বিজেপির ডাকে পালিত হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ বনধ
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গুলিতে দুই ছাত্রের মৃত্যুর প্রতিবাদে আজ বুধবার সকাল ছয়টা থেকে রাজ্যব্যাপী বাংলা বনধ কর্মসূচি পালন করছে বিজেপি। এই প্রথম পশ্চিমবঙ্গে একক শক্তিতে ১২ ঘণ্টার বনধ ডেকে শক্তি প্রদর্শন করল দলটি।
আজ এই বনধ পালনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জেলায় বিজেপি এবং রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। গ্রেপ্তারও হয়েছেন বিজেপির বহু নেতা-কর্মী। বনধকে ঘিরে রাজ্যে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়েছে, বিভিন্ন সড়ক অবরোধ হয়েছে। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে প্রচুর বাস, ট্রাক ও ট্যাক্সিতে।
গত বৃহস্পতিবার ইসলামপুরের দাঁড়িভিট উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের প্রতিবাদে আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ওই বিদ্যালয়ের সাবেক দুই ছাত্র তাপস বর্মন ও রাজেশ সরকার। গ্রামবাসী ও ছাত্ররা দাবি করেন, পুলিশের গুলিতে মারা যান ওই দুই কলেজছাত্র। যদিও পুলিশ দাবি করে, বহিরাগতদের গুলিতে নিহত হয়েছেন তাঁরা।
ওই ঘটনার প্রতিবাদে বিজেপি আজ ১২ ঘণ্টার বাংলা বনধের ডাক দেয়। পশ্চিমবঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং পুলিশের অত্যাচার বন্ধ ও দোষী পুলিশ সদস্যদের শাস্তির দাবিতে এই বনধ ডাকে বিজেপি।
সকাল ছয়টা থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচি চলবে আজ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। এই বনধকে ঘিরে মেচেদা, ফুলিয়া, মালদহ, চুচুরা, রানাঘাট, বসিরহাট, গুমা, দত্তপুকুর, মধ্যমগ্রাম, লক্ষ্মীকান্তপুর, ক্যানিং, ডায়মন্ড হারবার, চন্দ্রকোনা রোড, উলবেড়িয়া, খড়গপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় রেল অবরোধ করেন বিজেপির সমর্থকেরা। এর ফলে ব্যাহত হয় ট্রেন চলাচল। আন্দোলনকারীরা রেললাইনের ওভার হেড তারে কলাপাতা ফেলে ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন ঘটায়।
এ ছাড়া উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরে বাস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। কোচবিহারে ভাঙচুর হয় তিনটি বাস। খড়গপুর, হাওড়া, টিকিয়াপাড়া, কলকাতার নিউটাউন ও তারাতলায়ও বাস ভাঙচুর করা হয়। কলকাতার ব্রেবোর্ন রোডে একটি সরকারি বাস ভাঙচুর করে পেট্রল ঢেলে পুড়িয়ে দেয় বনধের সমর্থকেরা। খড়গপুরে এক বাসচালককে মারধর করা হয়েছে—এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে। মালদহ, মেখলিগঞ্জ, ধূপগুড়ি, দত্তপুকুর, মেচেদায় বিজেপির সঙ্গে বনধ নিয়ে সংঘর্ষ হয় তৃণমূলের। পুলিশ বিজেপির বহু সমর্থককে গ্রেপ্তার করেছে।
এ ছাড়া বিহার রাজ্যের বুদ্ধগয়া থেকে শিলিগুড়ি অভিমুখে আসা একটি যাত্রীবাহী বাসের ওপর হামলা চালায় বনধের সমর্থকেরা। ইসলামপুরে তীর-ধনুক নিয়ে আদিবাসীরা বনধের সমর্থনে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে। বাঁকুড়া ও হাওড়ায় বনধবিরোধী তৃণমূলের সমর্থকেরা বাসের চালক ও যাত্রীদের মিষ্টি ও ফুল বিতরণ করেন। একইভাবে হুগলির উত্তরপাড়ায়ও তৃণমূলের সমর্থকেরা বাসযাত্রী ও বাসচালকদের মিষ্টি ও ফুল বিতরণ করেন বনধ না করার জন্য।
রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ এসে বনধ তুলে দিতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে বিজেপির সমর্থকদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। বহু বাসচালক মাথায় হেলমেট দিয়ে বাস চালিয়েছেন আজ।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার এই বনধ প্রতিহত করতে সার্বিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তৃণমূল বনধ প্রতিহত করার জন্য পথে নেমেছে। অন্যদিকে বিজেপিও ঘোষণা দিয়েছে, তারা এ বনধ সফল করার জন্য সার্বিক ব্যবস্থা নেবে।
এদিকে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মচারী আজ বনধের দিনে অনুপস্থিত থাকলে তাঁর এক দিনের বেতন কেটে নেওয়া হবে। পাশাপাশি তাঁর চাকরিজীবনের একটি দিনও খসে যাবে।
এ ছাড়া বনধের দিনে কোনো গাড়ির ক্ষতি হলে রাজ্য সরকার ক্ষতিপূরণ দেবে, এমন ঘোষণা দেওয়া হয়। সর্বাধিক ছয় লাখ রুপি পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। বিভিন্ন বিমা সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এই ঘোষণা দিয়েছে রাজ্য সরকার।