খাসোগি হত্যা: সৌদির ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন বিশ্ব নেতারা, ট্রাম্পও

নিহত সাংবাদিক জামাল খাসোগি। ছবি: এএফপি
নিহত সাংবাদিক জামাল খাসোগি। ছবি: এএফপি

সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যার ঘটনায় সৌদির ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হতে পারেননি বিশ্ব নেতারা। এমনকি এ ঘটনায় সৌদির পক্ষে নমনীয় থাকা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও বলেছেন, খাসোগির ব্যাপারে সৌদি আরবের স্বীকারোক্তি নিয়ে তিনি ‘সন্তুষ্ট নন’। তবে হত্যার ব্যাপারে ক্ষমতাধর যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কিছু না জানার ‘সম্ভাবনা’ আছে বলে তিনি মনে করেন।

ঘটনার ১৭ দিন পর গতকাল শনিবার কনস্যুলেট ভবনের ভেতরেই সাংবাদিক জামাল খাসোগির মৃত্যু হয়েছে বলে স্বীকার করেছে সৌদি আরব। এর আগ পর্যন্ত দেশটি খাসোগি নিখোঁজের ব্যাপারে কিছু জানা নেই বলে জানিয়েছিল। সৌদির বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, ‘হাতাহাতিতে খাসোগি খুন’ হয়েছেন। এ ঘটনায় গোয়েন্দা উপপ্রধান আহমাদ আল-আসিরি ও যুবরাজ মোহাম্মদের জ্যেষ্ঠ ঘনিষ্ঠ সহযোগী সৌদ আল-কাহতানিকে বরখাস্ত করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৮ জন সৌদি নাগরিককে।

২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেট ভবনে ব্যক্তিগত কাগজপত্র আনার প্রয়োজনে ঢোকার পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন সৌদির খ্যাতনামা সাংবাদিক খাসোগি। শুরু থেকে তুরস্ক দাবি করে আসছে, খাসোগিকে কনস্যুলেট ভবনের ভেতর সৌদি চররা হত্যা করে লাশ টুকরো টুকরো করে ফেলে দিয়েছে কোথাও। গত বছর সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ক্ষমতা গ্রহণের পর রোষানলে পড়েন খাসোগি। তিনি দেশ ছেড়ে স্বেচ্ছা নির্বাসনে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে। ওয়াশিংটন পোস্ট-এ যুবরাজ মোহাম্মদের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে একের পর এক কলাম লেখেন। অভিযোগ উঠেছে, যুবরাজের নির্দেশে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এ হত্যা সংঘটিত হয়েছে।


আজ রোববার বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়, খাসোগির মৃত্যু নিয়ে সৌদি আরবের বিবৃতির ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিশ্ব নেতারা।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও বলেছেন, ‘উত্তর খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত আমি সন্তুষ্ট নই।’ তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় সৌদির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের সম্ভাবনা ছিল, কিন্তু অস্ত্র চুক্তি বাতিল করলে তাতে ‘সৌদি আরবের চেয়েও যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতিই বেশি হতো।’ খাসোগি হত্যার ব্যাপারে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদের কিছু না জানার ‘সম্ভাবনা’ রয়েছে বলে তিনি জানান।

জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল এই হত্যার নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি খাসোগির মৃত্যুর ব্যাপারে সৌদি ব্যাখ্যাকে ‘যথেষ্ট নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর এটাকে ভয়াবহ ঘটনা বলে বর্ণনা করেছে এবং এই হত্যার নেপথ্যে থাকা ব্যক্তিদের বিচারের মুখোমুখি করার আহ্বান জানিয়েছে।

ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোঁ-ইভ ল্য দ্রিয়ঁ ঘটনার আরও তদন্তের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, অনেক প্রশ্নের ‘এখনো উত্তর পাওয়া বাকি’।

যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহামসহ কয়েক জন সিনেটর সৌদি আরবের বক্তব্যের ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্সের পর এবার অস্ট্রেলিয়াও সৌদি আরবে অনুষ্ঠেয় বিনিয়োগ সম্মেলন থেকে নাম প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও নিউইয়র্ক টাইমস সূত্র উল্লেখ করে জানিয়েছে, খাসোগির মরদেহ কোথায় ফেলা হয়েছে, তা সৌদি আরব জানে না। কারণ হত্যার পর তাঁর দেহ টুকরো টুকরো করার পর তা ফেলে দেওয়ার জন্য ‘স্থানীয় কোনো সহযোগীকে’ দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। খাসোগির মরদেহের সন্ধানে পার্শ্ববর্তী বনে তল্লাশি চালিয়েছে তুরস্ক পুলিশ। এ ছাড়া সৌদি কনস্যুলেট ভবন ও কনসাল জেনারেলের বাসভবনেও তল্লাশি চালানো হয়েছে।

খাসোগির মরদেহ কোথায় তা এক টুইট পোস্টে জানতে চেয়েছেন তাঁর প্রেমিকা হাটিজে জেংগিস। খাসোগিকে নিয়ে আবেগময় কথা লিখেছেন সেখানে। বলেছেন, ‘হৃদয়ে শোক, চোখে জল, তোমার সঙ্গে বিচ্ছিন্নতায় আমরা বেদনাহত, আমার প্রিয় জামাল।’