পশ্চিমবঙ্গের নাম বদল কত দূর?

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নাম বদলের প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর প্রায় তিন মাস কেটে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার, বিশেষ করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এখনো নাম বদলের প্রস্তাবের অনুমোদনের সাড়া নেই।

এ বছরের ২৬ জুলাই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভায় সর্বসম্মতভাবে তিন ভাষাতেই (বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজি) ‘বাংলা’ করার প্রস্তাব গৃহীত হয়। এরপরে সেই প্রস্তাবসহ বিভিন্ন আনুষঙ্গিক কাগজপত্র পশ্চিমবঙ্গ সরকার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু সেই প্রস্তাব পাঠানোর পর আজ প্রায় তিন মাস হয়ে গেলেও নাম বদলের প্রস্তাব অনুমোদনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো সাড়া দেয়নি। এ নিয়ে রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে। কিন্তু উত্তর মেলেনি। পশ্চিমবঙ্গ সরকার নাম প্রস্তাবের অনুমোদন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে। এটাও জানায়নি—কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রস্তাব মানবে কি না?

নাম বদলের প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর বলা হয়েছে, এই রাজ্যের নাম আর পশ্চিমবঙ্গ থাকছে না। নতুন নাম হচ্ছে বাংলা। বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজি এই তিন ভাষায় লেখা হবে পশ্চিমবঙ্গের নাম ‘বাংলা’। এর আগে গত বছরের ২৯ আগস্ট রাজ্য বিধানসভায় পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তন করে বাংলা করার প্রস্তাব পাস হলেও সেখানে বলা হয়েছিল ইংরেজিতে এই নাম হবে বেঙ্গল আর হিন্দিতে হবে বাঙ্গাল। গত বছরের ২৯ আগস্ট পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভায় নাম পরিবর্তনের এই প্রস্তাব বিপুল ভোটের ব্যবধানে পাস হয়ে যায়। প্রস্তাবের পক্ষে পড়ে ১৮৯ ভোট আর বিপক্ষে পড়ে ৩১ ভোট। কিন্তু সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার এক চিঠিতে জানায়, যে নামই হোক না কেন তা একটিই নাম হতে হবে। বিভিন্ন ভাষায়ও ওই একই নাম রাখতে হবে। ফলে রাজ্য সরকার তিন ভাষায়ই ‘বাংলা’ করার সিদ্ধান্ত নেয়।

সংসদীয়বিষয়ক মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার অধিবেশনে এই নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব পেশ করেন। প্রস্তাব পাসের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আজ আমাদের কাছে এক ঐতিহাসিক দিন। বাংলা নামের প্রতি আমাদের আবেগ জড়িত। তাই এই রাজ্যের নাম বাংলা হওয়ায় আমরা গর্বিত। আশা করি, রাজ্যবাসীও খুশি। তাই রাজ্যবাসীকে জানাই অভিনন্দন। বাংলা নামে আমরা আজও স্বচ্ছন্দ বোধ করি। তাই আজ এই রাজ্যবাসীর জন্য এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হলো।’

পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তন নিয়ে রাজ্য মন্ত্রিসভায় গত ২০১৬ সালের ২ আগস্ট দুটি নামের প্রস্তাব গৃহীত হয়। বাংলা ও বঙ্গ। তবে বেশির ভাগেরই মত ছিল ‘বাংলা’ নামের পক্ষে। সেই নামকেই অনুমোদন করেন মমতা। তারপরে তা পেশ করেন বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে। মমতা বলেন, ‘এখন থেকেই আমরা এই রাজ্যের নাম বাংলা লিখব।’ গত ২৬ জুলাই অবশ্য বিধানসভায় নাম পরিবর্তনের সর্বশেষ প্রস্তাব পেশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

‘বাংলা’ নাম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল রাজনৈতিক মহলে। কেউ কেউ বলেছেন, আমাদের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ। রাজ্যের নাম বাংলা হলে সমস্যা হতে পারে। এ প্রসঙ্গে মমতা আগেই জানিয়ে দেন, ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল ঠিকই আছে। পাশে বাংলাদেশ তো একটা দেশ। আর রাজ্যের নাম বাংলা হলে অসুবিধে কোথায়? পাকিস্তানেও পাঞ্জাব আছে, আমাদের দেশেও পাঞ্জাব আছে।’

এর আগেও ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের নাম পরিবর্তন হয়েছে। সংযুক্ত প্রদেশের নাম পরিবর্তন হয়ে হয়েছে উত্তর প্রদেশ, হায়দরাবাদের পরিবর্তে হয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশ, মধ্যভারতের নাম হয়েছে মধ্যপ্রদেশ, উত্তরাঞ্চলের পরিবর্তে হয়েছে উত্তরাখন্ড, উড়িষ্যার পরিবর্তে হয়েছে ওডিশা, ত্রিবাঙ্কুর-কোচিনের পরিবর্তে কেরালা, মাদ্রাজের পরিবর্তে তামিলনাড়ু এবং মহীশূরের পরিবর্তে হয়েছে কর্ণাটক রাজ্য।

অবশ্য এই নাম পরিবর্তনের প্রস্তাবের পক্ষে ২৬ জুলাই সায় দিয়েছে কংগ্রেস ও বাম দলও। ফলে সর্বসম্মতিতে এই প্রস্তাব গৃহীত হয়।