ভোটের আগে 'বাংলা' নয়

বাংলাদেশ ও ভারতের সাধারণ নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গের নাম বদল নিয়ে সরকারি সিদ্ধান্তের সম্ভাবনা ক্ষীণ। রাজ্য সরকার চাইলেও পশ্চিমবঙ্গের নাম বদলে ‘বাংলা’ রাখার প্রস্তাবে ভারত সরকারের আপত্তি ঘোরতর। আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত অবশ্য এখনো নেওয়া হয়নি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সূত্র অনুযায়ী, প্রস্তাবটি গ্রহণে বিভিন্ন মহলে আপত্তি রয়েছে। সরকারকে সব দিক বিবেচনা করতে হয়। আপাতত বলা যায়, বাংলাদেশ ও ভারতের সাধারণ নির্বাচনের আগে এ বিষয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত ঘোষণার সম্ভাবনা কম।


পশ্চিমবঙ্গের নাম বদলের সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি করবে কি না, কেন্দ্রীয় সরকার সে বিষয়টিও নজরে রাখতে চায়। সে কারণে এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভিমত জানতে চাওয়া হয়েছে। ‘বাংলা’ নামে বাংলাদেশেও যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে, সে বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জানা। এই মন্ত্রণালয়ের সূত্র অনুযায়ী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চটজলদি কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের পক্ষে নয়। তারা সব দিক খতিয়ে দেখতে চায়। সরকারি সূত্র অনুযায়ী, বাংলাদেশ ভারতের বিশ্বস্ত বন্ধু ও প্রতিবেশী। ‘বাংলা’ নামে তাদেরও আপত্তি আছে। কারণ, এই নামকরণ আন্তর্জাতিক স্তরে বিভ্রান্তি বাড়াতে পারে। ভারত চায় না সেই সম্পর্কের মধ্যে অযথা কোনো জটিলতা সৃষ্টি হোক।

সামনে বাংলাদেশে সংসদীয় ভোট। ভারতের সাধারণ নির্বাচনও আগামী বছরের এপ্রিল-মে মাসে। এই সময়ে পশ্চিমবঙ্গের নাম বদলের বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার আদৌ কিছু করতে নারাজ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ‘বাংলা’র পক্ষে প্রস্তাব পাস করলেও রাজ্যের বিরোধী দল বিজেপির তাতে প্রবল আপত্তি আছে। আপত্তি বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বেও। রাজ্যের বিদ্বজ্জনদের মধ্যেও এই নামে দ্বিধা আছে। তা ছাড়া প্রস্তাবটি গৃহীত হলে সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন। ভোটের আগে বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার তাই ভাবতেই প্রস্তুত নয়। সরকারি এক সূত্রের কথায়, পশ্চিমবঙ্গের জায়গায় বাংলা অথবা অন্য কোনো নাম নিয়ে ভাবনাটা এখন সরকারের অগ্রাধিকার নয়। ভোট মিটে গেলে হ্যাঁ বা না বলা যাবে।

পশ্চিমবঙ্গ সরকার গত জুন মাসে রাজ্যের নাম বদলে ‘বাংলা’ রাখার প্রস্তাবটি কেন্দ্রে পাঠায়। যুক্তি ছিল, দেশ ভাগের পর বঙ্গদেশের পরিচয়ও ‘পূর্ব’ ও ‘পশ্চিম’-এ ভাগাভাগি হয়ে যায়। ‘পূর্ববঙ্গ’-র অস্তিত্ব প্রথমে হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান’, পরে ‘বাংলাদেশ’। ‘পূর্ব’ অস্তিত্বহীন হলেও আজও ‘পশ্চিমবঙ্গ’ জ্বলজ্বল করছে। এই ‘পশ্চিম’ এখন নিতান্তই অর্থহীন। কাজেই নতুন নামকরণ হোক ‘বাংলা’। রাজ্যের আরও একটি যুক্তি হলো, ইংরেজি বর্ণমালায় ‘ডব্লিউ’-এর অবস্থান একেবারে শেষে হওয়ার দরুন যেকোনো আসরে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল’-এর ডাক পড়ে একেবারে শেষে। নাম ‘বাংলা’ হলে রাজ্যটি উঠে আসবে প্রথম দিকে।

যুক্তি যা–ই হোক, ‘বাংলা’-কে কেন্দ্র করে ‘বাংলাদেশ’-এর সঙ্গে কোনো জটিলতা সৃষ্টি হতে দিতে কেন্দ্রীয় সরকার নারাজ। কেন্দ্র চায় না, এই নাম বদল আন্তর্জাতিক স্তরে কোনো বিভ্রান্তির জন্ম দিক। সরকারি ইঙ্গিতে স্পষ্ট, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত যা–ই হোক, তা দুই দেশের ভোট হয়ে যাওয়ার পরই জানানো হবে।