খাসোগি হত্যা তদন্তে সৌদির প্রধান কৌঁসুলি তুরস্কে

নিহত সাংবাদিক জামাল খাসোগি। ছবি: রয়টার্স
নিহত সাংবাদিক জামাল খাসোগি। ছবি: রয়টার্স

সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যা তদন্তে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে গেছেন সৌদি আরবের প্রধান কৌঁসুলি শেখ সৌদ আল-মোজেব। সেখানে ইস্তাম্বুলের প্রধান কৌঁসুলি ইরফান ফিদানের সঙ্গে তাঁর দেখা করার কথা। তিনি ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেট ভবন পরিদর্শন করবেন, যেখানে খাসোগিকে হত্যা করা হয়েছে। 

তুর্কি রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলুর বরাত দিয়ে এএফপির খবরে জানানো হয়, শেখ সৌদ আল-মোজেব গতকাল রোববার রাতে ব্যক্তিগত বিমানে ইস্তাম্বুল পৌঁছান।

খাসোগি হত্যার ঘটনায় নজিরবিহীন আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সৌদি আরব এ ব্যাপারে সতর্ক অনুসন্ধান চালাচ্ছে। এই সংকট থেকে উত্তরণে একের পর এক ধারাবাহিক পদক্ষেপ নিয়ে চলেছে। অথচ শুরুতে খাসোগি হত্যার কথা অস্বীকার করেছিল দেশটি।

২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেট ভবনে প্রবেশের পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন খাসোগি। শুরু থেকেই তুরস্ক দাবি করে আসছিল, রিয়াদ থেকে ইস্তাম্বুলে আসা ১৫ জন সৌদি চর কনস্যুলেট ভবনের ভেতরে খাসোগিকে হত্যা করে মরদেহ টুকরো টুকরো করে ফেলেছে। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নির্দেশে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। গত বছরের জুনে যুবরাজ মোহাম্মদ ক্ষমতা নেওয়ার পর দেশ ছেড়ে স্বেচ্ছায় নির্বাসনে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান খাসোগি। তিনি ওয়াশিংটন পোস্টে কলাম লিখতেন। সেখানে তিনি সৌদি সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেছিলেন।

খাসোগি নিখোঁজ হওয়ার ১৭ দিন পর প্রথমবারের মতো এক বিবৃতিতে তারা তুরস্কের ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেট ভবনের ভেতরেই খাসোগির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে। তবে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছিল, কনস্যুলেট ভবনে কয়েকজন সৌদি নাগরিকের সঙ্গে ‘হাতাহাতির’ ঘটনায় মারা যান খাসোগি। ওই বিবৃতি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে ‘হাতাহাতির সময় মৃত্যু’ থেকে সরে আসে তারা। বিবৃতিতে বলা হয়, খাসোগিকে হত্যা করা হয়েছে, তবে তা পূর্বপরিকল্পিত নয়। এ ব্যাখ্যাও ধোপে টেকেনি। পরে সৌদি কর্তৃপক্ষ বলেছে যে খাসোগিকে ভেবেচিন্তেই খুন করা হয়েছে।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে জামাল খাসোগি। ছবি: টুইটার
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে জামাল খাসোগি। ছবি: টুইটার

এএফপির খবরে বলা হয়, তুরস্কের তদন্তের ওপর ভিত্তি করে ২৫ অক্টোবর খাসোগি হত্যাকে পূর্বপরিকল্পিত বলে স্বীকার করার পর দেশটির প্রধান আইন কর্মকর্তা ইস্তাম্বুলে গেলেন।

মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিস গতকাল রোববার বলেছেন, সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবায়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সৌদি আরব এ ঘটনার ‘পূর্ণ’ তদন্ত করবে। বাহরাইনে এক আলোচনায় জিম ম্যাটিস আরও বলেন, সম্পূর্ণ ও স্বচ্ছ তদন্তের ব্যাপারে তাঁরা আলোচনা করেছেন। এতে পুরোপুরি সম্মতি জানিয়ে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, তাঁদের দিক দিয়ে এ নিয়ে কোনো বাধা নেই। জিম ম্যাটিসের বিশ্বাস, সৌদি আরব তুরস্কের তথ্য–প্রমাণগুলো তাদের তদন্তে যুক্ত করবে।  

খাসোগি হত্যার ঘটনায় সৌদি আরব দেশের ১৮ জন নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ওই ১৮ জনকে বিচারের মুখোমুখি করতে তুরস্কে পাঠানোর অনুরোধ করেছেন। তবে সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে সৌদি আরব জানিয়েছে, নিজ দেশেই তারা এর বিচার করবে।

একসময় সৌদি রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি খাসোগির মরদেহের সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি। ঘটনার পরপর খাসোগি হত্যায় সৌদি আরবকে তুমুলভাবে দোষারোপ করা প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান এখন আর সৌদি সরকারকে এ ঘটনায় সরাসরি দোষ দেওয়া বন্ধ করেছেন। তবে তিনি সৌদি আরবের কাছে জানতে চেয়েছেন, খাসোগির মরদেহ কোথায় রাখা আছে। তিনি আভাস দেন, খাসোগি হত্যার ব্যাপারে আরও তথ্য–প্রমাণ রয়েছে তাঁদের কাছে। 

সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান খাসোগি হত্যা ঘটনাকে ‘ন্যক্কারজনক’ উল্লেখ করে নিন্দা প্রকাশ করেছেন। এ হত্যাকাণ্ডে তাঁর কোনো ধরনের সম্পৃক্ততার বিষয় অস্বীকার করেছেন।