অশান্ত উত্তর-পূর্ব ভারত, বনধ ঘিরে সংঘর্ষ

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে আসামে হরতাল। ছবি: ইনসাইডএনইয়ের সৌজন্যে
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে আসামে হরতাল। ছবি: ইনসাইডএনইয়ের সৌজন্যে

বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার চেষ্টা ব্যর্থ করতে আজ মঙ্গলবার ডাকা উত্তর পূর্বাঞ্চল বনধে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে আসামে। অশান্তির আগুনে জ্বলছে ত্রিপুরাও। জনতা-পুলিশ সংঘর্ষে ত্রিপুরায় জখম অন্তত ২৫। পাশাপাশি দিল্লিতেও সংসদ উত্তাল হয়ে ওঠে নাগরিকত্ব বিলকে কেন্দ্র করে।

আসামকে অচল করে দিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে, গাড়ি ভাঙচুর করে শক্তি প্রদর্শন বনধ সমর্থকদের। আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছেন অসমিয়া বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।
বিজেপির পার্টি অফিস থেকে শুরু করে আসামে আক্রান্ত একাধিক প্রতিষ্ঠান। বহু বাড়িঘরে আগুন লাগানো হয়েছে। বাদ যায়নি প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ির ছবিও। ঘেরাও করা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের পৈতৃক ভিটে।
লোকসভা ভোটের আগে নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সংখ্যালঘুদের বাড়তি সুবিধা দিতে চায় বিজেপির নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার।
সংসদের বিবেচনাধীন নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ফের পাশের উদ্যোগ নিয়েছে বিজেপি সরকার। এই বিলে অমুসলিম অনুপ্রবেশকারীদের জন্য ভিত্তি বছর ধরা হয়েছে, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর।
মঙ্গলবার বিলটি লোকসভায় পেশ হতেই প্রায় সব কটি রাজনৈতিক দলের আক্রমণের মুখে পড়তে হয় শাসক দল বিজেপিকে। কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম-সহ সব দলই এই অশান্তির জন্য বিজেপিকেই দায়ী করে। অন্যদিকে, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং দাবি করেন, আসাম থেকে শুরু করে গোটা দেশের স্বার্থেই বিলটি পাশ করাতে চায় কেন্দ্র।
কিন্তু দাবি উঠছে, ১৯৭১-এর ২৫ মার্চকেই ভিত্তি বছর ধরতে হবে। বিদেশিদের জন্য আইন সংশোধন করা চলবে না। এই দাবিতে বিজেপির বিরুদ্ধে উত্তর পূর্বাঞ্চলের সব রাজনৈতিক দল ও সংগঠন।
বিভিন্ন অসমিয়া সংগঠনের ডাকে মঙ্গলবার ১১ ঘণ্টার উত্তর পূর্বাঞ্চল বনধ পালিত হয়। বাকি রাজ্য গুলিতে তেমন প্রভাব না পড়লেও আসাম অচল হয়ে পড়ে।
বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষের চেহারা নেয় বনধ। হিংসাত্মক আন্দোলন থামাতে লাঠিপেটা করেন নিরাপত্তারক্ষীরা। পোড়ানো হয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের কুশপুতুল।
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল প্রত্যাহার করা না হলে আন্দোলন তীব্রতর হবে বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, আসামের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্লকুমার মহন্ত। তাঁর অভিযোগ, ‘এর জন্য দায়ী একমাত্র বিজেপি। আসাম কিছুতেই আর বিদেশিদের জন্য দরজা খুলে দেওয়া বরদাশত করবে না। এটা বোঝা উচিত দিল্লির।’
অন্যদিকে, বনধ সর্বাত্মক দাবি করে কৃষক মুক্তিসংগ্রাম সমিতির নেতা অখিল গগৈয়ের হুমকি, ‘আন্দোলন চলবে। প্রয়োজনে আসাম ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার জন্য রক্ত দেবে। কিন্তু নাগরিকত্ব বিল মানা হবে না’।

আসাম প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি রিপুন বরা আসামকে অশান্ত করার জন্য বিজেপিকেই দায়ী করেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘জাতপাতের রাজনীতি করতে গিয়ে আসামের সর্বনাশ করছে বিজেপি’।
তবে বিজেপি এই অভিযোগ মানতে নারাজ। দলের রাজ্য সভাপতি রঞ্জিত দাস সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, আসামের ভালোর জন্যই বিজেপি সরকার বিলটি পাশ করাতে চাইছে। রাজ্যের এই অশান্ত পরিবেশের জন্য কংগ্রেসের ‘মুসলমান তোষণ নীতি’কে দায়ী করেন তিনি।
ত্রিপুরার আঞ্চলিক দল আইএনপিটির ছাত্র সংগঠন ট্রাইবাল স্টুডেন্ট ফেডারেশনের ডাকে এদিন রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় সড়ক অবরোধ করা হয়। পশ্চিম ত্রিপুরার দশরাম বাড়ি এলাকায় পুলিশ ও অবরোধকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন জখম হন। ৬ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আইএনপিটির নেতা জগদীশ দেববর্মা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, ‘পুলিশ বিনা প্ররোচনায় গুলি চালিয়েছে। গুলিতে বেশ কয়েকজন জখম হয়েছেন।’
অন্যদিকে, পুলিশের তরফে গুলি চালনার অভিযোগ অস্বীকার করা হয়। উল্টে অভিযোগ, আন্দোলনকারীরাই গুলতি, ইট প্রভৃতি নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। পেট্রল বোমাও ফাটানো হয় বলে ত্রিপুরা পুলিশের অনুমান।