ঘরে ঘরে যাচ্ছে মোদির চিঠি

নরেন্দ্র মোদি
নরেন্দ্র মোদি

মাত্র কদিন আগেই সরকারি খরচে রাজনৈতিক প্রচারের অভিযোগ আনা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে। এবার আরও একবার সেই অভিযোগ জোরালোভাবে উঠল। উঠল কারণ, কোটি কোটি ভারতবাসীর প্রতিটি ঘরে প্রধানমন্ত্রী তাঁর লেখা চিঠি পৌঁছে দেওয়ার কর্মসূচি নিয়েছেন। সেই চিঠিতে তুলে ধরা হচ্ছে সরকারের বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্পের ফিরিস্তি, যেগুলোর অন্যতম ‘আয়ুষ্মান ভারত’।

মোদি সরকারের দাবি, আয়ুষ্মান ভারত পৃথিবীর বৃহত্তম সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য প্রকল্প। এই প্রকল্পের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষেই লেখা এই চিঠি। ইতিমধ্যেই সাড়ে ৭ কোটি চিঠি ছাপিয়েছে ভারত সরকার। দুই পৃষ্ঠার সেই চিঠির খামের ওপর লেখা, ‘প্রধানমন্ত্রী জন-আরোগ্য যোজনা’। চিঠিতে রয়েছে সহাস্য প্রধানমন্ত্রীর ছবি এবং অবশ্যই অন্যান্য জনমুখী সরকারি প্রকল্পের কথা। যেমন: ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’, ‘প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনা’, ‘সৌভাগ্য যোজনা’, ‘জীবন জ্যোতি বিমা যোজনা’।

বিজেপি প্রচার বিভাগের এক সূত্রের দাবি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দ্বিতীয়বার সরকার গঠনের দাবি জানাচ্ছেন তাঁর কাজের নিরিখে, ইতিবাচক প্রচারের মাধ্যমে, কোনো নেতিবাচক মনোভাবে ভর দিয়ে নয়।

ইংরেজি ও হিন্দি ছাড়াও চিঠিটি অনূদিত হয়েছে বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায়। মাত্র কদিন আগেই এর প্রতিবাদ জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্প থেকে পশ্চিমবঙ্গকে আলাদা রাখার কথা ঘোষণা করেন। তাঁর অভিযোগ ছিল, রাজ্য সরকারের অবদান উপেক্ষা করে প্রধানমন্ত্রী মোদি ভোটের আগে স্রেফ নিজের বন্দনা করে চলেছেন।

সরব অন্য বিরোধীরাও। সিপিএম সাংসদ এম ভি রাজেশ সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, সরকারি খরচে এটা শাসক দলের নেতার আত্মপ্রচার ছাড়া আর কিছু নয়। বিপুল ‘অপচয়ের’ উল্লেখও তিনি করেছেন। বলেছেন, খামসহ সাড়ে সাত কোটি রঙিন চিঠি ছাপানোর খরচ অনুমান করা যেতেই পারে। চিঠিগুলো পাঠানো হচ্ছে স্পিড পোস্ট মারফত। খরচ চিঠিপ্রতি ৪০ টাকা। চিঠি ছাপানো ও পাঠানো মারফত তা হলে কত কোটি টাকা খরচ হচ্ছে, সহজ হিসাব। অথচ ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্পে বরাদ্দ ২ হাজার কোটি টাকা!

প্রধানমন্ত্রী মোদির চিঠি লেখার বিষয়টি প্রচারমাধ্যমে বড় করে উঠে এল প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর আনুষ্ঠানিকভাবে কংগ্রেসের রাজনীতিতে প্রবেশের পরপরই। সেই চিঠিতে নরেন্দ্র মোদির ‘সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়ে ওঠার’ কাহিনিও থাকছে। কোন অবস্থা থেকে কোন অবস্থায় তাঁর উত্তরণ ঘটেছে, সেই ব্যক্তিগত কাহিনিও শুনিয়েছেন মোদি। লিখেছেন, ‘দারিদ্র্যকে আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। দারিদ্র্য থেকে মুক্তির উপায় একটাই, দরিদ্রদের শক্তিশালী করে তোলা। দেশের মানুষ যেদিন থেকে আমায় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করেছেন, সেদিন থেকেই আমার লক্ষ্য দরিদ্র মানুষ, সাধারণ মানুষ ও নারীদের শক্তিশালী করে তোলা। দরিদ্রদের জন্য গৃহনির্মাণ, যুব সম্প্রদায়কে আর্থিক দিক থেকে স্বাবলম্বী করে তোলা, শিক্ষার বিকাশ, স্বাস্থ্যসহ সব জনমুখী প্রকল্প সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে চলেছি।’

‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্পের প্রধান কর্তা ইন্দু ভূষণ অবশ্য বিরোধীদের অভিযোগে আমল দেননি। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, চিঠি লেখার খরচ প্রকল্পের টাকা থেকে নেওয়া হয়নি। ওটা প্রশাসনিক খরচ।