অমুসলিম উদ্বাস্তুদের ভোট পেতে নতুন চাল মোদির

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

ভারতের আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রতিবেশী দেশ থেকে আসা অমুসলিম উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে মোদি সরকার। বিশেষ করে ভোট রাজনীতিতে উদ্বাস্তুদের ভোটব্যাংককে ধরে রাখার জন্য ভারতের মোদি সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে। আর এ জন্য ভারতের সংসদে আনা হচ্ছে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল।

লোকসভা নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে ততই দুশ্চিন্তা বাড়ছে ভারতের শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত বিজেপির। ২০১৪ সালে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে বিজেপি একক শক্তিতে সরকার গড়ে ঘোষণা দিয়েছিল ১০ বছর ধরে এই বিজেপি ক্ষমতায় থাকবে। কিন্তু দিন যতই এগোচ্ছে এবং ৫ বছর যেতে না যেতেই জনপ্রিয়তা কমছে বিজেপির আর দুশ্চিন্তা বাড়ছে তাদের। এখন সর্বশেষ জনমত সমীক্ষায়ও আভাস দেওয়া হয়, ২০১৪ সালের ন্যায় এবার আর বিপুল ভোটের ব্যবধানে জিততে পারবে না বিজেপি বা বিজেপির গড়া এনডিএ। জিতলেও ভোট ব্যবধান হবে কম। আবার এমনও হতে পারে, সব বিরোধী দল যদি এক হয়ে মোদিবিরোধী জোট গঠন করতে পারে, সে ক্ষেত্রে বিজেপির পরাজয়ের ঝুঁকি থাকবে। তবুও বিজেপি এসব সম্ভাবনাকে মাথায় রেখেই ফের জয়ের জন্য মাঠে নেমে পড়েছে। এবার লক্ষ্য বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ভারতে আসা উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দিয়ে তাদের ভোটব্যাংককে নিশ্চিত করা।

২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে মোদি ঘোষণা দিয়েছিলেন পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ভারতে আসা অমুসলিম উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। সেই লক্ষ্যে ২০১৬ সালে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল-২০১৬ আনা হলেও বিরোধিতার কারণে সেই বিলটি সংসদীয় কমিটির কাছে পাঠানো হয়। এবার ফের সেই বিলটি পাস করার জন্য মোদি সরকার উদ্যোগী হয়েছে। এবার যদি এই বিল পাস করানো না যায়, তবে নির্বাচনের আগেই এই লক্ষ্যে অধ্যাদেশ আনতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার। সেই ইঙ্গিত দিয়েছে ভারতের সংবাদমাধ্যম। যাতে অমুসলিম উদ্বাস্তুদের ভোটব্যাংককে আরও নিশ্চিত করা যায়। এখন সংসদীয় কমিটি ওই নাগরিকত্বের খসড়া বিলটি খতিয়ে দেখছে।

এদিকে ভারত সরকার এবার ভারতের ৭ রাজ্যে প্রতিবেশী দেশ থেকে উদ্বাস্তু হয়ে আসা অমুসলিম উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য নির্দেশিকা জারি করেছে। এই নির্দেশিকার আওতায় আনা হয়েছে ভারতের ৭ রাজ্যের ১৬টি জেলাকে। ওই সব জেলার জেলা প্রশাসককে সেই সব জেলায় আসা প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের নাগরিকত্ব দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে ওই সব রাজ্যের বাকি জেলায় উদ্বাস্তুরা থাকলে তারা আবেদন করতে পারবেন সংশ্লিষ্ট রাজ্যের মুখ্য সচিবদের কাছে।

২০১৪ সালের আগে যাঁরা নির্যাতিত হয়ে বা প্রাণের ভয়ে দেশ ছেড়ে ভারতে এসে আশ্রয় নিয়েছেন, তাঁদের এই নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। নাগরিকত্ব দেওয়ার তালিকায় রয়েছে সংখ্যালঘু হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন, পারসি এবং খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের উদ্বাস্তুরা। বিশেষ করে ভারতের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আসা উদ্বাস্তুরা এই সুযোগ পাবেন। আর তালিকাভুক্ত ৭টি রাজ্য হলো গুজরাট, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, মহারাষ্ট্র, উত্তর প্রদেশ ও দিল্লি। তবে এই তালিকায় রাখা হয়নি পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও আসামকে। যদিও ভারতের এই তিনটি রাজ্যে সর্বাধিক উদ্বাস্তু এসেছেন বাংলাদেশ থেকে।

তালিকায় যে ১৬টি জেলার নাম উল্লেখ করা হয়েছে তা হলো ছত্তিশগড়ের রায়পুর; গুজরাটের আহমেদাবাদ, গান্ধীনগর ও কচ্ছ; মধ্যপ্রদেশের ভোপাল ও ইন্দোর; মহারাষ্ট্রের নাগপুর, মুম্বাই, পুণে ও থানে; রাজস্থানের জয়পুর, যোধপুর ও জয়সলমির; উত্তর প্রদেশের লক্ষ্ণৌ এবং দিল্লির দক্ষিণ ও পশ্চিম জেলা।

নির্দেশে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালের আগে উপরিউক্ত দেশগুলো থেকে যদি কেউ এসে ভারতে প্রবেশ করেন, তবে সে ক্ষেত্রে তিনি ভারতের নাগরিকত্ব লাভের জন্য আবেদন করতে পারবেন। ওই ৭টি রাজ্যের ১৬ জেলার জেলা প্রশাসকের কাছে এ–সংক্রান্ত নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। আরও বলা হয়েছে, ওই রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় যদি ওই সব দেশের উদ্বাস্তুরা থেকে থাকেন, তবে তাঁরা ওই সব রাজ্যের মুখ্য সচিবের কাছে এ–সংক্রান্ত আবেদন করতে পারেন। নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, ১৯৫৫ সালের ভারতের নাগরিকত্ব আইনের ৫ এবং ৬ ধারার আওতায় সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসক এবং মুখ্য সচিব আবেদনকারীদের নাগরিকত্ব প্রদান করতে পারবেন। কেন্দ্রীয় সরকার ২৫ অক্টোবর জারি করে এই নির্দেশিকা।