শ্রীলঙ্কায় রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা। ছবি: এএফপি
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা। ছবি: এএফপি

শ্রীলঙ্কায় বিরাজমান রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা দেশটির পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছেন। এ-সংক্রান্ত ডিক্রিতে তিনি স্বাক্ষর করেছেন। একসময়ের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী মাহিন্দা রাজাপক্ষকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করে নতুন সরকার গঠনে তিনি এই পদক্ষেপ নিচ্ছেন।

বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এটি গতকাল শুক্রবার মধ্যরাত থেকে কার্যকর করার কথা বলা হয়। আগামী ৫ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে বলে জানা গেছে।

বরখাস্ত হওয়া প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, এই পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষমতা নেই প্রেসিডেন্টের।

রাজাপক্ষেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বসানোর আগে প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা বিক্রমাসিংহেকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে বরখাস্ত করেন। গত ২৬ অক্টোবর রাজাপক্ষেকে প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা করেন। তবে বিক্রমাসিংহে তাঁকে বরখাস্ত করার নির্দেশে প্রত্যাখ্যান করে নিজেকে এখনো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দাবি করছেন। তাঁকে বরখাস্ত করাকে অবৈধ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

বিক্রমাসিংহের দল ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) একজন এমপি আজিথ পেরেরা বলেছেন, পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত অবৈধ এবং তিনি মনে করেন, এই সিদ্ধান্ত বাতিল হবে। বিবিসি অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘কোনো রক্তপাত ছাড়া আমরা নির্বাচন কমিশনকে এই সংকট শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের জন্য অনুরোধ করেছি।’

সিরিসেনা-রাজাপক্ষে শিবির নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে, কারণ নতুন সরকার গঠনের জন্য পার্লামেন্টে তাদের যথেষ্ট সমর্থন নেই। এদিকে পার্লামেন্টে সমর্থন বেশি থাকায় পার্লামেন্টে ভোটাভুটির পক্ষে বিক্রমাসিংহের দল ইউএনপি।

শ্রীলঙ্কার সংবিধানের ১৯তম সংশোধনী অনুসারে, পার্লামেন্টে ভোটাভুটি ছাড়া প্রধানমন্ত্রীকে প্রেসিডেন্ট বরখাস্ত করতে পারবেন না। আর পার্লামেন্টে ভোট হলে বিক্রমাসিংহেকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরানো যাবে না। কারণ, সিরিসেনার দল ইউনাইটেড পিপলস ফ্রিডম অ্যালায়েন্স (ইউপিএফএ) ও রাজাপক্ষের দল শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টির মিলিত আসনের সংখ্যা ৯৫ এবং বিক্রমাসিংহের দল ইউএনপির আসনসংখ্যা ১০৬। সমর্থন বেশি থাকায় ভোটাভুটিতে বিক্রামাসিংহের পক্ষে ভোট বেশি পড়বে।

এর আগে ২০১৫ সালে দীর্ঘ সময় ধরে প্রেসিডেন্ট পদে থাকা রাজাপক্ষেকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন সিরিসেনা। ওই সময় সিরিসেনার জোটে ছিলেন বিক্রমাসিংহে। তবে সিরিসেনা ও বিক্রমাসিংহে জোটের মধ্যে নানা সময়েই মতবিরোধ দেখা দেয়। সবশেষ ভারতকে একটি বন্দর লিজ দেওয়ার ব্যাপারে সরকারের পরিকল্পনা নিয়ে এই দুজনের মধ্যে চরম মতবিরোধ দেখা দেয়।