বিজেপির রথযাত্রার পাল্টা কর্মসূচি তৃণমূলের

তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল ও বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল ও বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

বিজেপি-ঘোষিত রথযাত্রা নিয়ে এবার উত্তপ্ত হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি। এই রথযাত্রার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস, বাম দল ও জাতীয় কংগ্রেস। বিরোধীরা বলছে, বিজেপির রথযাত্রার বিরুদ্ধে তারাও পথে নামবে। রথযাত্রাকে টেক্কা দিতে ইতিমধ্যে পাল্টা কর্মসূচি নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।

আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের প্রচারের অংশ হিসেবে বিজেপি রাজ্যজুড়ে তিনটি সুসজ্জিত প্রচার রথ বের করছে। এই রথ পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি লোকসভা আসন এলাকা পরিভ্রমণ করে কলকাতায় এসে মিলবে। তারপর আগামী ২৩ জানুয়ারি কলকাতায় ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে আয়োজিত বিজেপির জনসভায় যোগ দেবে রথের সারথিসহ অন্যরা। সেখানে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ বিজেপির শীর্ষ নেতাদের যোগ দেওয়ার কথা।

তৃণমূল নেতা ও বীরভূম জেলার সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁরা রথযাত্রার সময় হরিনাম কীর্তনের আয়োজন করেছেন। হাজার হাজার মানুষ এদিন রথযাত্রার পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে রাস্তায় নেমে হরিনাম সংকীর্তন করবেন।

অনুব্রত মণ্ডল জানিয়েছেন, তাঁরা তাঁদের কর্মসূচি সফল করার লক্ষ্যে চার হাজার খোল ও আট হাজার করতালের ব্যবস্থা করেছেন। এই খোল-করতাল নিয়ে তাঁরা বিজেপির রথের বিরুদ্ধে হরিনাম সংকীর্তন করবেন।

রথযাত্রা নিয়ে বিশেষ করে বিজেপি ও তৃণমূল মুখোমুখি হওয়ায় রাজ্যর রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।

মূলত, আসন্ন লোকসভা নির্বাচন সামনে রেখে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি আগামী ডিসেম্বর মাসে রাজ্যের তিন প্রান্ত থেকে ‘গণতন্ত্র বাঁচাও’ নামে সুসজ্জিত তিনটি রথ বের করার ঘোষণা দেয়।

কেন্দ্রীয় নেতাদের রথযাত্রায় উপস্থিত হওয়া নিয়ে রাজ্য বিজেপি দুবার কর্মসূচির তারিখ পরিবর্তন করে। অবশেষে তারা জানিয়ে দেয়, রথ বের হবে আগামী ৭, ৯ ও ১৪ ডিসেম্বর।

কোচবিহার থেকে রথ শুরু হবে ৭ ডিসেম্বর। সাগরদ্বীপ থেকে শুরু হবে ৯ ডিসেম্বর। আর তারাপীঠ থেকে শুরু হবে ১৪ ডিসেম্বর। তিনটি রথই আগামী ২৩ জানুয়ারি এসে শেষ হবে কলকাতায়। তারপর কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে বিজেপি আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

রথযাত্রার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। রথযাত্রার বিভিন্ন সময় এতে পাঁচ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা যোগ দেবেন। রথ চলার পথে বিজেপি ২০০টি পথসভা করবে।

রথ তিনটি তৈরি হয়েছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে, আধুনিক বাসের ওপর। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এই রথে থাকবে ইন্টারনেট সুবিধাও। থাকবে বিশ্রামের জায়গা।

রথগুলো পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি লোকসভা কেন্দ্র ঘুরে শেষ হবে কলকাতায়। রথ বাঁচাতে প্রতিটি রথের সঙ্গে থাকবে বিজেপির ২০০ কর্মীর একটি বাইক বাহিনী। তাঁরাই রথের সামনে-পেছনে থাকবেন। রথ পাহারা দেবেন।

বিজেপির এই রথযাত্রা ঘোষণার পর সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র পাল্টা ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন, রাজ্যের মেহনতি ও শান্তিপ্রিয় মানুষ রাস্তায় নেমে বিজেপির রথযাত্রা আটকে দেবে। প্রয়োজনে রাস্তায় মানুষের দেয়াল তুলে দিতে হবে, যাতে বিজেপির রথের পথ বন্ধ হয়ে যায়। রথযাত্রা যেন কোনো পথ খুঁজে না পায়।

সিপিএমের পাশাপাশি এই রথযাত্রার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় তৃণমূল কংগ্রেসও।

সম্প্রতি মালদহে বিজেপির রথযাত্রা নিয়ে প্রস্তুতি কমিটির বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে আয়োজিত জনসভায় দলের নারী মোর্চার পশ্চিমবঙ্গ সভাপতি লকেট চট্টোপাধ্যায় হুমকি দিয়ে বলেন, বাংলায় রথযাত্রা আটকানোর চেষ্টা হলে, যাঁরা তা করবেন, তাঁদের রথের চাকাতেই পিষে মারা হবে।

লকেটের হুমকির পরই মালদহের কংগ্রেস সভাপতি সাংসদ মৌসুম বেনজির নূর প্রশ্ন করেন, ‘বিজেপির এটাই সংস্কৃতি?’

জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি বাবলা সরকার বলেন, রাজনীতির নামে বিজেপির এই গুন্ডামি বরদাশত করা হবে না।

গতকাল রোববার হুগলিতে এক জনসভায় বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ পাল্টা হুমকি দিয়ে বলেছেন, এবার মারের বদলা হবে মার। আর হাসপাতালে কাউকে পাঠানো হবে না।

জনসভা করে ফেরার পথে দিলীপ ঘোষের গাড়িবহরে হামলা হয়। বিজেপি নেতা জয় ব্যানার্জির গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। প্রতিবাদে আজ বিজেপি রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ মিছিলের ডাক দিয়েছে।