মার্কিন সিনেট নিশ্চিত, সৌদি যুবরাজ খাসোগি হত্যায় জড়িত

সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ডে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান জড়িত বলে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি নিশ্চিত মার্কিন সিনেটররা। গতকাল মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর পরিচালক জিনা হাসপেল দেশটির সিনেটের বিভিন্ন কমিটির সদস্যদের এ বিষয়ে জানান। এরপরই সিনেটররা এমন মন্তব্য করেন। তবে সিনেটের আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটি এ ব্যাপারে তেমন কোনো কথা বলেননি।

সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম বলেন, জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ডে মোহাম্মদ বিন সালমান সহযোগিতা করেছেন। সাউথ ক্যারোলাইনার রিপাবলিকান এই সিনেটর সৌদি যুবরাজকে ‘তোবড়ানো বল’, ‘উন্মাদ ও বিপজ্জনক’ বলে উল্লেখ করেছেন।

গত অক্টোবরে ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে খাসোগিকে হত্যার বিষয়ে গ্রাহাম বলেন, ‘সেখানে ধূমায়িত বন্দুক ছিল না...ধূমায়িত করাত তো ছিল।’ যত দিন এই যুবরাজ ক্ষমতায় আছে তত দিন তিনি ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি আরবের জড়িত থাকা বা দেশটির কাছে অস্ত্র বিক্রির বিষয়টি সমর্থন করতে পারছেন না।

নিউ জার্সির ডেমোক্র্যাটদলীয় সিনেটর বব মেনেনদেজও একই মতামত পোষণ করেছেন। তিনি বলেন, বিশ্বমঞ্চে এমন ধরনের কোনো কর্মকাণ্ড মেনে নেওয়া হবে না—যুক্তরাষ্ট্রের উচিত এমন স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন বার্তা পৌঁছে দেওয়া।

আরেক সিনেটর বব করকার সাংবাদিকদের বলেন, ‘সৌদি যুবরাজ যে এ হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে, এ নিয়ে আমার মনে কোনো প্রশ্ন নেই।’ টেনিস অঙ্গরাজ্যের এই সিনেটর বলেন, বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করালে তাঁর দোষী সাব্যস্ত হতে ৩০ মিনিট সময় লাগবে না। ক্রোকার মনে করেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ ঘটনায় সৌদি যুবরাজের নিন্দা না জানিয়ে এই সাংবাদিক হত্যাকে সমর্থনই জানিয়েছেন।

আরেক রিপাবলিকান সিনেটর রিচার্ড শেলবি বলেন, ‘এখন প্রশ্ন হলো আপনি সৌদি যুবরাজ ও তাঁর নেতৃত্বাধীন জোটকে কীভাবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন করবেন?’

সিনেট এখন ইয়েমেনে সৌদি জোটের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা বন্ধ করতে একটি প্রস্তাব এনে তার ওপর সরাসরি ভোটের পরিকল্পনা করছে।

বিয়েসংক্রান্ত নথি সংগ্রহ করতে গত ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলের সৌদি আরবের কনস্যুলেটে গিয়েছিলেন খাসোগি। ওই কনস্যুলেটের ভেতর তাঁকে হত্যা করা হয়। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের কলাম লেখক এবং যুবরাজ সালমানের কঠোর সমালোচক ছিলেন। খাসোগি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতেন। সেখানে থেকেই তিনি সৌদি আরব এবং মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি নিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টে লিখতেন।

এদিকে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, ওয়াশিংটন পোস্ট ও নিউইয়র্ক পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, সিআইএর কাছে তথ্য আছে, খাসোগি হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি যিনি পর্যবেক্ষণ করেছেন, সেই সৌদ আল-কাহতানির সঙ্গে ওই হত্যাকাণ্ডের আগে ও পরে যুবরাজ সালমান ১১টি খুদে বার্তা আদান-প্রদান করেছেন।

টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, সিআইএর প্রতিবেদন ফাঁস হওয়ার ঘটনায় খেপেছেন হাসপেল। কারণ, এ প্রতিবেদন ফাঁস হওয়ার পর সৌদি আরবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হোয়াইট হাউসের ওপর চাপ বেড়েছে। যদিও এ প্রতিবেদন গ্রহণ করেননি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।