ব্রেক্সিট-পরবর্তী সম্পর্কের কাঠামো চূড়ান্ত

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে

বিচ্ছেদের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য ও অন্যান্য আদান-প্রদানের সম্পর্ক কেমন হবে, সে বিষয়ে একটি খসড়া চুক্তিতে সম্মত হয়েছে উভয় পক্ষ। গতকাল রাতে ইইউ প্রেসিডেন্ট জ্যঁ ক্লদ জাংকারের সঙ্গে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের বৈঠকের পর আজ বৃহস্পতিবার সকালে উভয় পক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে এই সম্মতির বিষয়টি জানায়। বিচ্ছেদ চুক্তি স্বাক্ষরে ব্রিটিশ এমপিদের সমর্থন আদায়ের ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে নির্ধারিত এই রূপরেখা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।

ইউরোপীয় কাউন্সিলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে নির্ধারিত এই রূপরেখায় বিচ্ছেদ–পরবর্তী বাণিজ্য, নিরাপত্তা ও অন্যান্য আদান-প্রদানের বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত হয়েছেন তাঁরা। এই রূপরেখা ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে সমঝোতার ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে ব্রাসেলস থেকে টেলিকনফারেন্সে মন্ত্রীদের এই কাঠামোর বিষয়ে অবহিত করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে এমপিদের সামনে এই খসড়া চুক্তির বিষয়টি ‍তুলে ধরার কথা রয়েছে।

২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত এক গণভোটে যুক্তরাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ইইউ থেকে বিচ্ছেদের পক্ষে রায় দেয়। ব্রেক্সিট (ব্রিটেন এক্সিটের সংক্ষেপিত রূপ) নামে পরিচিত এই বিচ্ছেদ।

শুরুতেই ইইউর পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয় যে আগে সব দেনা-পাওনা মিটিয়ে যুক্তরাজ্যকে সম্পর্ক গুটিয়ে নিতে হবে। তারপর ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা। সেই শর্ত মোতাবেক দীর্ঘ দুই বছরের দর–কষাকষির পর গত সপ্তাহে বিচ্ছেদ বিষয়ে একটি খসড়া চুক্তিতে পৌঁছায় উভয় পক্ষ। আগামী রোববার ব্রাসেলসে ইইউর বিশেষ সম্মেলনে ওই চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা। এরপর যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট এবং ইইউর সদস্যদেশগুলোর পার্লামেন্টের অনুমোদন পেলেই এই চুক্তি কার্যকর হবে।

বিচ্ছেদবিষয়ক চুক্তিটি আইনগতভাবে সুরক্ষিত (লিগ্যালি বাইন্ডিং)। কিন্তু ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে নির্ধারিত রূপরেখা তা নয়। এটা কেবলই রাজনৈতিক ঘোষণা (পলিটিক্যাল ডিকলারেশন)। বিচ্ছেদ চুক্তির পাশাপাশি ভবিষ্যৎ সম্পর্কের সম্ভাব্য কাঠামোর প্রতিশ্রুতি হিসেবে এই রাজনৈতিক ঘোষণা থাকবে।

ভবিষ্যৎ সম্পর্কের রূপরেখায় বলা হয়েছে, উভয় পক্ষের নৈতিক অবস্থানকে সমুন্নত রাখার পাশাপাশি অধিকার ও দায়িত্বের ভারসাম্য বজায় রাখা হবে। ইইউর মৌলিক নীতিগুলো সুরক্ষিত থাকবে। একই সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সার্বভৌমত্ব ও অভ্যন্তরীণ বাজারের সুরক্ষাও বজায় থাকবে, যাতে যুক্তরাজ্যে অনুষ্ঠিত ২০১৬ সালের গণভোটের রায়ের প্রতিফলন বজায় থাকে।

গত সপ্তাহে বিচ্ছেদ চুক্তির খসড়া প্রকাশিত হওয়ার পর তা নিয়ে যুক্তরাজ্যে তুমুল বিরোধ দেখা দেয়। বিরোধী দল লেবার পার্টি, সরকারের অংশীদার ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টিসহ (ডিইউপি) ক্ষমতাসীন দল কনজারভেটিভের অনেক এমপি এই চুক্তির বিপক্ষে অবস্থান নেবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন। সমালোচকেরা বলছেন, এই চুক্তি যুক্তরাজ্যকে ইইউর অধীন করে রাখবে। এটা প্রকৃত ব্রেক্সিট নয়।

এই বিরোধ সামাল দিতে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে অন্তত একটি রূপরেখা তৈরিতে ইইউ নেতাদের চাপ দেন। যার ফল হিসেবে বিচ্ছেদ চুক্তির পাশাপাশি ভবিষ্যৎ সম্পর্কের সম্ভাব্য কাঠামোর এ ঘোষণা থাকবে।

২০১৯ সালের ২৯ মার্চ রাত ১১টায় ব্রেক্সিট কার্যকর হবে বলে দিনক্ষণ ঠিক করা আছে। তবে বিচ্ছেদ চুক্তি অনুযায়ী ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে যুক্তরাজ্য ও ইইউর মধ্যকার সম্পর্কের কোনো পরিবর্তন ঘটবে না। এই অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে বিচ্ছেদ–পরবর্তী সম্পর্ক চূড়ান্ত করতে হবে উভয় পক্ষকে। আর সেই আলোচনার ভিত্তি হবে নির্ধারিত এই কাঠামো।