ওআরওপি=অনলি রাহুল অনলি প্রিয়াঙ্কা, কটাক্ষ অমিত শাহর

প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ও রাহুল গান্ধী। ছবি: সংগৃহীত
প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ও রাহুল গান্ধী। ছবি: সংগৃহীত

কংগ্রেস সভাপতি রাহুল ও উত্তর প্রদেশ পূর্বের নবনিযুক্ত সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে ‘ওয়ান র‌্যাংক ওয়ান পেনশন’ বলে কটাক্ষ করলেন বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ। সোমবার হিমাচল প্রদেশের উনায় দলের এক সভায় কংগ্রেসকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, দলের প্রধান হিসেবে রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকেই শুধু সামনে চায় কংগ্রেস।

ভারতের জাতীয় রাজনীতিতে তোলপাড় করে দিয়েছিল ওআরওপি শব্দটি। ‘ওয়ান র‍্যাংক ওয়ান পেনশন’-এর দাবিতে সরব হয়েছিলেন সাবেক সেনাসদস্যদের অনেকেই। কয়েক দশক ধরে চর্চার পর অবশেষে সাবেক সেনাদের জন্য এই বিষয়টি চালু হয়েছে। এর অর্থ এখন একই পদের জন্য একই পেনশন পান সেনাসদস্যরা। সেই পদে কে কত দিন কাজ করছেন সেটা বিবেচ্য হবে না। আর এবার ওআরওপি শব্দকে অন্য কারণে ব্যবহার করলেন অমিত শাহ। এই অর্থ ব্যাখ্যা করে রাহুল-প্রিয়াঙ্কাকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘ওনলি রাহুল ওনলি প্রিয়াঙ্কা’!

হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, অমিত শাহ বলেন, বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পরই কথা রাখা হয়েছে। সেনাসদস্যদের ‘ওয়ান র‌্যাংক ওয়ান পেনশন’-এর দাবি পূরণ করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কংগ্রেসের ‘ওয়ান র‌্যাংক ওয়ান পেনশন’ বোধ হয় শুধু রাহুল ও প্রিয়াঙ্কার জন্যই।

হিমাচল প্রদেশে কংগ্রেসের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জয়রাম ঠাকুরকে কটাক্ষ করে অমিত শাহ বলেন, ‘সরকার যেন ওদের নিজেদেরই। কংগ্রেস শাসনে ওটা তো রয়্যাল পরিবারের মতো হয়ে গিয়েছিল। কংগ্রেস ৫৫ বছর ধরে দেশ চালিয়েছে। কিন্তু আমাদের সরকার ৪ বছরেই দারিদ্র্য কমিয়েছে। তাহলে চার দশক ধরে কংগ্রেস কী করেছে? যদি এই দেবভূমি মোদিকে আরও ৫ বছর সময় দেয়, শুধু এই রাজ্য থেকে নয়, গোটা দেশ থেকেই দারিদ্র্য সরে যাবে।’

রাজীব-সোনিয়া গান্ধীর মেয়ে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী সক্রিয় রাজনীতিতে নামছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁকে দলের উত্তর প্রদেশের পূর্বাঞ্চলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। বিদেশ থেকে ফিরে ফেব্রুয়ারির গোড়াতেই দলের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন প্রিয়াঙ্কা। কিন্তু প্রিয়াঙ্কার রাজনীতিতে আসার ব্যাপারটি ঠিক যেন মানতে পারছেন না বিজেপির নেতারা। এর আগে বিজেপির বেশ কয়েকজন নেতা বিরূপ মন্তব্যে করেন। এতে শামিল হয়েছেন বলিউড অভিনেতা পরেশ রাওয়ালও। পরেশ রাওয়াল টুইটে লেখেন, ‘ওরা (কংগ্রেস) বলছে আমরা এত দিনে “ট্রাম্পকার্ড” খেললাম। আমি ওদের কাছে জানতে চাই এত দিন তাহলে “জোকার” নিয়ে কেন খেলছিলেন?’ এই টুইটে প্রিয়াঙ্কার পাশাপাশি কংগ্রেসের সভাপতি রাহুল গান্ধীকেও কটাক্ষ করলেন বিজেপির সাংসদ পরেশ রাওয়াল।

লোকসভা ভোটের আগে প্রিয়াঙ্কাকে রাজনীতির মাঠে নামানোর কংগ্রেসের সিদ্ধান্তকে ব্যঙ্গ করে বিজেপির মুখপাত্র সংবিৎ পাত্র বলেছিলেন, ‘কংগ্রেস হচ্ছে পরিবার পার্টি। রাহুল গান্ধী আসলে যে ফেল, এটা স্বীকার করে নেওয়ার জন্য কংগ্রেসকে অভিনন্দন।’

সম্প্রতি পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে ছত্তিশগড়, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশে জয় পেয়েছে কংগ্রেস। বড় বাধা পেয়েছে নরেন্দ্র মোদির ‘কংগ্রেসমুক্ত ভারত’ গড়ার স্বপ্ন। এই সাফল্যের অন্যতম কারিগর রাহুল।

ভোটের সময় কংগ্রেসের রাজনীতিতে অল্পবিস্তর জড়িত থাকলেও সম্প্রতি প্রিয়াঙ্কা আনুষ্ঠানিকভাবে দলের সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত হয়েছেন। তাঁকে দেওয়া হয়েছে উত্তর প্রদেশের পূর্বাঞ্চলের পূর্ণ দায়িত্ব। রাজ্যের ৮০টি লোকসভার আসনের মধ্যে প্রিয়াঙ্কার দায়িত্বে পড়ছে পূর্বাঞ্চলের ৪২টি কেন্দ্র। এই অঞ্চলেই পড়ছে রাহুলের আমেথি, সোনিয়া গান্ধীর রায়বেরিলি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বারানসি এবং রাজ্যের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের গোরক্ষপুর। উত্তর প্রদেশের বাকি অঞ্চলের দায়িত্বে আনা হয়েছে মধ্যপ্রদেশের যুবনেতা সাংসদ জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াকে।

উত্তর প্রদেশে কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে সমাজবাদী পার্টি (এসপি) ও বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) জোট গঠনের পর তিন দিন আগে প্রিয়াঙ্কার নতুন দায়িত্বের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হয়। এই ঘোষণা দেশের রাজনীতিকে চনমনে করে তুলেছে। নানা মহলে শুরু হয়েছে নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণ নিয়ে জল্পনা। কংগ্রেসও উজ্জীবিত। বিভিন্ন রাজ্যে কংগ্রেস নেতৃত্ব নতুন কর্মসূচি নিতে শুরু করেছে। সংবাদ সংস্থার খবর অনুযায়ী, উত্তর প্রদেশের সর্বত্র কংগ্রেসিদের মধ্যে নতুন আশাও সঞ্চারিত হয়েছে। লক্ষ্ণৌয়ে কংগ্রেস সদর দপ্তরে সাজসাজ রব। প্রিয়াঙ্কার জন্য নির্দিষ্ট করা হচ্ছে একটি কক্ষ।

প্রিয়াঙ্কা এর আগে আমেথি ও রায়বেরিলিতে ভোটের সময় প্রচারণা চালিয়েছেন। কিন্তু পরিবারের ‘খাসতালুক’ বলে পরিচিত এই দুই কেন্দ্রের বাইরে তিনি কখনো কোনো দায়িত্ব নেননি। রাহুল গান্ধী ওডিশায় বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত মোটেই তড়িঘড়ি নেওয়া নয়। অনেক দিন থেকেই বিষয়টি পরিবারে আলোচিত হচ্ছিল। কিন্তু সন্তানদের কারণে পুরোদমে রাজনীতিতে আসা তাঁর পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। সেই বাধা এখন নেই। তারা (সন্তান) বড় হয়ে গেছে।

কংগ্রেসে সাংগঠনিক দায়িত্ব নিলেও লোকসভার আসন্ন নির্বাচনে প্রিয়াঙ্কা প্রার্থী হচ্ছেন কি না, বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়। স্বাস্থ্যের কারণে রায়বেরিলি থেকে সোনিয়া এবার আর ভোটে দাঁড়াবেন না, এমন একটা প্রচার কংগ্রেসে রয়েছে। সেই জায়গায় প্রিয়াঙ্কা আসবেন কি না, সেই প্রশ্ন রাহুলকে করা হয়েছিল। তিনি বলেছেন, সেটা পুরোপুরি প্রিয়াঙ্কার ওপর নির্ভর করছে।