ব্রেক্সিট অচলাবস্থার সমাধান যাচাই মঙ্গলবার

ব্রেক্সিট
ব্রেক্সিট

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে বিচ্ছেদ কার্যকর করতে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র সম্পাদিত চুক্তি প্রত্যাখ্যান করে দেন যুক্তরাজ্যের আইনপ্রণেতারা। কিন্তু নানা ভাগে বিভক্ত ব্রিটিশ সংসদে কেমন চুক্তি সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন পাবে, সেটিও স্পষ্ট নয়। ব্রেক্সিট নিয়ে এমন অচলাবস্থার সমাধান খুঁজতে যুক্তরাজ্যের সংসদে মঙ্গলবার বিভিন্ন সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হবে।

মূলত মঙ্গলবারের ভোটাভুটি থেকে ব্রেক্সিটের পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে একটি দিক নির্দেশনা পাবেন প্রধানমন্ত্রী মে। এর ফলে তিনি চুক্তির সুনির্দিষ্ট সংশোধন চেয়ে ইইউ’র কাছে যেতে পারবেন। এতে পুনঃ সমঝোতার জন্য প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানও শক্তিশালী হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের ১১৮ জন আইনপ্রণেতাসহ সরকারের শরিক দল ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টি (ডিইউপি) চুক্তির বিপক্ষে ভোট দিয়েছিল। এসব ভোট বিপক্ষে পড়ার কারণেই মূলত চুক্তিটি পাস হয়নি।

বিরোধিতাকারী এসব আইনপ্রণেতাদের অন্যতম কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন সোমবার বলেন, আয়ারল্যান্ড সীমান্ত নিয়ে চুক্তিতে উল্লেখিত ‘ব্যাকস্টপ’ ধারাটির গ্রহণযোগ্য পরিবর্তন করলেই তাঁরা খুশি।

‘ব্যাকস্টপ’ হলো, বিচ্ছেদের পর ইইউ সদস্যভুক্ত স্বাধীন আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের অংশ নর্দান আয়ারল্যান্ডের সীমান্ত উন্মুক্ত রাখার নিশ্চয়তা। এর ফলে নর্দান আয়ারল্যান্ডকে ইইউ আইনের অধীনে থাকতে হবে। এই ধারার বিরোধীরা বলছেন, এতে আইনগতভাবে নর্দান আয়ারল্যান্ড যুক্তরাজ্যের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।

বরিস জনসন বলছেন, সীমান্তে অবাধ চলাচল বজায় রাখার নিশ্চয়তা দিয়ে একটি ‘ফ্রিডম ক্লস’ যুক্ত করার মাধ্যমে এর সমাধান করা যেতে পারে। অথবা ‘ব্যাকস্টপ’ ব্যবস্থার একটি সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দিলেও বিষয়টি মানা যাবে।

কনজারভেটিভ দলের পেছন সারির এমপিদের সংঘ ‘১৯২২ কমিটি’র প্রধান গ্রাহাম ব্রাডিও ‘ব্যাকস্টপ’-এর বদলে বিকল্প ব্যবস্থা চেয়েছেন। এ নিয়ে আনা সংশোধনী প্রস্তাব সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন আদায়ে সক্ষম হবে বলে আশা তাঁর। সরকারের শরিক দল ডিইউপিও এই ‘ব্যাকস্টপ’ ধারার অবসান চাইছে।

তবে স্বাধীন আয়ারল্যান্ডের উপপ্রধানমন্ত্রী সায়মন কোভেনি বলেছেন, তারা ‘ব্যাকস্টপ’ ব্যবস্থার পরিবর্তন মেনে নেবেন না। এর ফলে আয়ারল্যান্ড সীমান্তে সীমানা প্রাচীর এবং তল্লাশি চৌকি ফিরে আসার ঝুঁকি তৈরি হবে।

যুক্তরাজ্য এবং ইইউ কেউ চায় না আয়ারল্যান্ড সীমান্তে তল্লাশি চৌকি বসার মতো পরিস্থিতি হোক। এতে ওই অঞ্চলে পুনরায় অশান্তি ফিরে আসবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিরোধী লেবার দলের এমপি ইভেট কোপার ও ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের নিক বোলস বিচ্ছেদের সময়সীমা পিছিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন। ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ২৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সরকার চুক্তি পাসে ব্যর্থ হলে যেন বিচ্ছেদের সময়সীমা অন্তত ৯ মাস পিছিয়ে দেওয়া হয়। চুক্তি হোক বা না হোক, আগামী ২৯ মার্চ রাত ১১টায় ব্রেক্সিট কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।

এ ছাড়া লেবার দলের আরেক এমপি হিলারি বেন চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদের সম্ভাবনা বাতিল করা, পুনরায় গণভোট এবং ব্রেক্সিটের সিদ্ধান্ত বাতিল করাসহ চারটি ভিন্ন ভিন্ন প্রস্তাব এনেছেন। তিনি বলছেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ আইনপ্রণেতার চাওয়া কি—সেটি স্পষ্ট করতে এসব বিকল্প নিয়ে ভোটাভুটি জরুরি। অবশ্য শেষ পর্যন্ত কোন কোন প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি হবে, তা নির্ভর করছে স্পিকারের সিদ্ধান্তের ওপর।