সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দারা ফিরে পাচ্ছেন জমির স্বত্ব

জমির মালিকানা ছিটমহলবাসীকে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে কোচবিহারের ভূমি দপ্তর। প্রথম আলো ফাইল ছবি
জমির মালিকানা ছিটমহলবাসীকে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে কোচবিহারের ভূমি দপ্তর। প্রথম আলো ফাইল ছবি

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে জমির মালিকানা ছিটমহলবাসীকে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে কোচবিহারের ভূমি দপ্তর। ভূমি দপ্তর বলছে, যারা যে স্থানে দখলে রয়েছে, সেভাবেই তৈরি করা হচ্ছে পরচা। মালিকানা সেভাবে দেওয়া হবে। তবে যেসব জমি নিয়ে বিবাদ আছে, তা মিটলে চূড়ান্তভাবে স্বত্ব দেওয়া হবে।

ভূমি দপ্তর জানায়, বর্তমানে দখল করা ব্যক্তিদের হাতে তুলে দেওয়া হবে সেই জমি। আবার যাঁদের কাছে কোনো কাগজপত্র নেই, আইন সংশোধন করে তাঁদের দখল করা জমি দিয়ে দেওয়া হবে। তাই পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় এ–সংক্রান্ত আইনের সংশোধন এনে তাঁদের হাতে জমি তুলে দেওয়া হবে। যদি কোনো জমির মালিকানা নিয়ে আপত্তি ওঠে, একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এর সুরাহা করা হবে। আর কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর ছিটমহলবাসী তাঁদের নামের রেকর্ডকৃত জমির মালিকানা পেয়ে যাবেন।

গত ২৯ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলায় প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই জেলার ছিটমহলবাসীর জমির স্বত্ব ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, আইন পাসে দেরি হলে প্রয়োজনে অরডিন্যান্স জারি করে সাবেক ছিটমহলবাসীর দখল করা জমির স্বত্ব দিতে হবে তাঁদের হাতে। একই সঙ্গে ছিটমহলবাসীর নানা অভিযোগ দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য ১৫ দিন সময় দেন তিনি।

এই নির্দেশের পর কোচবিহারের ভূমি রাজস্ব দপ্তর ছিটমহলবাসীর জমির স্বত্ব তাঁদের নামে দেওয়ার জন্য প্রক্রিয়া শুরু করে। কাজ শুরু করেছে রাজ্যের ভূমি মন্ত্রণালয়ও।

ছিটমহল বিনিময়ের তিন বছর পার হলেও এখনো জমির স্বত্ব পাননি সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দারা। তাতেই খেপেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা।

২০১৫ সালের ৩১ জুলাই গভীর রাতে ভারত ও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ১৬২টি ছিটমহল বিনিময় হয়। এর মধ্যে ভারতের ভূখণ্ডে ছিল বাংলাদেশের ৫১টি ও বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ভারতের ১১১টি ছিটমহল ছিল। দীর্ঘ ৬৮ বছর পর সেই ছিটমহল বিনিময় হয়।

এই ছিটমহল বিনিময়ের পর বাংলাদেশের ৯২১ জন বাসিন্দা ওই বছরের ২২ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে কোচবিহার জেলায় চলে যান। তবে ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশের ছিটমহলের কোনো বাসিন্দা বাংলাদেশে ফিরে যাননি। হিসাব অনুযায়ী, ভারতের অভ্যন্তরে ছিল বাংলাদেশের ১৪ হাজার ২১৪ জন বাসিন্দা। আর বাংলাদেশের ভেতরে ভারতীয় ছিটমহলে ছিল ৩৭ হাজার ৩৬৯ জন বাসিন্দা।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ দেওয়ার পর জমির মালিকানা ছিটমহলবাসীকে দেওয়ার জন্য প্রক্রিয়া শুরু করে কোচবিহারের ভূমি দপ্তর। ভারতের অভ্যন্তরে থাকা ৫১টি ছিটমহলের বাংলাদেশি বাসিন্দারা এখন ভারতীয় বাসিন্দা হয়ে গেছেন। এবার তাঁদের ভোগদখলে থাকা জমি তাঁদেরই হাতে তুলে দেওয়ার জন্য উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য প্রশাসন। শুরুও হয়েছে পরচা তৈরির কাজ। এই ৫১টি ছিটমহলে রয়েছে ৭ হাজার ১১০ একর জমি। এই জমি ফিরিয়ে দিতে তৈরি করা হচ্ছে ১৪ হাজার খতিয়ানের পরচা।