ইরানের ওপর 'কঠোরতম' মার্কিন নিষেধাজ্ঞা

মার্কিন অবরোধ আরোপের প্রতিবাদে তেহরানে সাবেক মার্কিন দূতাবাসের সামনে গতকাল রোববার যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের পতাকা পুড়িয়ে বিক্ষোভ করেন ইরানি নাগরিকেরা। ছবি: এএফপি
মার্কিন অবরোধ আরোপের প্রতিবাদে তেহরানে সাবেক মার্কিন দূতাবাসের সামনে গতকাল রোববার যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের পতাকা পুড়িয়ে বিক্ষোভ করেন ইরানি নাগরিকেরা। ছবি: এএফপি

ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র আজ সোমবার ‘কঠোরতম’ অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছে। বলা হচ্ছে, ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপে এত কঠোর আর কখনো হয়নি যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির অধীনে ইরানের ওপর থেকে তুলে নেওয়া নিষেধাজ্ঞার সবকিছু আবার বহাল করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন।

আজ সোমবার বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়, এই নিষেধাজ্ঞা ইরানের তেল রপ্তানি, ব্যাংক, জাহাজ শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ অর্থনৈতিক সব খাতেই আঘাত হানবে।

এর প্রতিবাদে গতকাল রোববার মার্কিন দূতাবাস দখলের ৩৯তম বার্ষিকীর দিন ‘মার্কিনরা নিপাত যাক’ স্লোগান তুলে হাজারো ইরানি বিক্ষোভ করেন।

এই পরিস্থিতির মধ্যে প্রতিরক্ষা সক্ষমতা প্রমাণে ইরানের সামরিক বাহিনী আজ ও কাল মঙ্গলবার সেনা মহড়ার আয়োজন করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচনের প্রচারের লক্ষ্যে যাত্রা শুরু হওয়ার আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তাঁর প্রশাসনের নীতির কারণে ইরান ইতিমধ্যে সংকটে পড়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘ইরানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ইরানের ওপর এযাবৎ আরোপ করা সব মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মধ্যে এটাই কঠোর। এখন আমরা দেখব, ইরান কী করে, কিন্তু তারা খুব ভালো কিছু করছে না, আমি এটা আপনাদের বলতে পারি।’

ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষার রাশ টেনে ধরতে ২০১৫ সালে করা পারমাণবিক চুক্তি গত মে মাসে প্রত্যাহার করে নেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

ওয়াশিংটনের ভাষ্য, তেহরানের ‘ক্ষতিকর’ কর্মকাণ্ড, যেমন: সাইবার হামলা, আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা ও মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ও মিলিশিয়াদের সহায়তা করা বন্ধ করতে চায়।

গতকাল ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, ‘আমরা ইরানের জনগণের প্রতি আমাদের সমর্থন নিশ্চিতে সযতনে কাজ করছি। আমাদের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে ইরানের ক্ষতিকর আচরণ পরিবর্তনের বিষয়টি নিশ্চিত করতে চাই। এটাই আমাদের লক্ষ্য। এটাই আমাদের মিশন। আমাদের প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে এটাই অর্জন করব।’

ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় ৭০০ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, যানবাহন, উড়োজাহাজ, প্রধান প্রধান ব্যাংক, তেল রপ্তানিকারক ও জাহাজ শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

মাইক পম্পেও বলেছেন, এই নিষেধাজ্ঞার কারণে শতাধিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ইরান থেকে তাদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ইরানের মূল আয়ের উৎস তেল রপ্তানিকারকেরা এক দিনে ১০ লাখ ব্যারেল তেল কম উত্তোলন করেছে।

এ ছাড়া ইরানকে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করতে ব্রাসেলভিত্তিক সুইফ নেটওয়ার্ক ইরানের প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আন্তর্জাতিক লেনদেনের সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তিতে থাকা আরও তিনটি দেশ—যুক্তরাজ্য, জার্মানি ও ফ্রান্স—এই নিষেধাজ্ঞার বিষয় নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। তারা ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে তারা ইরানের সঙ্গে ‘বৈধ বাণিজ্য’ চালিয়ে যাবে। লেনদেনের জন্য বিকল্প কোনো পদ্ধতি বা বিশেষ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত যানবাহন স্পেশাল পারপাজ ভেহিকল (এসপিভি) স্থাপন করবে। এরা যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি না হয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর বাণিজ্য চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সহায়তা করবে।

এরপরও বিশ্লেষকদের সন্দেহ, এসব ব্যবস্থা নিষেধাজ্ঞার প্রভাব সেভাবে কমাতে পারবে না।

সম্প্রতি মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী স্টিভেন নিউচিন হুঁশিয়ার করেছেন, যেসব প্রতিষ্ঠান এই অবরোধ কৌশলে এড়াতে চাইবে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের ‘আগ্রাসী’ লক্ষ্যে পরিণত হবে।

তবে নাম উল্লেখ না করে জানানো হয়েছে, আটটি দেশকে এ থেকে রেহাই দেওয়া হয়েছে। তুরস্ক ও চীনের পাশাপাশি এই তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ইতালি, ভারত, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া রয়েছে।

পম্পেও জানিয়েছেন, আটটি দেশের মধ্যে দুটি দেশ পর্যায়ক্রমে ইরান থেকে আমদানি বন্ধ করবে। আর বাকি ছয়টি দেশ আমদানি বড় আকারে কমিয়ে আনবে।