যৌন নির্যাতন, কাঠগড়ায় এম জে আকবর

এম জে আকবর
এম জে আকবর

যৌন হেনস্তার অভিযোগের ঘটনায় এবার নাম জড়াল ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবরের। তবে মন্ত্রী হিসেবে নয়, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো সেই সময়ের, যখন তিনি ছিলেন একজন সফল সম্পাদক ও সাংবাদিক। অভিযোগ যাঁরা করেছেন, সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত তাঁরাও।
আকবরের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। আজ মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক অনুষ্ঠান শেষে একাধিক নারী সাংবাদিক এই বিষয়ে সুষমাকে প্রশ্ন করেন। তাঁরা জানতে চান, যৌন হেনস্তার গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। আপনি নারী এবং মন্ত্রণালয়ের প্রধান। এসব অভিযোগের কি কোনো তদন্ত হবে?
সুষমা প্রশ্ন শুনলেও কোনো মন্তব্য না করে নীরবে হেঁটে চলে যান। সুষমার দুই প্রতিমন্ত্রীর একজন হলেন আকবর, অন্যজন দেশের সাবেক সেনাপ্রধান ভি কে সিং। আকবর এই মুহূর্তে বিদেশে। আগামীকাল তাঁর দেশে ফেরার কথা।
এক বছর ধরে মার্কিন মুলুকের সফল চলচ্চিত্র প্রযোজক হার্ভে ওয়েইনস্টেনের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগের ঝড় বয়ে যাচ্ছে যা ‘#মি টু’ নামে পরিচিত। একের পর এক অভিনেত্রী ও পরিচিত নারী প্রতিষ্ঠিত ও ক্ষমতাবান এই প্রযোজকের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ এনেছেন, যেগুলো আদালতের বিচারাধীন। তারই রেশ ধরে ভারতেও শুরু হয়েছে এক ‘আন্দোলন’। হিন্দি সিনেমার সাবেক বাঙালি অভিনেত্রী তনুশ্রী দত্ত ১০ বছর আগে তাঁকে যৌন হেনস্তার অভিযোগ আনেন অতি পরিচিত অভিনেতা নানা পাটেকার ও নৃত্য পরিচালক গণেশ আচার্যের বিরুদ্ধে। সেই থেকে একে একে শুরু হয়েছে অভিযোগের পালা। অভিযোগের তালিকা বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন, যার সর্বশেষ সংযোজন ‘সংস্কারি’ অভিনেতা বলে পরিচিত প্রবীণ অলোক নাথ। অভিযোগ শুধু ফিল্মের জগতেই সীমাবদ্ধ নয়। অভিনয়জগতের গণ্ডি পেরিয়ে তাতে জড়িয়ে গেছেন লেখক ও সাংবাদিকেরাও। আকবরের নাম আসার সঙ্গে সঙ্গে এবার জড়িয়ে পড়লেন রাজনীতিবিদেরাও।
আকবরের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ প্রথম এনেছিলেন সাংবাদিক প্রিয়া রামানি। এক বছর আগে লেখা সেই প্রতিবেদনে তিনি আকবরের নাম করেননি। কিন্তু সম্প্রতি এক ট্যুইটে তিনি পুরোনো ঘটনা মনে করিয়ে সরাসরি আকবরের নাম নেন। তার পর থেকে একাধিক নারী সাংবাদিক আকবরকে নিয়ে তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা জানাতে থাকেন। কীভাবে হোটেলের ঘরে সাক্ষাৎকারের নামে তরুণ সাংবাদিকদের আকবর ডেকে পাঠাতেন, মদ খাওয়াতেন, ঘনিষ্ঠভাবে কাছে বসতে বাধ্য করতেন, অশালীন আচরণ করতেন, নারী সাংবাদিকেরা তার বিবরণ দিয়েছেন। পরিচয় প্রকাশ না করা এক নারী লিখেছেন তাঁকে হোটেলে ডাকার কাহিনি। ‘সম্পাদক মশাই’ তাঁকে জোর করে মদ খাওয়ালেন এবং জড়িয়ে ধরলেন। সেই নারী লিখেছেন, একটা সময় জোর করে ঠেলে দিয়ে দরজা খুলে তিনি হোটেল থেকে বেরিয়ে আসেন।
আকবরের বিরুদ্ধে এই অভিযোগগুলো প্রধানত সেই সময়ের যখন তিনি কলকাতায় ‘সানডে’ ম্যাগাজিন ও ‘দ্য টেলিগ্রাফ’-এর সম্পাদনা করছেন। এর পর তিনি ‘এশিয়ান এজ’ ও ‘দ্য সানডে গার্ডিয়ান’ পত্রিকা সম্পাদনা করেন। সাংবাদিকতা ছেড়ে আকবর প্রথম যোগ দেন কংগ্রেসে। সাংসদও হন। পরে বিজেপিতে যোগদান ও মন্ত্রিত্ব লাভ।
আকবরের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ নিয়ে সরকারিভাবে কেউ মুখ খোলেননি। নানা পাটেকারের বিরুদ্ধে তনুশ্রী দত্ত অভিযোগ করার পর কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু কল্যাণমন্ত্রী মানেকা গান্ধী শুধু বলেছিলেন, অভিযোগ উড়িয়ে না দিয়ে তদন্ত করা প্রয়োজন। তবে শাসক দল বিজেপির আর এক সাংসদ উদিত রাজ আজ সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ১০ বছর পর এসব অভিযোগ আনা অর্থহীন। মেয়েদের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছেন, কেউ কেউ ২-৪ লাখ টাকা নিয়ে এই ধরনের অভিযোগ করেন। তারপর অন্য কোনো পুরুষকে আঁকড়ে ধরেন। দিল্লির সাংসদ উদিত রাজ বলেন, ‘পুরুষ এমন হয় আমি মানি। কিন্তু নারীরা কি ধোয়া তুলসী পাতা? তাদের ব্যবহার করা হয় না? এমন একটা অভিযোগ কোনো পুরুষের জীবনটা নষ্ট করে দিতে পারে।’ ট্যুইট করে উদিত রাজ বলেছেন, এসব ঠিক হচ্ছে না।
ঠিক না ভুল, পরের কথা। আপাতত এটা পরিষ্কার, তনুশ্রী যে ঢেউ তুলেছেন, সিনেমার জগৎ পেরিয়ে তার পরিধি বৃদ্ধি পাচ্ছে নিত্য। জড়িয়ে পড়ছে একের পর এক নাম। একটি অভিযোগ এখন প্রায় এক আন্দোলনের রূপ নিয়েছে।