যুক্তরাজ্যে গৃহবিবাদ প্রতিদিনই নতুন মোড় নিচ্ছে

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে সম্পাদিত ব্রেক্সিট চুক্তির অনুমোদন প্রশ্নে যুক্তরাজ্যে গৃহবিবাদ প্রতিদিনই নতুন মোড় নিচ্ছে। চুক্তি বিষয়ে সরকারকে দেওয়া অ্যাটর্নি জেনারেল জিওফরি কক্সের পূর্ণাঙ্গ পরামর্শ (লিগ্যাল অ্যাডভাইস) গতকাল বুধবার প্রকাশিত হওয়ার পর ‘ব্যাক স্টপ’ প্রশ্নে বিতর্ক চড়াও হয়েছে।

অ্যাটর্নি জেনারেলের পরামর্শে বলা হয়েছে, ‘ব্যাক স্টপ’ এর কারণে ইইউর সঙ্গে যুক্তরাজ্য দীর্ঘমেয়াদি সমঝোতায় আটকা পড়ার ঝুঁকি আছে। এর ফলে অনির্দিষ্টকালের জন্য নর্দান আয়ারল্যান্ড ইইউর আইনের অধীনে চলে যেতে পারে। যুক্তরাজ্য এককভাবে এ ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না। এতে ইইউর সম্মতি লাগবে।

সরকার এই আইনি পরামর্শ গোপন রাখতে চেয়েছিল। কিন্তু মঙ্গলবার সংসদে ভোটাভুটিতে হেরে ওই পরামর্শ প্রকাশে বাধ্য হন প্রধানমন্ত্রী মে।

চুক্তির বিরোধীরা বলছেন, ‘ব্যাক স্টপ’ ব্যবস্থার কারণে নর্দান আয়ারল্যান্ড ইইউ আইনের অধীনে থেকে যাবে। এর ফলে যুক্তরাজ্যের বাকি তিন অংশ ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড এবং ওয়েলসের সঙ্গে এর একটি আইনি দূরত্ব তৈরি হবে। এটা যুক্তরাজ্যের বর্তমান কাঠামো ভেঙে যাওয়ার শামিল।

‘ব্যাক স্টপ’ বিষয়টি আয়ারল্যান্ড সীমান্ত নিয়ে বেশ জটিল একটি ব্যবস্থা। যুক্তরাজ্যের অংশ নর্দান আয়ারল্যান্ড এবং স্বাধীন আয়ারল্যান্ডের মধ্যকার সীমান্ত উন্মুক্ত রাখার বিষয়ে একটি চুক্তি আছে। যেটি ‘গুড ফ্রাইডে অ্যাগ্রিমেন্ট’ নামে পরিচিত। এই চুক্তিতে আয়ারল্যান্ডের উভয় অংশের মধ্যকার লোকজন ও পণ্যের অবাধ যাতায়াতের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে।

স্বাধীন আয়ারল্যান্ড ইইউর সদস্য। আর যুক্তরাজ্য ইইউ ছেড়ে আসতে চাইছে। এতে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ইইউ নাগরিকদের অবাধ যাতায়াত ও সম আইনে ব্যবসা-বাণিজ্য করার নিয়ম যে বলবৎ থাকবে না সেটিই স্বাভাবিক। এ অবস্থায় ইইউর সদস্য স্বাধীন আয়ারল্যান্ড আর যুক্তরাজ্যের অংশ নর্দান আয়ারল্যান্ডের মধ্যকার সীমানা উন্মুক্ত রাখার চুক্তি রক্ষা কিভাবে সম্ভব-তা নিয়ে বাঁধে বিপত্তি।

ব্রেক্সিট সমঝোতায় যুক্তরাজ্য ও ইইউ- উভয় পক্ষ নীতিগতভাবে একমত হয় যে আয়ারল্যান্ড সীমান্ত উন্মুক্ত রাখার বিষয়টি রক্ষা করতে হবে। সীমান্ত উন্মুক্ত রাখার কৌশল হিসেবে এই ‘ব্যাক স্টপ’ ধারণার আবির্ভাব। এতে বলা হচ্ছে, নর্দান আয়ারল্যান্ড ইইউ আইনের অধীনে থাকবে। সীমান্তে বাধা সৃষ্টি না করে নর্দান আয়ারল্যান্ডে বাণিজ্যিক শুল্ক ও যাচাই-বাছাইয়ের কাজগুলো করা হবে।

ব্রেক্সিট চুক্তি অনুযায়ী ২০১৯ সালের ২৯ মার্চ ইইউর সঙ্গে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ বা ব্রেক্সিট কার্যকর হবে। তবে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে বিদ্যমান সম্পর্ক বজায় থাকবে। এ সময়ের মধ্যে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নির্ধারণের মাধ্যমে আয়ারল্যান্ড সীমান্ত উন্মুক্ত রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করা না গেলে তবেই এই ‘ব্যাক স্টপ’ ব্যবস্থা কার্যকর হবে।

স্কটল্যান্ডের তরফ থেকে দাবি উঠেছে, ব্রেক্সিটের পর নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড যদি ইইউর একক বাজার (সিঙ্গেল মার্কেট) এবং শুল্ক জোটের (কাস্টমস ইউনিয়ন) অধীন থাকতে পারে, তবে স্কটল্যান্ডও একই সুবিধা ধরে রাখতে চায়।

অন্যদিকে নর্দান আয়ারল্যান্ডের ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টি বলছে, নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড যুক্তরাজ্যের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে-এমন কিছু তারা মানবেন না। চুক্তিবিরোধী অন্যান্য এমপিও এই ‘ব্যাক স্টপ’ ব্যবস্থা নিয়ে ঘোর আপত্তি তুলেছেন।

তবে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে চুক্তির পক্ষে অবিচল আছেন। আজ বৃহস্পতিবার এক রেডিও আলোচনায় তিনি বলেন, এ কথা ঠিক যে, ইইউ’র সম্মতি ছাড়া যুক্তরাজ্য এককভাবে ‘ব্যাক স্টপ’ ব্যবস্থা থেকে সরতে পারবে না। কিন্তু এই ‘ব্যাক স্টপ’ ব্যবস্থা চালু হবে কি-হবে না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার যুক্তরাজ্যের আছে। ইইউ এবং যুক্তরাজ্য কেউ ‘ব্যাক স্টপ’ ব্যবস্থা চালু হোক এমনি চায় না বলে তাঁর মন্তব্য।

তবে প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যও মানছেন না সমালোচকেরা। তাঁরা বলছেন, বাস্তবতা হলো- অবাধ বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনে ব্যর্থ হলেই সক্রিয় হয়ে যাবে ‘ব্যাক স্টপ ব্যবস্থা’। অথবা ‘ব্যাক স্টপ ব্যবস্থা’ ঠেকাতে হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে।