রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের জন্য সহায়তা বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

পাহাড়ের ওপর থেকে কক্সবাজারের এক শরণার্থীশিবিরের দিকে তাকিয়ে আছে এক রোহিঙ্গা শরণার্থী শিশু। ছবিটি এ বছরের ১১ জানুয়ারি তোলা। ছবি: রয়টার্স
পাহাড়ের ওপর থেকে কক্সবাজারের এক শরণার্থীশিবিরের দিকে তাকিয়ে আছে এক রোহিঙ্গা শরণার্থী শিশু। ছবিটি এ বছরের ১১ জানুয়ারি তোলা। ছবি: রয়টার্স

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য মার্কিন সহায়তা প্রায় দ্বিগুণ বাড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি। রোহিঙ্গা শরণার্থী ও রোহিঙ্গা আশ্রয়দাতা দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্য ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার বেশি অতিরিক্ত সহায়তা দেওয়া হবে। গতকাল সোমবার জাতিসংঘে বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের মন্ত্রীদের শীর্ষ বৈঠক শেষে তিনি এ কথা জানান। রোহিঙ্গা সংকটের ব্যাপারে তদন্তে পাওয়া তথ্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা কাউন্সিলে পেশ করার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি। 

গত বছর মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলের রাখাইন রাজ্যে সামরিক অভিযানের পর সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা দেশ ছেড়ে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় আশ্রয় নেয়। মিয়ানমার দাবি করেছিল, পুলিশ ও সেনা তল্লাশি চৌকিতে রোহিঙ্গা জঙ্গিরা হামলা চালানোর পর অভিযান চালানো হয়।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘের স্বাধীন আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন (এফএফএম) একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের রাখাইনে ব্যাপক হারে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ এবং গণহত্যা ও গণধর্ষণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে মিয়ানমার এই তদন্তকে ‘একপেশে’ জানিয়ে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। তাদের দাবি, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সেটা ছিল বৈধ অভিযান।

জাতিসংঘ অধিবেশনের পাশাপাশি মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে যোগদান শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নিকি হ্যালি। তিনি বলেন, তদন্তে আসল ঘটনা জানা গেছে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দোষ করেছে। এই রোহিঙ্গারা জঙ্গি ছিল না। সামরিক বাহিনী তাদের সঙ্গে এই আচরণ করেছে। এসব মানুষ থাকার জন্য শুধু জায়গা চেয়েছিল।

বৈঠকের পর মিয়ানমারের প্রতিনিধিদল এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে চায়নি।

মার্কিন তদন্ত প্রতিবেদন ও রয়টার্সের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী পরিকল্পিতভাবে গণহত্যা, গণধর্ষণসহ অন্যান্য নৃশংসতা চালিয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট ও ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোঁ-ইভ ল্য দ্রিয়ঁ মন্ত্রীদের রুদ্ধদ্বার বৈঠকটি পরিচালনা করেন। কূটনীতিকেরা জানিয়েছেন, এতে দায়বদ্ধতার বিষয়টিতে আলোকপাত করা হয়েছে।

এই বৈঠকে বাংলাদেশসহ ১৬টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘের শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশ নেন।

বৈঠক শেষে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী রয়টার্সকে বলেন, গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে। দেখা যাক, কী হয়।

নিকি হ্যালি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এ ব্যাপারে কিছু করার সময় এসেছে। আমি ফরাসি ও ব্রিটিশ মন্ত্রীকে অনুরোধও করেছি যে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের তদন্তে যে তথ্য পাওয়া গেছে, তা তুলে আনতে হবে এবং বিষয়টি নিরাপত্তা কাউন্সিলকে জানাতে হবে।’
তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র মানবিক সহায়তায় অতিরিক্ত ১৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় এক হাজার ৫৫৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকা) দেবে। এর মধ্যে ১৫৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ১ হাজার ৩১১ কোটি ৬২ লাখ টাকা) দেওয়া হবে রোহিঙ্গা শরণার্থী ও বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের সহায়তায় কাজ করা কমিউনিটিগুলোকে। এ নিয়ে গত বছর থেকে এ পর্যন্ত এই খাতে যুক্তরাষ্ট্র ৩৮৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (৩ হাজার ২৭০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা) সহায়তা দিচ্ছে।

গত সপ্তাহে নিকি হ্যালি বলেছিলেন, মঙ্গলবার (আজ) প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে তাঁর ভাষণে বৈদেশিক সহায়তার বিষয়ে কথা বলতে পারেন এবং ওয়াশিংটন ওই সব দেশের প্রতি উদার হবে না, যারা যুক্তরাষ্ট্রকে থামাতে চায় বা যুক্তরাষ্ট্রকে ঘৃণা করে।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্ট গত সপ্তাহে মিয়ানমার সফর করেন এবং এই অপরাধের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের স্থান না দিতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

এদিকে মিয়ানমারের সেনাপ্রধান গতকাল সোমবার তাঁর দেশের ব্যাপারে অন্য দেশকে হস্তক্ষেপ না করতে সতর্ক করেছেন। মিয়ানমারের সার্বভৌমত্বে ‘হস্তক্ষেপ’ করার অধিকার জাতিসংঘের নেই বলে জানিয়েছেন দেশটির সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইয়াং। সেনাদের ধর্ষণ, নির্যাতনের পর মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ‘গণহত্যার’ অভিযোগে দেশটির শীর্ষ জেনারেলদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে বিচারের জন্য জাতিসংঘের তদন্তকারীদের আহ্বান জানানোর সপ্তাহখানেক পর তিনি এ কথা জানালেন।

জাতিসংঘের আহ্বানে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর সংঘটিত অপরাধের প্রাথমিক তদন্ত শুরু করার পর এই প্রথম মিন অং হ্লাইয়াং এ বিষয়ে মুখ খুললেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কৌঁসুলি রোহিঙ্গাদের জোর করে বাংলাদেশে যেতে বাধ্য করার অভিযোগগুলো পরীক্ষা করা শুরু করেছেন। তবে মিয়ানমার বলেছে, পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের তারা ফিরিয়ে নেবে।