খাসোগি নিখোঁজ ইস্যুতে পাল্টা ব্যবস্থা নেবে সৌদি আরব

নিখোঁজ সাংবাদিক জামাল খাসোগি। ছবি: এএফপি
নিখোঁজ সাংবাদিক জামাল খাসোগি। ছবি: এএফপি

সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি নিখোঁজ ইস্যুতে যেকোনো ধরনের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও রাজনৈতিক চাপের হুমকি উড়িয়ে দিয়েছে সৌদি সরকার। উল্টো যেকোনো ব্যবস্থার বিরুদ্ধে পাল্টা আরও বড় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে তাঁরা। রোববার সৌদি কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে তাদের এমন শক্ত অবস্থানের কথা তুলে ধরে।

সিএনএন জানিয়েছে, খাসোগি নিখোঁজের ঘটনায় সৌদি আরব ও বেশ কিছু পশ্চাতের দেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। এমন পরিস্থিতি সৌদি আরব বলছে, যদি তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তবে এর জবাবে তারা আরও বৃহত্তর ব্যবস্থা নেবে।

ওই বিবৃতিতে বলা হয়, এটা সত্য যে বিশ্ব অর্থনীতিতে তাদের রাজ্যের অর্থনীতি প্রভাবশালী ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং সেটা প্রভাব বিস্তার করে। তাদের রাজ্যের অর্থনীতিই হচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতি।

জামাল খাসোগির নাম উল্লেখ না করে বিবৃতিতে বলা হচ্ছে, ২ অক্টোবর কে যেন ইস্তাম্বুলে অবস্থিত সৌদি কনস্যুলেট ভবনে প্রবেশের পর নিখোঁজ হন। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, আসন্ন বিয়ের জন্য তুর্কি এক নারীর সঙ্গে তাঁর বাগদান হয়েছিল।

এদিকে গত শুক্রবার পরিবারের বরাত দিয়ে তুরস্ক কর্তৃপক্ষ সিএনএনকে জানায়, সৌদি কনস্যুলেট ভবনের ভেতরে খাসোগিকে হত্যার অডিও এবং ভিডিও প্রমাণ তারা পেয়েছে।

এদিকে খাসোগির নিখোঁজের ঘটনায় নিজেদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে জোরালোভাবে জানিয়ে আসছে সৌদি আরব।

প্রসঙ্গত, ব্যক্তিগত কাগজপত্র আনার জন্য গত ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেট ভবনে ঢোকেন সাংবাদিক জামাল খাসোগি। কিন্তু তিনি সেখান থেকে আর বেরিয়ে আসেননি। কনস্যুলেট ভবনের ভেতরে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে তুরস্ক।

এই ঘটনায় জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এর আগে বিবিসিকে বলেছেন, খাসোগির সঙ্গে কী ঘটেছে, তা একবার স্পষ্ট হলে সরকারগুলোকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কীভাবে ‘যথাযথ উপায়ে’ প্রতিক্রিয়া জানাবে।

সৌদি ক্রাউন প্রিন্সের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, খাসোগির মৃত্যুর জন্য সৌদি আরব দোষী প্রমাণিত হলে যুক্তরাষ্ট্র ‘কঠিন শাস্তির’ ব্যবস্থা নেবে। তিনি জানান, এমন কিছু হলে তিনি ‘খুবই মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ হবেন’। তবে সৌদি আরবের সঙ্গে অস্ত্র চুক্তি বাতিল করার বিষয়ে তিনি রাজি নন। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, এটা করা হলে আমাদের নিজেদের শাস্তি দেওয়া হবে। তারা যদি আমাদের কাছ থেকে না কেনে, তাহলে রাশিয়া বা চীনের কাছ থেকে কিনবে।’

এ দিকে খাসোগি নিখোঁজের ঘটনাটি সৌদি আরবের সঙ্গে যৌথ তদন্তে সম্মত হয়েছে তুরস্ক। এরই মধ্যে সৌদি প্রতিনিধিদল তুরস্কে পৌঁছেছে। তবে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভুত কাভুসোগলু অভিযোগ করেছেন, সৌদি আরব তদন্তে সহযোগিতা করছে না। তিনি তুর্কি কর্তৃপক্ষকে কনস্যুলেট ভবনে ঢোকার অনুমতি দেওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন।

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কড়া সমালোচক খাসোগি গ্রেপ্তার-আতঙ্কে এক বছর আগে দেশ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছানির্বাসনে ছিলেন। তিনি ওয়াশিংটন পোস্টে কলাম লিখতেন। বলা হচ্ছে, সৌদি থেকে দুটি ব্যক্তিগত বিমানে আসা ১৫ সদস্যের একটি স্কোয়াড কনস্যুলেট ভবনের ভেতর খাসোগি হত্যায় অংশ নেয়। হত্যার পর ওই স্কোয়াড দ্রুত তুরস্ক ত্যাগ করে। তুরস্কের স্থানীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোয় ওই ১৫ জনের ছবি ও পরিচয় প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে তিন ব্যক্তি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত বিশেষ ইউনিটের সদস্য। এদের একজন সৌদি নিরাপত্তা বাহিনীর ফরেনসিক বিভাগের প্রধান।