শোকে ভাসছে জাকার্তা

শোকে মুহ্যমান পুরো ইন্দোনেশিয়া। ছবি: এএফপি
শোকে মুহ্যমান পুরো ইন্দোনেশিয়া। ছবি: এএফপি

১৮৯ জন যাত্রী নিয়ে লায়ন এয়ারের উড়োজাহাজটি সাগরে বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় বহু পরিবারের স্বপ্নসাধ ও আনন্দের সলিলসমাধি ঘটেছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, এই দুর্ঘটনায় কারও বেঁচে থাকার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ। শোকে মুহ্যমান পুরো ইন্দোনেশিয়া। এর মধ্যে লায়ন এয়ার কর্তৃপক্ষ উড়োজাহাজটির যাত্রীদের পরিচয় শনাক্ত করেছে।

উড়োজাহাজটিতে ১৭৮ জন যাত্রী, ৩ শিশু, ২ জন পাইলট ও ৬ জন কেবিন ক্রু ছিলেন।

উড়োজাহাজটির পাইলট ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত তরুণ ভাবে সুনেজা। ৩১ বছর বয়সী এই পাইলট ২০১১ সালে লায়ন এয়ারে যোগ দেন। ৬ হাজার ঘণ্টা ফ্লাইট পরিচালনার অভিজ্ঞতা ছিল সুনেজার। কো–পাইলট ছিলেন হারভিনো। তাঁর অভিজ্ঞতা ছিল ৫ হাজার ঘণ্টা বিমান চালনার।

যাত্রীদের অনেকের স্বজন এখনো বিশ্বাস করতে পারছেন না—কাছের মানুষটি আর নেই। অনেকেই জাকার্তা বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছেন প্রিয়জনের কোনো সংবাদ পাওয়ার জন্য।

দাদির শেষকৃত্যে অংশ নিতে তাড়াহুড়ো করে জাকার্তা থেকে পাংকাল পিনাংয়ের উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন মিশেল ভার্জিনা বংকাল (২১)। সাধারণত লায়ন এয়ার ব্যবহার করেন না, তবে তাড়াহুড়ো থাকায় এই এয়ারওয়েজেই টিকিট কাটেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন ছোট ভাই ম্যাথুউ (১৩), বাবা অ্যাডোনিয়া (৫২)। তাঁরা কেউই এখন বেঁচে নেই বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মিশেলের বোন ভিনা বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘প্লেন ছাড়ার কিছুক্ষণ আগেও মায়ের সঙ্গে কথা হয় মিশেলের। অল্প সময় পরই ওই সংবাদ। দাদির শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ভয়াবহ আরেক শোক।’

ইন্দোনেশিয়ার অর্থ মন্ত্রণালয়ের ২০ কর্মকর্তা ছিলেন ফ্লাইটটিতে। ধারণা করা হচ্ছে, উড়োজাহাজের সঙ্গে সাগরে তাঁদেরও সলিলসমাধি ঘটেছে। শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

মুরতাদো কুর্নিয়াওয়ান অল্প কিছুদিন হলো বিয়ে করেছেন। বিয়ের পর কাজে যোগ দিতে পাংকাল পিনাং যাচ্ছিলেন তাঁর স্ত্রী। তিনি আর ফিরবেন না—এমনটা ভাবতেই পারছেন না মুরতাদো। বলেন, ‘আমি তাঁকে ছাড়া থাকতে পারব না। তাঁকে অনেক ভালোবাসি। তাঁকে শেষ কথা বলেছিলাম—সাবধানে থেকো। সে কোথাও গেলে আমি সব সময়ই চিন্তায় থাকতাম। টিভিতে দুর্ঘটনার খবর দেখে আমার সমস্ত শরীর নিস্তেজ হয়ে এল।’

গতকাল সোমবার সকালে লায়ন এয়ারের আনকোরা উড়োজাহাজ বোয়িং ৭৩৭ সাগরে বিধ্বস্ত হয়।