মতুয়া গুরুমায়ের আশীর্বাদ নিতে যাচ্ছেন মমতা

ঠাকুরনগরের মতুয়া মহাসংঘ আশ্রম মন্দির। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
ঠাকুরনগরের মতুয়া মহাসংঘ আশ্রম মন্দির। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

পশ্চিমবঙ্গে ভোটের রাজনীতিতে মতুয়া সম্প্রদায়ের একটা বিশেষ ভূমিকা রয়েছে অনেক দিন ধরেই। উত্তর ২৪ পরগনার ঠাকুরনগরে অবস্থিত মতুয়া সম্প্রদায়ের সংঘ গুরুর আশ্রম। ফলে, উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ, গাইঘাটা, নদীয়াসহ পশ্চিমবঙ্গের আরও কয়েকটি এলাকায় ভোট নির্ণায়ক শক্তি হিসেবে চিহ্নিত এখনো মতুয়ারা।

এই মতুয়া সম্প্রদায়ের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটা সুসম্পর্ক রয়েছে। মতুয়া সম্প্রদায়ের একটি বড় অংশ মমতার ভক্ত। মমতাও সুসম্পর্ক বজায় রেখেছেন মতুয়াভক্তদের সঙ্গে। ঠাকুরনগরে মতুয়াদের গুরুমা বীণাপাণি দেবী।

এই আশ্রমে প্রতিদিনই হাজির হন শত শত মতুয়াভক্ত। তাঁরা গুরুমায়ের আশীর্বাদ নেন। এই আশীর্বাদ নিতে একসময় ছুটে আসতেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিঙ্গুর আন্দোলনের পর মমতা কয়েকবার এসেছেন এই আশ্রমে। সর্বশেষ মমতা এই আশ্রমে গুরুমায়ের আশীর্বাদ নিতে এসেছিলেন ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের সময়। এরপর আর আসেননি।

ধর্মকর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও দিনে দিনে রাজনীতিতে ঝোঁক বাড়ছে মতুয়া সম্প্রদায়ের। বীণাপাণি দেবীর দুই ছেলে কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর ও মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর একসময়ে যোগ দেন তৃণমূল কংগ্রেসে। তাঁরা সাংসদ এবং বিধায়কও হয়েছেন। বীণাপাণি দেবীর বড় ছেলে কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর ২০১৪ সালে তৃণমূলের টিকিটে বনগাঁ কেন্দ্র থেকে হয়েছিলেন সাংসদ। তবে সাংসদ হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে তাঁর অকস্মাৎ মৃত্যু হয়। এরপরে তাঁর শূন্য আসনে উপনির্বাচনে স্ত্রী মমতাবালা ঠাকুর তৃণমূলের মনোনয়ন পেয়ে সাংসদ হন। এখনো তিনি তৃণমূলের সাংসদ।

অন্যদিকে, ছোট ছেলে মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর গাইঘাটা কেন্দ্র থেকে হয়েছিলেন বিধায়ক। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মঞ্জুলকৃষ্ণ জয়ী হয়ে পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রিসভার উদ্বাস্তুসংক্রান্ত প্রতিমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে পরে তিনি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। অবশ্য এরপর তিনি আবার বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন।

কালে কালে ঠাকুরনগরের মতুয়া সম্প্রদায় ভাগ হয়ে পড়েছে। তৈরি হয়েছে নতুন সংঘ। ঢুকে পড়েছে বিজেপি। লোকসভা নির্বাচনে ভোটব্যাংকে ভাগ বসানোর জন্য তৈরি তারা। তাই বিজেপিকে রুখতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার ঠাকুরনগরে হাজির হচ্ছেন মমতা ।

পশ্চিমবঙ্গের ২৯৪টি রাজ্য বিধানসভার আসনের ৫৭টি আসনের নির্ণায়ক শক্তি হিসেবে রয়েছে মতুয়ারা। পাশাপাশি লোকসভার ৪২টি আসনের মধ্যে ১০টি আসনেরও নির্ণায়ক শক্তি এই মতুয়ারা। তাই মতুয়াদের ভোটব্যাংক অক্ষুণ্ন রাখতে মমতা পাড়ি জমাচ্ছেন ঠাকুরনগরে কেন্দ্রীয় আশ্রমে।

মতুয়াদের আদি আশ্রম রয়েছে বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার ওড়াকান্দিতে। ভারত ভাগের পর প্রচুর মতুয়াভক্ত পশ্চিমবঙ্গে আসেন। তাঁরাই ১৯৪৭ সালের পর এই ঠাকুরনগরে তৈরি করেন তাঁদের দ্বিতীয় আশ্রম। এই আশ্রম এখন ভারতের কেন্দ্রীয় আশ্রম হিসেবে পরিচিত।

কাল দুপুরে প্রথমে বড়মা বীণাপাণি ঠাকুরকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাবেন মুখ্যমন্ত্রী। বড়মাকে শুভেচ্ছা জানানোর পর তিনি ঠাকুরনগরে আয়োজিত এক বিশাল সমাবেশে ভাষণ দেবেন।