বেচারাম বেচারা!

বেচারাম মান্না। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
বেচারাম মান্না। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের ক্ষমতায় আসার মূল অস্ত্র ছিল সিঙ্গুরের টাটার জমিবিরোধী আন্দোলন। ঘটনাটি ২০০৬-০৭ সালের।

হুগলি জেলার সিঙ্গুর হলো আলু উৎপাদনের অন্যতম এলাকা। সেখানে ভারতের টাটা শিল্পগোষ্ঠী সস্তায় গাড়ি দেওয়ার প্রত্যয় নিয়ে ন্যানো গাড়ির কারখানা গড়ার উদ্যোগ নেয়। পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার টাটাকে কারখানা গড়ার জন্য ৯৯৭ একর জমি লিজ দেয়। টাটা শুরু করে কারখানা নির্মাণ। কিন্তু তাতে বাদ সাধেন জমির একাংশের মালিক কৃষক। টাটাকে জমি দেওয়ার ব্যাপারে তাঁরা আপত্তি তোলেন।

কৃষকদের আপত্তির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এগিয়ে এসে তিনি শুরু করেন সিঙ্গুরে টাটার জমিবিরোধী আন্দোলন। কৃষকদের নিয়ে মাঠে নামেন মমতা। আন্দোলনে নেমে প্রচুর সমর্থন পান। ঘোষণা দেন, টাটাকে গাড়ির কারখানা গড়তে কিছুতেই সিঙ্গুরের জমি দেওয়া হবে না। 


মমতার তীব্র আন্দোলনের মুখে শেষ পর্যন্ত টাটা সিঙ্গুর থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে চলে যায় গুজরাটের সানন্দে। পরে সেখানে শুরু করে ন্যানো গাড়ির উৎপাদন।

২০০৭ সালে সিঙ্গুরে টাটার জমিবিরোধী আন্দোলন জোরদার করতে গঠন করা হয়েছিল কৃষিজমি রক্ষা কমিটি। কমিটির আহ্বায়ক করা হয় সিঙ্গুরের রতপুর গ্রামের পাটশিল্পের এক শ্রমিক নেতাকে। তাঁর নাম বেচারাম মান্না।

গরিব ঘরের সন্তান বেচারাম। সিঙ্গুর আন্দোলনে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলেন তিনি। ২০১১ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার নির্বাচনে বেচারাম তৃণমূলের প্রার্থী হতে চান। তাঁকে সিঙ্গুরের আসন না দিয়ে হুগলি জেলার হরিপাল আসনে মনোনয়ন দেন মমতা। নির্বাচনে বেচারাম জয়ী হন। আর সিঙ্গুর আসনে জয়ী হন সেখানকার শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। তিনি এলাকায় মাস্টার মশাই নামে পরিচিতি।

বেচারাম লেখাপড়ায় বেশ খাটো। দশম শ্রেণি পর্যন্ত তাঁর শিক্ষা। তাই তাঁকে মন্ত্রিত্ব দেওয়ার ব্যাপারে মমতার কিছুটা আপত্তি ছিল। কিন্তু সিঙ্গুর আন্দোলনে বেচারামের অবদানের কথা ভেবে প্রথম পর্যায়ে না দিয়ে পরে তাঁকে কৃষি প্রতিমন্ত্রী করেন মমতা। আর প্রথম পর্যায়েই মাস্টার মশাইকে মন্ত্রিত্ব দেওয়া হয়।

ক্ষমতায় যাওয়ার পর রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের সঙ্গে রাজনৈতিক বিবাদে জড়িয়ে পড়েন বেচারাম। এই বিবাদের জেরে পরবর্তীকালে মমতা ছেঁটে দেন বেচারামকে। তিনি মন্ত্রিত্ব হারান। তবে দলে টিকে ছিলেন বেচারাম।

সব শেষ বেচারাম সিঙ্গুর ইউনিয়নের সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছিলেন। সম্প্রতি সেই দায়িত্ব থেকেও তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর অপরাধ—গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব। মাস্টার মশাইয়ের সঙ্গে বিবাদ। বেচারামের পদে নিয়ে আসা হয় মাস্টার মশাইকে। কিন্তু তাতে সম্মত হননি তিনি। তাঁর প্রস্তাব—এই পদ এলাকার ত্যাগী নেতা মহাদেব দাসকে দেওয়া হোক।

একসময়ের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী নেতা বেচারাম আজ হয়ে গেলেন তৃণমূলের একজন সাধারণ সদস্য। এ যেন একেবারে হিরো থেকে জিরো।