মতুয়া মহাসংঘ এখন পারিবারিক সংগঠনে পরিণত হয়েছে। সেখানে সাধারণ ভক্তদের আসা-যাওয়া কমে গেছে। এই অবস্থায় মতুয়াদের দাবি দাওয়া তুলে ধরার জন্য গঠন করা হয়েছে এই নতুন সংগঠন।

সম্মেলনে মতুয়া নেতারা দাবি তোলেন, ২০০৩ সালের কেন্দ্রীয় সরকারের জারি করা নাগরিকত্ব বিল বাতিল করতে হবে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন কারণে ‘বাংলাদেশ থেকে আসা’ উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দিতে হবে। তাঁরা বলেন, এই মুহূর্তে ভারতে রয়েছে ৪ কোটি উদ্বাস্তু। এর মধ্যে আড়াই কোটির বাস পশ্চিমবঙ্গে আর বাকিদের বাস ভারতের অন্যান্য রাজ্যে। এখন ভারতের বিজেপির কেন্দ্রীয় সরকার এই সব উদ্বাস্তুদের দেশছাড়া করার পরিকল্পনা করছে। আমরা এখনো দাবি করছি অনুপ্রবেশকারী এবং উদ্বাস্তু এক নয়। আগে উদ্বাস্তু মানুষজনকে নাগরিকত্বের স্বীকৃতি দিতে হবে। তারপর চালু করতে হবে এনআরসি বা জাতীয় নাগরিক পঞ্জি।

সম্মেলনে নিখিল ভারত বাঙালি উদ্বাস্তু সমন্বয় কমিটির রাজ্য সম্পাদক সন্দীপ কুমার বিশ্বাস বলেছেন, ২০১৫ সালের ৭ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় সরকার একটি অর্ডিন্যান্স জারি করে বলেছিল, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে যারা এ দেশে এসেছেন তাঁরা এ দেশে থাকতে পারবেন। এরপরে যাঁরা এসেছেন তাঁরা নাগরিকত্ব পাবেন না। আমরা দাবি করছি সেই অর্ডিন্যান্স অবিলম্বে সংসদের উভয় কক্ষে পেশ করে তা পাস করিয়ে আইনে পরিণত করা হোক। তার আগে কিছুতেই আমরা এই রাজ্যে এনআরসি চালু করতে দেব না।