সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রকে ১০ কোটি ডলার দিয়েছে সৌদি আরব!

সাংবাদিক জামাল খাসোগি। ছবি: এএফপি
সাংবাদিক জামাল খাসোগি। ছবি: এএফপি

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও মঙ্গলবার সৌদি সফরে গেছেন। উদ্দেশ্য, জামাল খাসোগির বিষয় নিয়ে আলোচনা। একই দিন সৌদি আরব ১০ কোটি ডলার দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রকে। এ ব্যাপারটিকে দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়েছেন কেউ কেউ। সন্দেহ করা হচ্ছে, জামাল খাসোগির অন্তর্ধান নিয়ে চাপে পড়া সৌদি আরব চলমান সংকট কাটিয়ে উঠতেই যুক্তরাষ্ট্রকে ওই অর্থ দিয়েছে।

ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রকে মঙ্গলবার সৌদি আরবের ১০ কোটি ডলার দেওয়ার বিষয়টি নিউইয়র্ক টাইমস প্রথম প্রকাশ করে। সেই প্রতিবেদনই সন্দেহ প্রকাশ করা হয়, সৌদি আরব এই অর্থ কি যুক্তরাষ্ট্রকে দিল খাসোগির অন্তর্ধানের বিষয়টি সামাল দেওয়ার জন্য?

সৌদি আরব অবশ্য বলছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার উত্তরপূর্বাঞ্চল পুনর্গঠনের জন্য রিয়াদ ১০ কোটি ডলার দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রকে। আর মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরও বলেছে, খাসোগি ইস্যু মোকাবিলার জন্য ওই অর্থ নেওয়া হয়নি।

এদিকে শুক্রবার সৌদি আরব যাচ্ছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দূত ব্রেট ম্যাকগার্ক। তিনি সৌদি আরবের কাছ থেকে অর্থ নেওয়ার বিষয়ে বলেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সৌদি সফরের সঙ্গে এই অর্থ গ্রহণের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা বরাবরই বিশ্বের বিভিন্ন বিপর্যস্ত এলাকার পুনর্গঠনে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে অর্থ সহায়তা প্রত্যাশা করে থাকি। আর এই অর্থদানের বিষয়টি নতুন কোনো ঘটনা নয়। দীর্ঘদিনের প্রক্রিয়ার অংশ।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, সিরিয়া সংকট নিরসনের জন্য সৌদি আরবের অর্থদানের এমন একটি ঘোষণা এসেছিল আগস্টে। এ নিয়ে কারও কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু প্রশ্নটা সেখানে—এমন এক সময় এই অর্থ দেওয়া হলো, যখন জামাল খাসোগির অন্তর্ধান নিয়ে পুরো বিশ্ব সৌদি আরবকে দুষছে। আর ওই দিন (মঙ্গলবার) মাইক পম্পেও সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে খাসোগির ব্যাপারে কথা বলেন। সাংবাদিক খাসোগি যুবরাজের সবচেয়ে বড় সমালোচক ছিলেন। সব মিলিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের তোলা প্রশ্ন ফেলে দেওয়ার মতো নয়।

ব্রেট ম্যাকগার্ক তাঁর সৌদি সফর সম্পর্কে বলেন, এসব অর্থ কোন প্রক্রিয়ায় কোন কোন খাতে ব্যয় করা হবে তার বিষয়ে সৌদির মতামত জানতে চাইবেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, সিরিয়া সংকট নিরসনে যুক্তরাষ্ট্র ২৩ কোটি ডলার ব্যয় করার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। সৌদির এই অর্থ সেখানে যোগ হবে।

প্রসঙ্গত, ব্যক্তিগত কাগজপত্র আনার জন্য গত ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেট ভবনে ঢোকেন সাংবাদিক জামাল খাসোগি। কিন্তু তিনি সেখান থেকে আর বেরিয়ে আসেননি। কনস্যুলেট ভবনের ভেতরে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছে তুরস্ক। তুরস্কের গণমাধ্যম বলছে, তাঁকে সেখানে কেটে টুকরো টুকরো করা হয়েছে। ওই হত্যাকাণ্ডে সৌদি আরবের ১৫ জনের একটি স্কোয়াড অংশ নেন। খাসোগি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কট্টর সমালোচক বলে পরিচিত ছিলেন। সৌদি রাজ পরিবারের রোষের শিকার এই সাংবাদিক যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছায় নির্বাসিত জীবন যাপন করছিলেন। তিনি সেখানে ওয়াশিংটন পোস্টে কলাম লিখতেন। ঘটনার দিন তিনি তুর্কি বাগ্‌দত্তা নারীকে বিয়ে করার জন্য তাঁর আগের সৌদি স্ত্রীকে তালাকের প্রমাণপত্র আনতে ওই দূতাবাসে গিয়েছিলেন।