ইন্দোনেশিয়ায় সুনামিতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২২

সুনামিতে বিধ্বস্ত বাড়িঘর। ছবি: এএফপি
সুনামিতে বিধ্বস্ত বাড়িঘর। ছবি: এএফপি

ইন্দোনেশিয়ার সুন্দা প্রণালিকে ঘিরে থাকা সৈকত এলাকায় ভয়াবহ সুনামি আঘাত হেনেছে। এতে অন্তত ২২২ জন নিহত ও ৭৪৫ জন আহত হয়েছে। গত শনিবার রাতে এই সুনামির আগে স্থানীয় একটি আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়। কোনো রকম পূর্বসতর্কতা না পাওয়ায় এত মানুষ হতাহত হন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এই সুনামির আগে গত সেপ্টেম্বরে ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়াশি দ্বীপের পালু শহরে ভূমিকম্প ও সুনামিতে কয়েক হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে। এ ছাড়া ২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর পশ্চিমাঞ্চলীয় সুমাত্রা দ্বীপের উপকূলে সাগর তলদেশে ৯ দশমিক ৩ মাত্রার ভূমিকম্প-পরবর্তী সুনামিতে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কয়েকটি দেশে ২ লাখ ২০ হাজার মানুষ মারা যায়। তাদের মধ্যে ১ লাখ ৬৮ হাজারজনই ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক।

সুনামির কারণ সম্পর্কে ইন্দোনেশিয়ার কর্তৃপক্ষ বলেছে, একদিকে শনিবার ছিল পূর্ণিমা, অন্যদিকে আনাক ক্রাকাতোয়া আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের পর সাগরতলে ভূমিধস। এই দুই কারণে সাগরের পানি অস্বাভাবিক ফুলে ওঠে। জাভা ও সুমাত্রার মধ্যে সুনদা প্রণালিতে এই আগ্নেয়গিরিটির অবস্থান।
ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় দুর্যোগবিষয়ক সংস্থার মুখপাত্র সুতপো পুরব নুগরহো বলেন, শনিবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে দক্ষিণাঞ্চলীয় সুমাত্রা উপকূল ও জাভার পশ্চিমাংশে সুনামি আঘাত হানে। সুনামির তোড়ে কয়েক শ বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়। এই সুনামির আগে একটি আগ্নেয়গিরি থেকে লাভার উদ্গিরণ শুরু হয়।
মুখপাত্র আরও বলেন, সুনামি আঘাত হানার পরপরই অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া লোকজনকে উদ্ধারে অভিযানে নামেন। সর্বশেষ খবরে ২২২ জন নিহত ও ৭৪৫ জন আহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত তিনটি অঞ্চলে ৩০ জন নিখোঁজ রয়েছেন। নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে। প্রাথমিকভাবে কর্তৃপক্ষ সুনামিকে জোয়ার মনে করে জনগণকে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিল। অনুমানের এই ভুলের জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছে কর্তৃপক্ষ।

প্রকাশিত একটি ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, সুনামির সময় সাগর থেকে ধেয়ে আসা জলোচ্ছ্বাস জাভার পশ্চিমে একটি সৈকতে চলা উন্মুক্ত কনসার্টের মঞ্চে থাকা ‘সেভেনটিন’ ব্যান্ড দলের সদস্যদের ও তাঁদের সামনে থাকা সংগীতপিপাসু দর্শকদের ওপর
আছড়ে পড়ে।
ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় অঞ্চলের পরিস্থিতি নিয়ে প্রকাশ হওয়া সুনামি-পরবর্তী আরও কিছু দৃশ্যে দেখা যায়, সমুদ্রসৈকতের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে সারি বেঁধে উপড়ে আছে শত শত গাছ। সেই সঙ্গে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে বিধ্বস্ত বাড়িঘরের ইস্পাতের ছাদ, কাঠ ও আবর্জনার স্তূপ।

কারিতার সাগরসৈকত থেকে বেঁচে ফেরা ব্যক্তিদের একজন আসেপ পেরাংকাত বলেন, সুনামি যখন এ শহরকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন তিনি সপরিবার সেখানেই ছিলেন। নিজ চোখে দেখেছেন সাগর থেকে ছুটে আসা বিশালাকার ঢেউয়ের ধ্বংসযজ্ঞের ক্ষমতা। একেকটা ঢেউ গাড়িগুলোকে পুতুলের মতো ভাসিয়ে ১০ মিটার উঁচুতে আছড়ে ফেলছিল। একই অবস্থা ছিল ভারী কনটেইনারগুলোরও।
বার্তা সংস্থাকে এই প্রত্যক্ষদর্শী আরও বলেন, সৈকতের কাছাকাছি থাকা ভবনগুলো ঢেউয়ের আঘাতে বিধ্বস্ত হয়েছে। মাটিতে উপড়ে পড়েছে অসংখ্য গাছপালা ও বৈদ্যুতিক খুঁটি। বিপর্যয়ের আঁচ পেয়ে যেসব বাসিন্দা কাছাকাছি বনভূমিতে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়, তারা প্রাণে বেঁচে গেছে।
সুনদা প্রণালির উল্টো পাশের লামপাং প্রদেশের বাসিন্দা লুতফি আল রশিদ (২৩) বলেন, বিপদ টের পেয়ে প্রাণ বাঁচাতে তিনি কালিয়ান্দা শহরের সৈকত থেকে দৌড়ে পালিয়ে আসেন। তিনি বলেন, ‘আমি মোটরসাইকেলে করে পালানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু মোটরসাইকেল স্টার্ট না হওয়ায় তা ফেলেই দৌড়াতে শুরু করি এবং সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করতে থাকি।’